ভাষাসংগ্রামীদের নামের তালিকা আজও হয়নি

জাতীয়

স্বদেশবাণী ডেস্ক: বাঙালি পৃথিবীর একমাত্র জাতি, যারা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বুকের রক্ত দিয়েছে। এর স্বীকৃতিও মিলেছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ২১ ফেব্রুয়ারি এখন সারা বিশ্বে পালিত হয়। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছর পরও ভাষাসংগ্রামীদের নামের তালিকা সরকারিভাবে প্রণয়ন করা হয়নি।

বাংলা ভাষার জন্য শহিদ হয়েছিলেন সালাম, রফিক, জব্বারের মতো অকুতোভয় প্রাণ। ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন আরও অনেকে। কয়েকজনের নাম কিছু লেখায় থাকলেও তাদের নামের তালিকা আজও তৈরি করা হয়নি। এ তালিকা এখন আর তৈরি করা সম্ভব নয় বলেও অনেকে মনে করেন। কারণ, ভাষাসংগ্রামীদের বেশিরভাগই মারা গেছেন।

ভাষাসংগ্রামীদের তালিকা তৈরির আবেদন জানিয়ে ২০১০ সালে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট তালিকা তৈরির নির্দেশ দিলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে একটি তালিকা উপস্থাপন করে। সেখানে জিল্লুর রহমান, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, আবদুল মতিন, হাবিবুর রহমানসহ ৬৮ জন ভাষা সংগ্রামীর নাম ছিল।

২০১২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সেখানে এমন কয়েকজনের নাম ছিল যা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তালিকাটি পূর্ণাঙ্গ নয় ও বিতর্ক রয়েছে- এমন অভিযোগে তালিকা প্রণয়নের কাজ স্থগিত করা হয়। পরে ঢাকাসহ দেশের সব জেলায় কমিটি গঠন করে তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শুধু ঢাকায় ভাষাসৈনিক আহমদ রফিককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও মুনতাসীর মামুন। কিন্তু সেই কমিটির একটিমাত্র বৈঠক হয়েছিল। কাজের পদ্ধতিগত জটিলতা নিয়ে সেখানে শুধু আলোচনা হয়। তালিকা প্রস্তুত করার বিষয়টি জটিল হিসাবে উল্লেখ করে তখন ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক বলেছিলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে চেষ্টা করা হলেও বিষয়টি নিয়ে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়। নানা জায়গা থেকে বিভিন্নজন ভাষা সংগ্রামী হিসাবে দাবি করেন।

এ ব্যাপারে আহমদ রফিক যুগান্তরকে বলেন, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণে অবহেলা করা হয়েছে। এটা সব সরকারের আমলে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র ১৬ খণ্ডে প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র সংরক্ষণ, সংকলন বা ইতিহাস ধরে রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগে কিছুই করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, ইচ্ছা থাকলেও তালিকা তৈরি করা আর সম্ভব নয়। কারণ আমাদের বন্ধুবান্ধব যারা সক্রিয়ভাবে ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন বা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের বেশির ভাগই আজ প্রয়াত। আমার মতো দু-চারজন বেঁচে আছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে তালিকা প্রণয়নের কাজটি কার্যত বন্ধ রয়েছে এবং সরকারিভাবে করার আর কোনো উদ্যোগ নেই।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *