ভোলায় যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের লাশ

জাতীয় বিশেষ সংবাদ লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে তা কার্যকর করা হয়। কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগার স্থাপনের পর এটিই প্রথম ফাঁসি।

কারা সূত্র জানায়, আবদুল মাজেদের লাশ ভোলায় তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। তার লাশ নেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে উপস্থিত হন তার স্ত্রী ডা. সালেহা বেগম, চাচা শ্বশুর আলী আক্কাস, শ্যালক শহিদুজ্জামান সরকার, ভাতিজা আবদুস সালাম, ভাতিজির স্ত্রী সোনিয়া। লাশের সঙ্গে ভোলায় যাবে শ্যালক শহিদুজ্জামান সরকার ও ভাতিজা-আবদুস সালাম।

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বাটামারা গ্রামের মরহুম আলী মিয়া চৌধুরীর ছেলে ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, আবদুল মাজেদের পরিবার বর্তমানে ঢাকা সেনানিবাসের ক্যান্টনমেন্ট আবাসিক এলাকায় বসবাস করছেন। আবদুল মাজেদ ৪ কন্যা সন্তান ও এক পুত্র সন্তানের জনক।

ভোলায় লাশ দাফনে আপত্তি

বোরহানউদ্দিন উপজেলা ছাত্রলীগ জানিয়েছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের হত্যাকারী খুনি বরখাস্তকৃত ক্যাপ্টেন মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর লাশ তার গ্রামের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিনে দাফন করতে দেবে না।

শনিবার দুপুরে বোরহানউদ্দিন উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম ও সাধারন সম্পাদক মুজিব উল্যাহ পলাশ বিশ্বাসের যৌথ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় তারা।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনকের আত্মস্বীকৃত খুনি মাজেদের লাশ বোরহানউদ্দিনের প্রবেশ করে তাহলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বোরহানউদ্দিন শাখার নেতাকর্মীরা তা প্রতিহত করবে।

যেভাবে কার্যকর হয় মাজেদের ফাঁসি

এর আগে জল্লাদ শাহজাহানের নেতৃত্বে একটি দল কনডেম সেলে প্রবেশ করে মাজেদের হাত বেঁধে যম টুপি পরিয়ে দেন। তার আগে তওবা পড়ান কারাগারে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম। রাত ১১টার দিকে তাকে তওবা পড়ানো হয়। এ সময় মাজেদ কান্নাকাটি করেন।

কারা সূত্র জানায়, দণ্ড কার্যকরের সময় তাকে কয়েক মিনিট ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরে সিভিল সার্জন তার হাত-পায়ের রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় কারাগারে উপস্থিত হন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা। এছাড়াও অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. আবরার হোসেন, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ঢাকার সিভিল সার্জন আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান কারাগারে প্রবেশ করেন।

দণ্ড কার্যকরের সময় উপস্থিত ছিলেন আইজি (প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা, এডিশনাল আইজি (প্রিজন) কর্নেল আবরার হোসেন, ডিআইজি (প্রিজন) তৌহিদুল ইসলাম, সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির চৌধুরী, জেলার মো. মাহবুবুল ইসলাম, ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান, পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সরদার, সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসাইন মো. মাইনুল আহসান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট আবদুল আওয়াল, কারা সহকারী সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান শুভ, ডা. খেরশেদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ঢাকা জেলা দক্ষিণ) রামানন্দ সরকার, কারা ইমাম মুফতি ফয়জুল্লাহ প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, প্রায় দু’দশক ধরে পলাতক আবদুল মাজেদকে গত সোমবার মধ্যরাতে মিরপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে মাজেদকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। পরদিন বুধবার মৃত্যুর পরোয়ানা পড়ে শোনানোর পর সব দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চায় আবদুল মাজেদ।

গত বুধবার রাতে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পরিবারের ৫ সদস্য সাক্ষাৎ করেন। কারা কর্তৃপক্ষের আহ্বানে মাজেদের স্ত্রী, শ্যালক ও চাচা শ্বশুরসহ ৫ সদস্য দেখা করেন। সূত্র: যুগান্তর।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *