সিনহা হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপসহ ৭ পুলিশ কারাগারে

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: সাবেক সেনা কর্মকর্তা (মেজর) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৭ পুলিশ সদস্যকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন কক্সবাজারের একটি আদালত।

বৃহস্পতিবার পুলিশের গাড়িতে করে কঠোর নিরাপত্তায় দুই দফায় তাদেরকে আদালতে তোলা হয়। বিকাল সোয়া ৪টায় প্রথমে মামলার প্রধান আসামি লিয়াকত আলীসহ ৬ জনকে আদালতে তোলা হয়। পরে কঠোর পুলিশি পাহারায় চট্টগ্রাম থেকে এনে বিকাল ৫টায় তোলা হয় নানা অপকর্মের হুতা ওসি প্রদীপকে। পরে আদালত দুই দফা শুনানি শেষে হত্যা মামলার ৭ আসামিকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

জেলহাজতে প্রেরণকৃত আসামিরা হলেন- মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি টেকনাফ বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া। মামলার বাকি দুই আসামি পলাতক রয়েছেন।

মামলায় বাদীপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রাখাল চন্দ্র মিত্র। আর আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ জাকারিয়া।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সাবেক মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় তার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে যে মামলাটি করেছেন ওই মামলায় এএসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোহাম্মদ মোস্তফার নাম দিলেও সে নামে ওই তদন্ত কেন্দ্রে পুলিশের কোনো সদস্য নেই বলে দাবি করে সূত্রটি।

এদিকে ওসি প্রদীপকে আদালতে হাজির করার সময় উপস্থিত উৎসুক জনতা নানা আপত্তিকর গালিগালাজ করেন। অনেকেই ‘খুনি প্রদীপের ফাঁসি চাই’ বলেও শ্লোগান দেন। পরে পুলিশ উপস্থিত লোকজনদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। মেজর সিনহা হত্যার আসামিদের আদালতে আনার খবরে অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন কক্সবাজার আদালত চত্বরে।

সূত্রমতে, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর সিনহা হত্যা মামলার দ্বিতীয় আসামি টেকনাফ থানার প্রত্যাহারকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার হাসপাতালে চিকিৎসার কথা বলে গাড়ি নিয়ে এলে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে নিয়ে দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় পুলিশ। বিকাল ৫টার দিকে তাকে তোলা হয় কক্সবাজারের টেকনাফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। পরে দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত আত্মসমর্পণকৃত সব আসামির জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এর আগে গেল বুধবার রাত ১০টায় টেকনাফ থানায় আদালতের নির্দেশে মেজর সিনহার বোনের করা হত্যা মামলাটি নথিভুক্ত হয়। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ টেকনাফের বিচারক তামান্না ফারহার আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া। পরে আদালত সেটি টেকনাফ থানাকে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া মামলার তদন্তভার দেয়া হয় কক্সবাজার র‌্যাব-১৫-এর অধিনায়ককে।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান (৩৬)। তার ওপর গুলি চালান বাহারছড়া ফাঁড়ির দায়িত্বরত পুলিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকত। নিহত সিনহা রাশেদকে ঢাকায় সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এই ঘটনায় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীসহ ২০ জনকে ক্লোজড (প্রত্যাহার) করা হয়েছে। বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়িতে পুরো নতুন টিম দেয়া হয়েছে।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *