মেজর সিনহা হত্যার আসামী লিয়াকতের রোষানল ১৩ মামলার ঘানি টানছেন ইঞ্জিনিয়ার জসিম!

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: এসএম জসিম উদ্দিন। বয়স ষাটের কাছাকাছি। তিনি পেশায় একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী সিডিএ মার্কেটে ‘সূচনা এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি মোটর পার্টস তৈরির কারখানা রয়েছে।

টেকনাফে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলার আসামি পরিদর্শক লিয়াকত আলী চট্টগ্রাম থাকা অবস্থায় জসিম উদ্দিনকে একে একে ১৩টি মামলা দিয়ে সর্বস্বান্ত করে ফেলেন। তদন্তকালীন একটি মামলায় লিয়াকতের চাঁদার চাহিদা পূরণ না করার কারণেই জসিম উদ্দিনের ওপর নেমে আসে এমন নির্যাতন।

রোববার যুগান্তরের কাছে এমন অভিযোগ তুলে ধরেন ইঞ্জিনিয়ার এসএম জসিম উদ্দিন। তিনি জানান, ২০১৪ সালে ব্যবসার কাজে চীন সফরের সময় জসিম উদ্দিনের প্রতিষ্ঠান থেকে ৭০ লাখ টাকার মালামাল খোয়া যায়। এ ঘটনায় তিনি চারজনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তভার যায় তৎকালীন এসআই লিয়াকত আলীর কাছে। লিয়াকত আলী তখন সিএমপির ডিবিতে কর্মরত ছিলেন।

জসিম উদ্দিনের অভিযোগ- তদন্ত প্রতিবেদন পক্ষে দেয়ার জন্য তার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন লিয়াকত। এতে রাজি না হওয়ায় ২০১৪ সালের ১৪ জুন তাকে ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে মামলার আসামিদের সঙ্গে মীমাংসা করতে চাপ দেন এসআই লিয়াকত। তিনি তাতে রাজি না হওয়ায় তাকে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতন থেকে বাঁচাতে দুই লাখ টাকা লিয়াকতের হাতে দেয়ার পরও তাকে বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়। ভুয়া একটি পরোয়ানায় জেলে পাঠানো হয়।

এসএম জসিম উদ্দিনের আরও অভিযোগ- এতকিছুর পরও ওই মামলায় আসামিদের বাদ দিয়ে আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দেন লিয়াকত। এতে নারাজি দিলে আদালত সিআইডিকে মামলার তদন্তভার দেন এবং সিআইডি ওই চার আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে। তার ওপর জুলুম-নির্যাতনের ঘটনায় অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। সিকিউরিটি সেল থেকে একজন পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি হলেও ওই কমিটির রিপোর্ট আর আলোর মুখ দেখেনি।

জসিম উদ্দিন বলেন, লিয়াকতের বিরুদ্ধে সিকিউরিটি সেলে অভিযোগ দেয়ার পর তিনি (জসিম উদ্দিন) চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের বাইরে বিভিন্ন থানায় একের পর এক মামলার আসামি হতে থাকেন। এর মধ্যে কুমিল্লার দাউদকান্দি থানায় তিনটি, সিএমপির সদরঘাট থানায় একটি, সিএমএম কোর্টে তিনটি, ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটিসহ অন্তত এক ডজন মামলার আসামি হন। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন লিয়াকতই তার লোকজন দিয়ে নগরী ও জেলার বিভিন্ন থানায় ও কোর্টে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করান। ওই সব মামলার ঘানি টানছেন এখনও।

এছাড়া দেলোয়ার হোসেনের নামে রিয়াজউদ্দিন বাজারের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘ব্যবসায়িক অংশীদারি নিয়ে তাদের মধ্যে একটি বিরোধ তৈরি হয়। এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করি। এর তদন্তভার পড়ে তৎকালীন এসআই লিয়াকতের ওপর। লিয়াকত আমার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করেন। আমি টাকা দিতে অস্বীকার করলে লিয়াকত আমার ওপর ক্ষেপে যান। লিয়াকত বিবাদী পক্ষের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে আমার বিপক্ষে কথা বলা শুরু করে। আমার কাগজপত্র অস্বীকার করে। পরে ঊর্ধ্বতন আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তা হস্তক্ষেপ করলে লিয়াকত দমে যান।’

জানা গেছে, পটিয়া উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নে লিয়াকত আলীর বাড়ি। মৃত সাহেব মিয়ার ৬ পুত্রের মধ্যে লিয়াকত আলী সবার ছোট। ২০১০ সালে লিয়াকত পুলিশের চাকরিতে যোগদান করেন। এসআই হিসেবে কোতোয়ালি থানার পাশাপাশি ডিবিতে ছিলেন তিনি। এরপর পুলিশের বিশেষায়িত টিম সোয়াতের সদস্য হিসেবেও কাজ করেন। পরে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটেও দায়িত্ব পালন করেন লিয়াকত। গত বছরের নভেম্বরে পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পেয়ে চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি হন। সেখান থেকে তাকে কক্সবাজার জেলা পুলিশে পাঠানো হয়। ১৮ জানুয়ারি বাহারছড়া আইসির ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পান। সূত্র: যুগান্তর।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *