গোপালগঞ্জে ফল-দুধ-হরলিক্স নিয়ে নবজাতক পরিবারে ছুটছেন ইউএনও

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মাহামুদপুর ইউনিয়নের গোয়াল গ্রামের প্রসূতি নাজমীন বেগম। সদ্য মা হয়েছেন তিনি। জন্ম নেয়া মেয়ের বয়স মাত্র ১৩ দিন। মা হওয়ায় একরাশ তৃপ্তি আর আনন্দ তার মনে। কখনো নবজাতকের পাশে, কখনো বা কোলে তুলে নিয়ে মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করছেন তিনি।

স্বামী ইমরান শেখ পেশায় কৃষক। তাদের সংসারে রয়েছে আরো একটি সন্তান। বলা যায় সুখী পরিবার। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ঘরবন্দী থাকায় একদিকে যেমন স্বামী নেই রোজগার, অন্যদিকে দোকান বন্ধ থাকায় পুষ্টিকর ফল আর শিশুর জন্য দুধ কিনতে পারছিলেন না। সেই কষ্ট যেন কিছুটা হলে তার সুখ, তৃপ্তি আর আনন্দকে বাধা দিচ্ছিল।

ঠিক সেই সময়ই প্রসূতি নাজমীন বেগমের বাড়িতে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আলু, হরলিক্স, দুধ, তরমুজ আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে হাজির হন কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাব্বির আহমেদ।

এসব খাদ্যসামগ্রী পেয়ে একরাশ কষ্ট যেন বুক থেকে মেনে গেলে প্রসূতি নাজমীন বেগমের। খাদ্য নিয়ে প্রসূতির বাড়িতে হঠাৎ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) উপস্থিতিতে হতবাক হয়েছেন ওই গ্রামের সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, গত ৮ মার্চ ও তৎপরবর্তী তারিখে যে সকল শিশু জন্মগ্রহণ করেছে সেসকল শিশুর মায়েদের জন্য ‘সুহৃদ’ এর সহযোগিতায় খাদ্যসামগ্রী চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আলু এবং উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে মায়ের জন্য হরলিক্স, দুধ তরমুজ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার উপহার হিসেবে পৌঁছে দেয়ার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

গত দুই দিনে কাশিয়ানী উপজেলার সাজাইল, পারুলিয়া, কাশিয়ানী সদর, মহেশপুর, মাহামুদপুর, ওড়াকান্দি ও বেথুড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ৭০টি নবজাতক পরিবারের কাছে এসব খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাব্বির আহমেদ। খাদ্য সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নেন তিনি।

এ সময় মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফুন নাহার আশা মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক পরামর্শ প্রদান করেন। এসব খাদ্য সহায়তা বিতরণকালে কাশিয়ানী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো: জহিরুল ইসলাম, সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো: মশিউর রহমান খান, ওড়াকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মো: বদরুল আলম বিটুল উপিস্থিত ছিলেন।

প্রসূতি নাজমীন বেগম বলেন, আমার স্বামী একজন কৃষক। কিন্তু করোনার কারণে লকডাউন থাকায় স্বামীর কোন কাজ ছিল না। এরই মাঝে আমাদের ঘরে আসে কন্যাসন্তান। স্বামীর রোজগার বন্ধ হয়ে পারায় আর দোকান বন্ধ থাকায় পুষ্টিকর ফল আর শিশুর জন্য দুধ কিনতে পারছিলাম না। কিন্তু স্যার আমাদের বাড়িতে এসে ফল, দুধসহ বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ দিয়ে গেলেন।

মাঝিগাতি গ্রামের শিশু সামিয়ার মা কাকলী বেগম বলেন, ঘরবন্দী থাকায় অনেক কষ্টে দিন কাটছিল। বাচ্চার জন্য অনেক চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু স্যার আমাদের বাড়িতে এসে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী দিয়ে গেছে। এ জন্য ধন্যবাদ জানাই।

পরিবার-পরিকল্পনা পরিদর্শক রণজিৎ সরকার রনো বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ স্যারের নির্দেশে আমরা নবজাতকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুধ, ফল, হরলিক্সসহ খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি। স্যার নিজেও উপস্থিত থেকে তা তদারকি করছেন।

কাশিয়ানী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: মশিউর রহমান খান বলেন, করোনারোধ সবাইকে ঘরে থাকার জন্য বলা হয়েছে। সরকারের সেই সিদ্ধান্তে সকালেই ঘরে রয়েছেন। তবে গবীর ও দিন মজুরদের কোন কাজ না থাকায় অনেক কষ্টে রয়েছেন তারা। বিশেষ করে এই সময়ের যাদের ঘরে নতজাতক এসেছে সেই পরিবার সবচেয়ে বেশি চিন্তায় রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সাব্বির আহেমদ ফল, দুধসহ খাদ্যসামগ্রী নবজাতকদের পরিবারের মধ্যে বিতরণ করছেন, তা প্রসংশার দাবিদার।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ বলেন, এটা কোন ত্রাণ নয়, করোনার মহামারীর কথা ভেবে নবজাতক ও প্রসূতি মায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র পুষ্টি সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, এ বছর ৮ মার্চের পরে যে শিশুর জন্ম হবে, তাদের বাড়িতে এ জাতীয় খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে। দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ সহায়তা চলবে।

সদ্য নবজাতক শিশুর (৮ মার্চ ও তৎপরবর্তী তারিখে জন্মগ্রহণকৃত) পরিবারের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে সরাসরি যোগগাযোগ করতে অনুরোধ করেছেন তিনি। সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *