লালমনিরহাটে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মন্ত্রীর ভাইয়ের মামলা

জাতীয় লীড শিক্ষা

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ‘হত্যা চেষ্টা’র অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদ। তিনি লালমনিরহাট-২ আসনের (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) সাংসদ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ভাই।

বৃহস্পতিবার সকালে কালীগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর ফরহাদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তুষভাণ্ডার ইউনিয়নের কাশিরাম এলাকায় হারুন-অর-রশীদের গোডাউনের সামনে মারামারির ঘটনায় বুধবার কালীগঞ্জ থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। আসামিরা হলেন- তুষভাণ্ডার ইউনিয়নের কাশিরাম এলাকার আহের আলীর ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হারুন-অর-রশীদ (৪২), একই এলাকার সেলিম হায়দারের ছেলে তৌকির আহমেদ হৃদয় (২৫), আব্দুল হামিদ টোকসার ছেলে জাকিরুল ইসলাম (৩৫) ও আবু তালেবের ছেলে রাহেবুল ইসলাম (৪০)। হৃদয় উপজেলা ছাত্রলীগের উপ-স্কুল বিষয়ক সম্পাদক এবং অপর দুইজন হারুনের ব্যবসায়ীক পার্টনার।

অপরদিকে একই এলাকার আজাহার আলীর ছেলে জাকির হোসেন (৩৫) ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়ে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অন্যরা মামলা-হামলার ভয়ে স্থানীয়ভাবে গোপনে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

মামলার এজাহার, প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতকর্মী সূত্রে জানা যায়, ১৫ আগস্ট দিবাগত সন্ধ্যায় কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী বাজার এলাকায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের উপর আলোচনা সভার আয়োজন করে বিডিএম নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে। সভায় সভাপতিত্ব করেন শিক্ষার্থী ওমর ফারুক।

ওই অনুষ্ঠানের বিষয়ে জানতে তাকে ফোন করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হারুন-অর-রশীদ। তাকে মোবাইলে গালাগাল করে দেখা করতে বলেন। ওমর ফারুক বিষয়টি শোকসভা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর ভাই মাহবুবুজ্জামান আহমেদকে অবগত করেন। পরে ছাত্রলীগ সভাপতিকে মোবাইলে কল করে সাক্ষাৎ করতে বলেন উপজেলা চেয়ারম্যান। মোবাইলেই উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে হারুনের কথা কাটাকাটি হয়।

এরপর উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সিনিয়র সভাপতি সাকিব মাহবুব মীম মোবাইলে কল করে হারুনকে তার চেম্বারে (তেতুল তলা) ডাকেন। জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজিদ মাহবুব মেলভিন, কালীগঞ্জ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজেদা বেগমসহ আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ সাকিব মাহবুব মীম মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় হারুন-অর-রশীদের চেম্বারে যান। মীম ও হারুনের কথাবার্তার এক পর্যায়ে হারুনের লোকজন ধারালো অস্ত্র-লাঠিসোঠা নিয়ে হামলা চালায়। এতে জাকির হোসেনসহ ৫-৬ জন আহত হন।

সাকিব মাহবুব মীম বলেন, ‘আমরা কথা বলছিলাম ছাত্রলীগ সভাপতি হারুন-অর-রশীদের সঙ্গে। এ সময় তার লোকজন চারদিক থেকে আমাদেরকে ঘেরাও করে মারধর শুরু করে। এতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন জাকির হোসেন। অন্যদের ছিলা-ফুলা জখম হয়। এ ঘটনায় আব্বু বাদী হয়ে মামলা করেছেন।’

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হারুন-অর-রশীদ মোবাইলে গালাগালের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যানই আমাকে গালাগাল করেছেন। এরপর তার মিসেস, দুই ছেলেসহ তাদের লোকজনই এসে আমার অফিস, মোটরসাইকেল নষ্ট করে উল্টো আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে আমি আমার নেতা স্থানীয় সাংসদ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রীকে অবহিত করেছি। তিনি যা করবেন, আমি সেটাই মেনে নেব।’

কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদ বলেন, ‘বিডিএম সংগঠনের শিক্ষার্থীদের মোবাইলে কল করে গালিগালাজ করায় বিষয়টি জানতে আমি হারুনকে কল করি। এ সময় হারুনকে ধমক দেই। কিন্তু সে পাল্টা মোবাইলে আমার টুটি চেপে ধরতে চায় এবং শুয়ারের বাচ্চা বলে গালি দেয়। বিষয়টি আমার ছেলে ও স্ত্রী শোনার পর হারুনের গদিতে গেলে তার লোকজন লাঠিসোঠা নিয়ে আমার স্ত্রী ও ছেলের ওপর হামলার চেষ্টা করে। জাকির হোসেন প্রতিহত করার চেষ্টা করলে তাকেও কুপিয়ে জখম করে। আমি এর প্রতিকার চেয়ে কালীগঞ্জ থানায় মামলা করেছি।’

কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদ বাদী হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করে গুরুতর জখম, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং হুকুম দানের অপরাধে হারুন-অর-রশীদসহ আরও তিন জনের নামে মামলা করেছেন। আসামিদের ধরতে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’ সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *