১৪৮ কিমি গতিতে সাতক্ষীরায় ফের আম্ফানের তাণ্ডব

জাতীয় বিশেষ সংবাদ লীড

উপক‚লীয় জেলা সাতক্ষীরায় দ্বিতীয় আঘাত হেনে দাপট দেখিয়ে চলেছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। রাত ৮টার পর দ্বিতীয়বার ১৪৮ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হেনেছে সুন্দরবনঘেঁষা এ জেলায়। প্রবল বর্ষণে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে নয় গ্রাম। বুধবার (২০ মে) রাতে সাতক্ষীরা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা জুলফিকার আলী এ তথ্য জানান।

রাত ৮টার পর এ গতিতে আঘাত হানে আম্পান। রাত ১০টা পর্যন্ত ঝড়ের গতি একইরকমভাবে বিরাজ করছে। ঝড়ের আঘাতে সাতক্ষীরা সদর থানার কামালনগরে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ির। ভেঙেছে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি।

এদিকে আশাশুনি উপজেলার খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদীর নয় পয়েন্ট ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। খোলপেটুয়ার দয়ারঘাট ও হিজলা এবং প্রতাপনগরে কপোতাক্ষের কুড়িকাউনিয়া, দিঘলাইট, সুভদ্রকাঠি, খলিসখালী, চাকলা, বন্যতলাসহ মোট ৯ পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

প্রতাপনগরের চেয়ারম্যান জারিক হোসেন জানান, জেলা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে প্রতাপনগর।

এদিকে, আম্ফানের প্রভাবে সাতক্ষীরায় দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। দুপুরে ঝড়ো হাওয়া উঠতে থাকে। বিকেল ৪টায় প্রথম আঘাতের পর জোরালো দমকা হাওয়া বইছিল এবং নদনদীর পানি আছড়ে পড়ছিল বেড়িবাঁধের ওপর।

শ্যামনগর ও আশাশুনির বিভিন্ন ইউনিয়নের বিশেষ করে গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা ও শ্রীউলা ইউনিয়নে ৪৫টিরও বেশি পয়েন্টে বে‌ড়িবাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে ছিল। এরই মধ্যে শ্যামনগরের গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, প্রতাপনগর, খাজরা ও কালিগঞ্জের মথুরেশপুরে নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে।

বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ মন্ডল জানান, তার এলাকার দাতিনাখালি, ভামিয়া ও দুর্গাবাটির তিনটি পয়েন্টে খোলপেটুয়া নদীতে পানি বেড়ে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। নদী হয়ে উঠেছে উত্তাল। এসব নদী এখন ক্ষিপ্র রাক্ষুসীর রূপ নিয়েছে।

জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, ঝুঁকির মধ্যে থাকা ২ লাখ ৮৯ হাজার মানুষকে ১৮৪৫টি সাইক্লোন শেল্টার ও বিভিন্ন স্কুল কলেজের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে। একই সঙ্গে ২৯ হাজার গবাদি পশুর জীবন রক্ষায়ও এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে।

তিনি জানান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুর্গত মানুষকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। শিশুদের জন্য আলাদা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, প্রতিবন্ধী ও গর্ভবতী মায়েদের সেবায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গাবুরা ইউপি মেম্বার গোলাম মোস্তফা জানান, তার এলাকায় খোলপেটুয়া এবং কপোতাক্ষ নদীর পানি ওভার ফ্লো হয়েছে। সেখানে বাঁধ ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

সুন্দরবনের সীমান্ত নদী কালিন্দী ও মাদার নদীর পানি ফেঁপে বনে ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে উপক‚লীয় এলাকার শত শত চিংড়িঘের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঘেরের ছোট ছোট রিং বাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা দেখা দিয়েছে বলে চিংড়ি চাষিরা জানিয়েছেন।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *