ইসিতে বিএনপির হিসাব জমা, কমেছে আয়-ব্যয়

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ২০১৯ অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে দলটি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল ২০১৯ অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব ইসিতে জমা দেয়। মঙ্গলবার দুপুরে ইসির সিনিয়র সচিব আলমগীর হোসেনের কাছে আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেয়া হয়।

হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৯ অর্থবছরে বিএনপির আয়-ব্যয় দুটিই কমেছে। সভা-সমাবেশ এবং নির্বাচন বাবদ কোনো ব্যয় নেই বিএনপির। তবে সাংগঠনিক কার্যক্রম, বিভিন্ন দিবস পালন ও সেমিনার-ওয়ার্কশপ বাবদ দলের ব্যয়ের তথ্য দিয়েছে দলটি। ইসিকে জানানো বিএনপির হিসাব অনুযায়ী তাদের আয় কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ২০১৯ অর্থবছরে দলটি আয় করেছে ১ কোটি টাকারও কম; যা ২০১৮ অর্থবছরে ছিল প্রায় ১০ কোটি টাকা। অবশ্য ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় ওই বছর দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে বড় অংকের আয় করেছিল দলটি।

হিসাব পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, ২০১৯ অর্থবছরে ১ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮৭ লাখ ৫২ হাজার ৭১০ টাকা আয় করে বিএনপি। কিন্তু ব্যয় করেছে দুই কাটি ৬৬ লাখ ৮৬ হাজার ১৩৭ টাকা। ফলে এক কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৪২৭ টাকা ঘাটতি হয়েছে তাদের। অবশ্য এ ব্যয়ের মধ্যে ২০১৮ সালের কিছু খাতের বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে বলে ইসিকে হিসাব দেখিয়েছে বিএনপি। ২০১৮ অর্থবছরে বিএনপির আয় ছিল ৯ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০ টাকা। আর সেখান থেকে দলটি ব্যয় করেছে ৩ কোটি ৭৩ লাখ ২৯ হাজার ১৪৩ টাকা।

এদিকে ২০১৯ অর্থবছরে দলের কর্মচারীদের বেতন-বোনাস খাতে ৫ লক্ষাধিক ও ইউটিলিটি বিল বাবদ ৬০ হাজারের মতো টাকা বকেয়া রয়েছে বলে ইসিকে হিসাব দিয়েছে বিএনপি। এ অর্থবছরে যে দুই কোটি ৬৬ লাখ ৮৬ হাজার ১৩৭ টাকা ব্যয়ের হিসাব ইসিকে দিয়েছে বিএনপি তার মধ্যে দলের কর্মচারীদের বেতন-বোনাস বাবদ ব্যয় দেখিয়েছে ৭৫ লাখ ৬ হাজার ১০৭ টাকা। এছাড়া এ খাতে তিন লাখ ৪৪ হাজার ৫০০ টাকা পূর্বের বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে এবং কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ এখনও ৫ লাখ ১৪ হাজার ৯৫০ টাকা বকেয়া রয়েছে বলে ইসিকে হিসাব দিয়েছে বিএনপি।

২০১৯ অর্থবছরে আসবাবপত্র ও প্রশাসনিক খরচ বাবদ বিএনপির ব্যয় হয়েছে ১৬ লাখ ৯৮ হাজার ৪৬৬ টাকা। টেলিফোন, ইন্টারনেট, কুরিয়ার সার্ভিস ও পত্রিকা বিল বাবদ সাত লাখ ১০ হাজার ১৩৭ টাকা ব্যয় দেখিয়েছে দলটি। এর মধ্যে এ খাতে পূর্বের বকেয়া পরিশোধ করেছে ২৯ হাজার ৯২২ টাকা। আরও ২৮ হাজার ১২৪ টাকা বকেয়া রয়েছে বলেও হিসাব দেয়া হয়েছে।

২০১৯ অর্থবছরে দলের প্রচারণা-পরিবহন বাবদ ২১ লাখ ৮০ হাজার ২০০, সাংগঠনিক কার্যক্রম বাবদ ১২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৫, বিজ্ঞাপন বাবদ ১৮ লাখ ৩০ হাজার, প্রকাশনা বাবদ ৮ লাখ ১২ হাজার ৭৮৪, জাতীয় ও বিভিন্ন দিবস উদযাপন বাবদ ২১ লাখ ৩০ হাজার ৯০০, ত্রাণ কার্যক্রম বাবদ ১৮ লাখ ৮৪ হাজার ৭২৯, যাতায়াত বাবদ এক লাখ ৩ হাজার ৩৬৭, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বাবদ ২২ লাখ ৪১ হাজার ৬৪০, সেমিনার ওয়ার্কশপ বাবদ ১২ লাখ ৪৩ হাজার, আপ্যায়ন ৮ লাখ ৬১ হাজার ৫৬৫, স্থায়ী-অস্থায়ী সম্পদ ক্রয় ৫ লাখ ৯০ হাজার ৬৯১, মেরামত ও সরবরাহ খাতে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৩৫ এবং অন্যান্য ব্যয় হয়েছে ৭ লাখ ১০ হাজার ৩২৮ টাকা।

উল্লেখ্য, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে পূর্ববর্তী অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব (অডিট রিপোর্ট) ইসিতে জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে যদি কোনো দল এ নির্ধারিত সময় বাড়াতে চায়, তাহলে ইসির কাছে আবেদন করে সময় বাড়াতে পারে।

গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী পর পর তিন বছর দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা না দিলে সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান রয়েছে। বর্তমানে দেশে ৪১টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *