সহকর্মীর স্ত্রীর সাথে পরকীয়া, ব্যাংক কর্মকর্তা করাগারে

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক:বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তার স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন আরেক কর্মকর্তা। এ নিয়ে ব্যাংসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপার হয়।

পরকীয়ার প্রতিবাদ করলেই স্ত্রী সন্তানের ওপর নির্যাতন করেন তিনি। শুধু নির্যাতনই না, বাসা থেকে বের করে দেন স্ত্রী আর শিশুসন্তানকে।

এ ঘটনায় অবশেষে করাগারে যেতে হলো অভিযুক্ত বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তা মামুনুর রহমান মামুনকে। মঙ্গলবার দুপুরে রংপুরের চিফ জুডিশয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শওকত আলী এ আদেশ দেন।

জানা গেছে, ব্যাংক কর্মকর্তা মামুনুর রহমানের স্ত্রী মাফরুহা আকতার রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা। স্ত্রী নিজেই বাদী হয়ে মামুনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও ২০ লাখ টাকা যৌতুকের মামলা করেন। কিন্তু নিকটাত্মীয় এক পুলিশ কর্মকর্তার দাপটে অভিযুক্ত মামুন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোসহ দিব্যি অফিস করছিলেন। তার দাপটে অসহায় হয়ে পড়েন স্ত্রী ও তার সন্তান।

এই খবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ পেলে পুলিশের দাপট দেখানো এই মামুন উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। অবশেষে মঙ্গলবার তিনি নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে স্ত্রীর ওপর বিষদগার করে আদালতে বক্তব্য দেন। আদালত তার কোন কথায় আস্থা না রেখে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মামলার অভিযোগে জানা গেছে, ১১ বছর আগে রংপুর নগরীর ধাপ কাকলী লেনের মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে মামুনুর রহমান মামুনের সাথে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পান্থপাড়া গ্রামের মনসুর আলী মন্ডলের কন্যা মাফরুহা আখতারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে মাফরুহা তার স্বামীর বাবার বাড়ি বসবাস করে আসছিলেন। ১১ বছরের সংসার জীবনে ৭ বছর পর তাদের এক কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে। তার বর্তমান বয়স ৪ বছর।

মামলার বাদী অভিযোগ করেন, স্বামী ঠুনকো ঘটনায় তাকে মারধর করতেন তাকে। এক পর্যায়ে তার স্বামী বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর কার্যালয়ের একজন উর্ধতন কর্মকর্তার স্ত্রীর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিসহ ভাইরাল হয়। এ নিয়ে ব্যাংকেও তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে প্রায়শই তাকে মারধর করতো স্বামী মামুন।

অবশেষে পরকীয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন উর্ধতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে মামুন ওয়াদা করে যে, তিনি আর পরকীয়ায় লিপ্ত হবেন না এবং স্ত্রীকে নির্যাতন করবেন না।

কিন্তু কিছুদিন না যেতেই আবারো ওই নারীর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হন তিনি। এসব ঘটনার ছবি এবং তাদের মোবাইলে দেয়া শত শত মেসেজ ও অডিও প্রকাশ পেলে স্ত্রী মাফরুহা ঘটনার প্রতিবাদ করে। প্রতিবাদ করায় মারধর করা হয় মাফরুহাকে।

অভিযোগে বলা হয়, রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মাফরুহা আখতারের কাছে অভিযুক্ত মামুন ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। ওই টাকা দিয়ে তাদের বাসার তৃতীয় তলা নির্মাণ করা হবে বলে জানায়। কিন্তু মাফরুহা ওই টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে চলতি বছরের ২১ মে বেদম মারধর করে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এছাড়া গভীর রাতে ৪ বছরের কন্যা সন্তানসহ বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়।

গুরতর অসুস্থ অবস্থায় গোবিন্দগঞ্জের বাসায় গিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হন মাফরুহা। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে চলতি বছরের ১ জুলাই রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের কোতয়ালী থানায় মাফরুহা আখতার নিজেই বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করে।

মাফরুহা ও তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মামলা দায়ের করার পর বাদীকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে আসামি মামুন। ফলে জীবনের নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় রূপালী ব্যাংক রংপুর সেন্ট্রাল রোড শাখা থেকে বগুড়া শাখায় বদলী নিয়ে সেখানে চাকরি করছেন বাদী।

এদিকে এ ঘটনার দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার দুপুরে রংপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামি মামুনুর রহমান হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। বিজ্ঞ বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুল মালেক (পিপি) ও রইছ উদ্দিন বাদশা জানান, আসামি তার স্ত্রীর প্রতি অমানুষিক নির্যাতনের ভিডিওচিত্র নিজেই ধারন করে রেখেছে।

এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল ছবি, প্রেমিকার কাছে দেয়া শত শত মেসেজ ও অন্যান্য কাগজপত্র প্রমাণ করে যে, আসামি একজন নারী নির্যাতনকারী। বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *