শেষ হলো উপজেলায় প্রথম ধাপের ভোট, চলছে গণনা

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: বেশ কিছু উপজেলায় সংঘর্ষ, জাল ভোট দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হলো প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। আজ রবিবার (১০ মার্চ) সকাল ৮টায় দেশের ৭৮টি উপজেলায় একযোগে ভোট শুরু হয়। তবে অন্তত ১৯টি উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে জাল ভোট দেওয়া ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগের কারণে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। কোথাও কোথাও সংঘর্ষ ঘটে। এর ফলে এসব উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। অবশিষ্ট উপজেলাগুলোতে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বিকাল ৪টা পর্যন্ত এক নাগাড়ে ভোট গ্রহণ শেষে এখন শুরু হয়েছে ভোট গণনা।

এর মাধ্যমে এসব উপজেলায় নতুন উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। তবে দেশের বিভিন্ন উপজেলা প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশ কম।

আজ যে ৭৮টি উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে এর মধ্যে রংপুর বিভাগের ২৩টি উপজেলা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এগুলো হচ্ছে পঞ্চগড় জেলার পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারী, বোদা, দেবীগঞ্জ ও তেঁতুলিয়া উপজেলা ; কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী, উলিপুর, নাগেশ্বরী, রাজারহাট, রাজিবপুর, কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী ও রৌমারী উপজেলা ; নীলফামারী জেলার ডোমার, ডিমলা, নীলফামারী সদর, জলঢাকা, সৈয়দপুর ও  কিশোরগঞ্জ উপজেলা; লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, ও কালীগঞ্জ উপজেলা।

ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ১৩টি উপজেলা হচ্ছে জামালপুর জেলার জামালপুর সদর, সরিষাবাড়ী, ইসলামপুর, বকশীগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা; নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টা, দুর্গাপুর, খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, কেন্দুয়া, কলমাকান্দা, মদন ও নেত্রকোণা সদর উপজেলা।

সিলেট বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ১৭ টি উপজেলা হচ্ছে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সদর, দিরাই, শাল্লা, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলা; হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল, মাধবপুর, চুনারুঘাট, লাখাই, হবিগঞ্জ সদর, নবীগঞ্জ, আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলা।

রাজশাহী বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ২৫টি উপজেলা হচ্ছে সিরাজগঞ্জ জেলার সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, চৌহালী, কাজীপুর, রায়গঞ্জ, শাহজাদপুর ও তাড়াশ উপজেলা; জয়পুরহাট জেলার জয়পুরহাট সদর, পাঁচবিবি, আক্কেলপুর, কালাই ও ক্ষেতলাল উপজেলা; নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, লালপুর ও সিংড়া উপজেলা; রাজশাহী জেলার তানোর, গোদাগাড়ী, মোহনপুর, বাগমারা, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, চারপুর ও বাঘা উপজেলা।

আজ যে ৭৮ উপজেলায় ভোট হয়েছে তাতে মোট ৮৪২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২০৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৩৮৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ২৪৯জন। মোট ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ৪২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৫০জন। মোট ভোটকেন্দ্র ৫ হাজার ৮৪৭টি।

প্রথম ধাপে ৮৭টি উপজেলায় ভোটগ্রহণের জন্য তফসিল ঘোষণা হলেও উচ্চ আদালতের আদেশে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া এবং রাজশাহীর পবার ভোট বন্ধ করে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রভাব খাটানোর অভিযোগে লালমনিরহাটের আদিতমারী, নেত্রকোনার পূর্বধলা ও সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ভোট একদিন আগে বন্ধ করেছে। এছাড়া জামালপুরের মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ এবং নাটোরের সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তিনটি পদেই একক প্রার্থী হওয়ায় সেখানে ভোট গ্রহণের প্রয়োজন হচ্ছে না।

এবার দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোট অংশগ্রহণ থেকে বিরত রয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহীদের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার দলের এমপিদের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের সিংহভাগই সরকার সমর্থিত দল সমর্থিত হওয়ায় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান কমিশনের। তাদের মধ্যে রয়েছে নির্বাচনে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা।

এবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তিনটি পদেই দলীয় মনোনয়নের সুযোগ থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কেবল চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দিতে প্রত্যাশীদের কাছে ফরম বিক্রি করলেও শেষ মূহুর্তে অবস্থান পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ। জানা গেছে, বিএনপিসহ অনেকগুলো নিবন্ধিত দল অংশগ্রহণ না করার কারণে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করতে এই পদ দুটি উন্মুক্ত রাখে আওয়ামী লীগ। এমনকি পরিষদের চেয়ারম্যান পদেও স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা বিদ্রোহী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে নমনীয় দলটি। অন্যান্য সময়ে এসব প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও এবার সেটি ঘটেনি।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *