সহকর্মীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ: অনশনে সিপিবি নেত্রী জলি

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: বাম জোটের মিছিলে দলের এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলে অনশনে বসেছেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক ও গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার।

শনিবার রাত থেকে ঢাকার নয়া পল্টনে মুক্তি ভবনে সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনশন শুরু করেন তিনি।

জলির অভিযোগ, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের এক সমাবেশে যোগ দিতে সিপিবির মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি দলের ঢাকা কমিটির সদস্য, ঢাকা দক্ষিণের সমন্বয়ক জাহিদ হোসেন খানের নিপীড়নের শিকার হন।

সাত মাস পর শুক্রবার সিপিবির ঢাকা কমিটির সভায় নেয়া এক সিদ্ধান্তের পর ওই ঘটনার বিচারের দাবিতে অনশনে বসেন তিনি।

বিচার চেয়ে সিপিবির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে লেখা চিঠিতে তিনি দাবি করেন, তাকে হেনস্থার বিষয়টি আমলে না নিয়ে ওই ঘটনার প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা কমিটি।

চিঠিতে জলি বলেছেন, পার্টি মিছিলে জাহিদ হোসেন খান আমার সাথে ন্যক্কারজনক যে নিপীড়নের ঘটনা ঘটিয়েছেন, সে বিষয়ে স্পষ্টভাবে আমি আমার বক্তব্য সেই মিছিলে উপস্থিত কমরেড আব্দুল্লাহ কাফি রতনকে জানাই।

এ ছাড়া সিপিবির ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ সাজেদুল হক রুবেলকে এ নিয়ে অভিযোগ জানালেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেন জলি।

তিনি চিঠিতে বলেন, আমি তাকে অনুরোধ করেছিলাম, নিপীড়ক জাহিদকে যেন সভায় আসতে বারণ করা হয়। কারণ একজন নিপীড়কের সঙ্গে বসে সভা করার রুচি, মানসিক অবস্থা কোনোটাই আমার নেই। আমার অনুরোধের কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি।

জলি তালুকদারের অনশনের বিষয়ে সিপিবি কেন্দ্রীয় সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, অভিযোকারী এবং যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা দুজনই নগর কমিটির নেতা। তাদের বিষয়ে নগর কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। যদি নগর কমিটি সমাধান দিতে না পারে তাহলে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ যাবে।

এ ইস্যুতে কারো ইন্ধন থাকতে পারে জানিয়ে রুহিন হোসে প্রিন্স বলেন, সিপিবি সবসময় শুদ্ধাচারের মধ্যে আছে। কমিউনিস্ট পার্টি সবসময় অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক এ দুই বিষয়ে লড়াই করে থাকে। আমরা বর্তমানে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছি। এটাই আমাদের প্রধান লড়াই। এর বাইরে দলের ভেতরের বিভিন্ন ঘটনা নিয়েও আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে (জলি তালুকদারের অভিযোগ) আমরা আরো আগেই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারতাম। তবে কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব পালন করতে গিয়ে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে আমাদের দেরি হয়ে গেছে।

জলি তালুকদার বলেন, আমি চাই না এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কিছু প্রকাশ হোক। এটা আমাদের দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

ফেইসবুকে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়া প্রসেঙ্গ তিনি বলেন, আমি অনেককেই নিষেধ করেছি ফেইসবুকে এ বিষয়ে কিছু জানাতে। কয়েকজনকে ফেইসবুক পোস্ট সরিয়ে দিতেও বলেছি।

অভিযুক্ত জাহিদ হোসেন খান বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ঘটনা যেখানে ঘটেছে সেখানে সিসিটিভি ফুটেজ আছে। সেই ফুটেজ দেখলেই বুঝতে পারা যাবে। ঘটনার দিন আমাদের কর্মীরা অনেকেই ছবি তুলেছেন মিছিলের। তাদের সেসব ছবি দেখলেও জানা যাবে আসল ঘটনা কী।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমি সার্বক্ষণিক পার্টিকে সময় না দিলেও গুরুত্বপূর্ণ পদে আছি। এটা তারা মানতে পারছেন না। আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য এ অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

জাহিদ দাবি করেন, নগর কমিটিতে এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত তাতে অভিযোগকারীকেই (জলি তালুকদার) দোষী হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছিল।

তবে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে সিপিবির ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল হক রুবেলকে ফোন করলেও তিনি তা কেটে দেন।

গত জুলাই মাসে নারী নির্যাতনের মামলা হওয়ার পর ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এসএম শুভ এবং আরিফুল ইসলাম নাদিমকে অব্যাহতি দেয় সিপিবির সহযোগী সংগঠন ক্ষেতমজুর সমিতি। সূত্র: পূর্বপশ্চিমবিডি।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *