ওসি প্রদীপ ছিলেন কারও কারও জন্য সোনার ডিমপাড়া হাঁস

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: সাবেক সেনাসদস্য মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান খুনের অন্যতম অভিযুক্ত কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ওপর ছিল প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের আশীর্বাদ।

প্রদীপ ছিলেন কারও কারও জন্য সোনার ডিমপাড়া হাঁস।

তাই একের পর এক বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিলেও তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অপরাধ করে বারবার পার পেয়ে যাওয়ায় টেকনাফে দানবীয় রূপ ধারণ করেন সমালোচিত সাবেক পুলিশ পরিদর্শক প্রদীপ কুমার দাশ।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে আগে কখনো অভিযোগ আসেনি। তাই দায়িত্ব পালনকালে তিনি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন কি না তা বলতে পারব না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টা এখন অন্য সংস্থা তদন্ত করছে। তাই প্রদীপকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আকতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘সাবেক পুলিশ পরিদর্শক প্রদীপের চাকরিজীবনের পুরোটাই ছিল বিতর্কের মধ্যে। অসংখ্যবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরখাস্ত ও প্রত্যাহার হওয়ার পর দ্রুতই স্বপদে বহাল হয়েছেন তিনি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ছাড়া কখনো এ ধরনের কর্মকান্ড নির্বিঘ্নে করা সম্ভব নয়। প্রদীপের ভয়ঙ্কর উত্থানে অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহায়তা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রদীপের অন্যায়-দুর্নীতি শুরু থেকে দমানো গেলে কখনো তিনি দানবীয় রূপ ধারণ করতে পারতেন না। এখানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা রয়েছে। তাই প্রদীপের পাশাপাশি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্যর্থতার তদন্ত করাও উচিত।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রদীপ কোনো কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জন্য ছিল সোনার ডিমপাড়া হাঁস। তারা প্রদীপের কাছ থেকে নানা অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করতেন। ঊর্ধ্বতন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার আশীর্বাদ ছিল প্রদীপের ওপর। একই সঙ্গে প্রদীপ সুনজরে ছিলেন প্রভাবশালী রাজনীতিকদের। তাই তার অনিয়ম-দুর্নীতির কথা জেনেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।’

জানা যায়, মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় অভিযুক্ত পুলিশের সাবেক পরিদর্শক প্রদীপ কুমার দাশের চাকরিজীবনের সিংহভাগ সময় কেটেছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে। দুই যুগের চাকরিজীবনের প্রায় সব সময় কেটেছে তার চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায়। যে থানায় দায়িত্বরত ছিলেন সেখানে বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। দীর্ঘ এ চাকরিজীবনে দুবার বরখাস্ত এবং কমপক্ষে পাঁচবার বিভিন্ন থানা থেকে প্রত্যাহার হয়েছেন। প্রতিবারই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে স্বপদে ফিরেছেন দ্রুত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের কীভাবে ম্যানেজ করতে হয় তা জানতেন প্রদীপ কুমার। অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে তার যাবতীয় অনিয়ম-দুর্নীতিতে সমর্থন করতেন। ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সমর্থন পেয়ে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন প্রদীপ কুমার। টেকনাফে থাকাকালীন সময়ে প্রদীপের কন্ট্রাক্ট কিলিং, গ্রেফতার বাণিজ্য, অভিযানের নামে লুটপাট, মানুষ ধরে এনে নির্যাতন- কোনো কিছুই অজানা ছিল না কারও। তার অনিয়ম-দুর্নীতির কথা জেনেও নীরবে সমর্থন দিয়ে গেছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।’ সূত্র: বিডি-প্রতিদিন।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *