মালামাল নিয়ে চলাচল শুরু করেছে পার্সেল ট্রেন

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: করোনার কারণে সাধারণ ছুটির মধ্যে পার্সেল ট্রেন চলাচলের প্রথমদিনেই কিছুটা হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। শুক্রবার তিনটি পার্সেল ট্রেন চালানোর কথা থাকলেও মালামাল না ঢাকায় একটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। বাকি দুটি ট্রেন ৬টি বগি নিয়ে চলাচল করেছে। কিন্তু এতে আশানুরূপ মালামাল হয়নি।

রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, মালামাল না হলে এসব ট্রেন চালানো ঠিক হবে না। তবে আশা করা হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা নিশ্চয়ই আগামী ২-৪ দিনের মধ্যে মালামাল পরিবহনে পার্সেল ট্রেনকে বেছে নেবে।

এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ ভূঁইয়া শুক্রবার রাতে বলেন, খুলনা রেলওয়ে স্টেশন থেকে শুক্রবার বিকাল পৌঁনে পাঁচটায় একটি পার্সেল ট্রেন ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, মালামাল না থাকায় ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। আমরা প্রচার-প্রচারণা করছি, ব্যবসায়ীরা আগ্রহ দেখালেই ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। তবে আগামী রোববার ট্রেনটি আমরা চালাব। ওই সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত মালামাল আসবে বলে আশা করছি। পশ্চিমাঞ্চলে আরও অন্তত ৬টি পার্সেল ট্রেন আমরা প্রস্তুত রেখেছি। ব্যবসায়ীদের সাড়া না পেলে এসব ট্রেন কী করে চালাব, এ প্রশ্নও রাখেন তিনি।

এদিকে ঢাকা রেলওয়ে বিভাগের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শওকত জামিল মোহসীন শুক্রবার রাতে বলেন, মালামাল না থাকায় খুলনা থেকে যে পার্সেল ট্রেনটি ঢাকায় আসার কথা ছিল তা বাতিল করা হয়েছে। তবে শুক্রবার সকাল দশটায় চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা পার্সেল ট্রেনটি সন্ধ্যা সাতটায় ঢাকা পৌঁছেছে। ৬ বগির ট্রেনটিতে দুটি বগিতে মালামাল ছিল। বাকি চারটি বগি প্রায় খালি ছিল। এছাড়া শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় দেওয়ানগঞ্জ থেকে আরেকটি পার্সেল ট্রেন ঢাকার উদ্দেশে ছেড়েছে। ট্রেনটি মধ্যরাতে ঢাকা স্টেশনে আসবে। রাত দশটায় কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে আরেকটি পার্সেল ট্রেন চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এ ট্রেনটিতেও পর্যাপ্ত মালামাল নেই। তবে আমরা আশা করছি, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ঢাকায় আসা কিংবা ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি পার্সেল ট্রেনেই পর্যাপ্ত মালামাল নিয়ে চলাচল করবে। এতে বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব আয় হবে।

রেলপথে মালামাল পরিবহন সব সময়ই সাশ্রয়ী ও নিরাপদ। দেশে যে কোনো দুর্যোগের সময় রেলপথ সচল ছিল। কিন্তু, করোনার এই সময়ে গত ২৫ মার্চ থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে মালবাহী ট্রেন চলাচল করছে। বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী, রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন শুক্রবার থেকে পার্সেল ট্রেন চালানোর নির্দেশ দেন। শুক্রবার থেকে কৃষকদের উৎপাদিত শাক সবজি, ধান চালসহ বিভিন্ন ফলমূল পরিবহন করার লক্ষে এই সার্ভিস চালু হয়।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, আমরা আশা করছি- নিশ্চয়ই আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এসব ট্রেনে পর্যাপ্ত মালামাল হবে। আমরা প্রচার-প্রচারণা করছি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তাদের মালামাল রেলপথে বহন করবেন। আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি। করোনার এই সময় যেন ব্যবসায়ীরা রেলপথ ব্যবহার করে তাদের মালামাল বহন করেন। আমরা চাই ব্যবসায়ীরা সাশ্রয়ী মূল্যে, নিরাপদে তাদের মালামাল রেলপথে বহন করুক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ে পরিবহনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সড়কপথে মালামাল বহনকারী যেসব সংগঠন রয়েছে, পরিবহন নেতারা রয়েছে, তারা নিশ্চয়ই চাচ্ছেন না রেলপথে মালামাল বহন করা হোক। রেলপথে মালামাল বহন যেমন সাশ্রয় তেমন নিরাপদ। বর্তমানে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় খুব অল্প সময়ে পার্সেল ট্রেনের মাধ্যমে মালামাল বহন করা যাচ্ছে। এই সুযোগটি ব্যবসায়ীরা কাজে লাগাবে বলে আমরা আশা করছি। এক একটি ট্রেনে প্রায় ৩০০থেকে ৩৫০ টন মালামাল পরিবহন করা যাবে।

তবে কোনো কোনো ব্যবসায়ীরা বলছেন, সড়কপথে ট্রাকে চাষী তার পণ্য সরাসরি মাঠ থেকে ঢাকার বাজারে নিতে পারেন। মাত্র দুই পর্যায়ে কাজ করলেই মাঠ থেকে মালামাল ট্রাকে করে সরাসরি ঢাকা পৌঁছানো যায়। কিন্তু রেলে পণ্যপরিবহনে চার স্তরের কাজ করতে হয় চাষীদের। প্রথমে মাঠ থেকে ট্রাকে পণ্য নিয়ে স্থানীয় স্টেশনে যেতে হবে। সেখান থেকে আবার ট্রেনে মালামাল নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে হবে। সেখান থেকে আবার ট্রাকে করে বাজারে নিতে হবে। এতে কৃষকের কষ্ট বেশি হওয়ায় আগে থেকেই রেলে পণ্যপরিবহনে মানুষের আগ্রহ কম। যেহেতু লকডাউনের সময় সড়কপথেও মালামাল সরবরাহ চালু আছে। সুতরাং রেলপথে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ মালামাল না পাওয়ার আশঙ্কা তাদের।

এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক শামছুজ্জামান বলেন, যাত্রীবাহী ট্রেনের মতো মালবাহী কিংবা পার্সেল ট্রেন চালানোর সুযোগ নেই। মালবাহী কিংবা পার্সেল ট্রেন কেবলমাত্র চাহিদা অনুযায়ী চালাতে হয়। মালামাল না হলে এসব ট্রেন চালানো যায় না। আমরা নিরাশ হচ্ছি না, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে নিশ্চয়ই এসব ট্রেনে যথাযথ মালামাল বহন করা যাবে। আমরা ব্যবসায়ীদের সু-স্বাগতম জানাচ্ছি। সড়কপথের চেয়েও অনেক কম মূল্যে রেলপথে মালামাল বহন করা যায়। করোনার এই সময় আমরা বিশেষ ছাড়ও দিচ্ছি। সূত্র: যুগান্তর।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *