সমুদ্র বিজয়ের নায়ক পাচ্ছেন ‘বঙ্গবন্ধু পুরস্কার’

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক: সমুদ্র বিজয়ের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু পুরস্কার’ পাচ্ছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব মোহাম্মাদ খোরশেদ আলম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কূটনীতিকদের অসামান্য অবদানের জন্য পুরস্কার দেয়া হয়। বাংলাদেশেও প্রথমবারের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কূটনীতিকদের ‘বঙ্গবন্ধু পুরস্কার’ দেওয়ার।

খোরশেদ আলম মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমানা বিরোধ নিষ্পত্তিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি উভয় মামলায় বাংলাদেশের ডেপুটি এজেন্ট হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। খোরশেদ আলম ২০০৯ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। একই বছর ভারত ও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক কোর্টে মামলা দাখিল করে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের মহিসোপানের দাবি নির্ধারণের জন্য টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেটির প্রধান ছিলেন তিনি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ মহিসোপানের দাবি জাতিসংঘে জমা দিয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে সামনের বছর বাংলাদেশের দাবির নিষ্পত্তি হবে।

খোরশেদ আলমের জন্ম ১৯৫৩ সালে। প্রকৌশল বিভাগে পড়াশোনারত অবস্থায় বাংলাদেশ নেভিতে তিনি যোগ দেন। ১৯৭৩ সালে কমিশন্ডপ্রাপ্ত হোন। তিনি যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ওশেনোগ্রাফিক সেন্টার থেকে ওশেনোগ্রাফির উপর প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম ফিল ডিগ্রি অর্জন করেন। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ন্যাভাল স্টাফ কলেজ থেকে সমুদ্র আইন বিষয়ক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং তার মেধার জন্য  ‘কমেন্ডশেন লেটার’ পান। এছাড়া ১৯৭৪ সালে ভারতের ন্যাভাল একাডেমি থেকে ইন্ডিয়ান প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডাল পেয়েছেন।

নৌবাহিনীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় ১৯৯১ সালে তিনি মালয়েশিয়াতে ডিফেন্স অ্যাডভাইজার হিসাবে নিয়োগ পান। এছাড়া তিনি মোংলা পোর্টের চেয়ারম্যান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য, জনতা ও চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের পরিচালক হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ান।

খোরশেদ আলম ২০১৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল সিবেড অথরিটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব হিসাবে আঞ্চলিক সামুদ্রিক সংগঠন ইন্ডিয়ান ওশেন রিম অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ ফোকাল পয়েন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ভারত মহাসাগর অঞ্চলে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সুবিধা বৃদ্ধি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মৎস্য সম্পদ আহরণ, পর্যটন ও সাংস্কৃতিক বিনিময়, ব্লু অর্থনীতি, নারী ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইন্ডিয়ান ওশেন রিম অ্যাসোসিয়েশন কাজ করে থাকে।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একজন বিদেশি কূটনীতিককে বঙ্গবন্ধু পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং প্রথমবারের মতো এই পুরস্কার পেয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক রাষ্ট্রদূত সাইদ মোহাম্মাদ আল মেহরি। মেহরি দুবছর বাংলাদেশে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনবার ওই দেশে সফর করেছেন। ওই সফরগুলোতে দুদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন, বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ, বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেকগুলি চুক্তি সই হয়েছে। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত জনশক্তি রফতানি উন্মুক্ত করেছিল তার সময়ে।

দুই কূটনীতিকের পুরস্কার পাওয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেন, আমাদের কূটনীতিকরা অনেক পরিশ্রম করছেন এবং আমরা ঠিক করেছি এই মুজিববর্ষে দুজন কূটনীতিককে বঙ্গবন্ধু পুরস্কার দেব। এদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি এবং আরেকজন এদেশে কাজ করেছে এমন বিদেশি কূটনীতিক।

তিনি বলেন, খোরশেদ আলমকে দেওয়ার কারণ আমাদের সমুদ্র সীমা নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন কাজ করছেন এবং এটির অর্জনে ওনার অবদান অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। তিনি ব্লু ইকোনোমিতে যে অবদান রেখেছেন সেটি অনুকরণীয়। এজন্য প্রথম বঙ্গবন্ধু পুরস্কার ওনাকে দেওয়া হচ্ছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *