দেশে করোনা শনাক্তের ৫৪ দিনের পরিস্থিতি

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস যখন বিশ্বনেতাদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে তখন বাংলাদেশেও আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এ অদৃশ্য শত্রু। গত ৮ মার্চ আইইডিসিআর এর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বাংলাদেশে প্রথম করোনভাইরাস শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এরপর আজ পেরিয়ে গেছে ১ মাস ২৪ দিন। দিনের হিসেবে ৫৪ দিন। আর এ সময়ের মধ্যে দেশে আট হাজার ২৩৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হলো। মারা গেছেন ১৭০ জন। কিন্তু এর বিপরীতে সুস্থ হয়েছেন মাত্র ১৭৪ জন।

দেশে প্রথম যে তিন জন ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতির কথা জানা যায় তারা একই পরিবারের সদস্য ছিলেন এবং এর মধ্যে দুইজন ইতালি থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন।

করোনার মহামারি ঠেকাতে দেশের সব স্কুল-কলেজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আপাতত কোনো স্কুল-কলেজ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে না।

সম্প্রতি গণভবন থেকে রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর বিস্তার কমলে তখনই সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা ভাববে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্কুল এখন আমরা খুলব না। স্কুল কেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটাও খুলব না। সেটা আমরা কখন খুলব? অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই স্কুল কলেজ সবই বন্ধ থাকবে, যদি না করোনাভাইরাস তখনও অব্যাহত থাকে। যখন এটা থামবে আমরা তখনই খুলব। বেশি সমাগম যেন না হয়।’

দেশে পঞ্চম দফায় ৫ মে পর্যন্ত ছুটি চলছে। তবে, সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন চলমান পরিস্থিতি এ ছুটি আরো বাড়ানো হতে পারে।

রোববার (২৬ এপ্রিল) দেশের বেশ কিছু পোশাক কারখানা চালু করা হয়েছে। তবে নতুন করে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর পক্ষ থেকে এখনই গ্রাম থেকে শ্রমিকদের না আসার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া করোনা পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটলেই তাদের কাজে যোগ দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। যেসব শ্রমিক গ্রামে রয়েছেন তাদের বেতন পৌঁছে দেয়া হবে বলেও জানিয়েছে সংগঠনগুলো।

মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল একই ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, এই মুহূর্তে গ্রামের শ্রমিকদের ঢাকায় ঢুকতে দেয়া হবে না।

দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতি করোনা পরীক্ষা বাড়ানোর কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে দিনকে দিন করোনা শনাক্তের সময় বাড়ছেই। শুরুর দিকে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইডিসিআর) পক্ষ থেকে নমুনা সংগ্রহের পর ২৪ ঘণ্টায় ফলাফল দেয়া হলেও এখন তা দিতে সময় লাগছে ৩-৪ দিন।

এ পরিস্থিতিতে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে ৫ লাখ কিট সংগ্রহ করার পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

আগে ২৪ ঘণ্টায় করোনার পরীক্ষার ফলাফল দিতে পারলেও এখন ৩-৪ দিন লাগছে উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইডিসিআর) পরিচালক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমরা আগে নমুনা সংগ্রহের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল দিতাম। কিন্তু বর্তমানে আমাদের কাছে অনেক স্যাম্পল জমা হয়ে গেছে। সে কারণে আমাদের কিছু সময় বেশি লাগছে। তার ওপরে এখন যেহেতু রোজার দিন, মাঝখানে আমাদের একটু ব্রেক নিতে হয়। অনেক স্যাম্পল জমে আছে। তাই এখন আমাদের তিন থেকে চারদিন সময় লেগে যাচ্ছে।

এক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ, আমাদের যেহেতু সময় একটু বেশি লাগছে, তাই যারা নমুনা দিচ্ছেন তাদের অবশ্যই কোয়ারেন্টিন ম্যান্টেইন করতে হবে। তাছাড়া লক্ষণ, উপসর্গ না থাকা পর্যন্ত করোনা পরীক্ষা করলেও কিছু পাওয়া যায় না। তাই পরামর্শ হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে যেসব লক্ষণ, উপসর্গের কথা বলা হচ্ছে তা না দেখা দেয়া পর্যন্ত কোভিড- ১৯ পরীক্ষা করা উচিত না। কেউ যদি কোনো করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসেন, তাহলে তার ১৪ দিন পর্যন্ত কোয়ারিন্টে থাকতে হবে। আমরা সব সময় বলেছি যাদের লক্ষণ, উপসর্গ নেই তাদের পরীক্ষাটি না করতে।

যাদের লক্ষণ-উপসর্গ নেই তাদের পরীক্ষা করা উচিত নয় উল্লেখ করে ফ্লোরা বলেন, আমাদের বেশি সময় লাগার অন্যতম একটা কারণ, দেখা যায় অনেকে লক্ষণ, উপসর্গ নেই তারপরেও নমুনা নিতে বলছে। কিন্তু যারা প্রকৃতপক্ষে আক্রান্ত তাদের ছাড়া অন্যদের পরীক্ষা করলে নেগেটিভ আসবে। এতে পরবর্তীতে আরো সমস্যা হতে পারে। কারণ নেগেটিভ ফল আসার পর তার ১৪ দিনের মাঝে আবার করোনা পজিটিভ হতে পারে।

কিন্তু সে সময় এই বোধটা রোগীর মাঝে কাজ না করার ফলে তিনি অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়ান এবং অন্যদের সংক্রামিত করেন। সে জন্য আমরা সব সময় পরামর্শ দেই যে, লক্ষণ-উপসর্গ না থাকলে রোগীর সংস্পর্শে আসলেও অন্তত একসপ্তাহ তিনি কোয়ারেন্টিন মেইন্টেন করবেন এবং তাৎক্ষণাৎ নমুনা পরীক্ষার করার দরকার নেই।

এদিকে করোনা সংক্রমণ পরীক্ষায় দেশে পরীক্ষাগারের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে যুক্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

শুক্রবার রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকায় নিজের সরকারি বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, চার মাস আগে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস ক্রমে গোটা বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। চীন পরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দিয়ে উঠলেও এখন মারাত্মকভাবে ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সোয়া ৩৩ লাখ। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই লাখ ৩৪। তবে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ ৪৮ হাজারেরও বেশি রোগী ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *