‘আত্মবিশ্বাস ও সাহসের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম’

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক: সশস্ত্র বাহিনীর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায়ও সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন নারী। তার অনন্য উদাহরণ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে (হেলথ কেয়ার ম্যানেজমেন্ট) প্রথম নারী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমা বেগম। নারী হিসাবে ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্সের অধিনায়ক ও সেনাবাহিনী অ্যাসিসট্যান্ট ডিরেক্টর মেডিকেল সার্ভিসেসেও প্রথম তিনি। এ ছাড়া জাতিসংঘে তিনিই প্রথম নারী, যিনি দুবার সাফল্যের সঙ্গে কন্টিনজেন্ট কমান্ড করেন এবং কান্ট্রি সিনিয়র হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে সম্প্রতি যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

যুদ্ধক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রথম নারী অ্যাম্বুলেন্স অধিনায়কের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে নাজমা বেগম বলেন, আত্মবিশ্বাস ও সাহসের সঙ্গে আমি চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেছিলাম। ২০১৬ সালে আইভোরি কোস্টে জাতিসংঘের প্রথম নারী কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করি। ফোর্স কমান্ডার বলেছিলেন, ‘তোমাদের দেশের মেয়েরা তো এখনো পিছিয়ে।’ জবাবে বলেছিলাম, নারীর ক্ষমতায়নে আপনাদের চেয়ে আমরা অনেক এগিয়ে আছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকারও নারী।

আর প্রথম নারী কমান্ডার হিসাবে আমি সেই দেশ থেকেই এসেছি। নাজমা বেগম বলেন, মেক্সিকোয় অনেক আগে থেকে নারীর উন্নয়ন শুরু হলেও পেশাগত দিক থেকে আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে বলে মনে হয়নি। এর আগে ২০০৭ সালে আইভোরি কোস্টে গিয়েছিলাম। তবে প্রথমবারের তুলনায় দ্বিতীয়বার দেখেছি এইডস আক্রান্তের সংখ্যা বেশ কমেছে। ২০১৮ সালে মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের নারী কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হিসাবে যাই। এ মিশনটা ছিল আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং।

এখানে রাজনৈতিক কারণে সতেরোটি সশস্ত্র দল ছিল। মাঝে মাঝেই তারা আত্মকলহে জড়িয়ে পড়ত। সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে নারী-শিশুরা বেশি ভোগান্তির শিকার হতো। বাংলাদেশ সরকারের অর্থে আমরা নারী-শিশুদের ফ্রি চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দিয়েছি। এ মিশনে নাজমা বেগম একবার আল খাতিম গ্রুপের লোকজনের হামলার শিকার হয়েছিলেন। মিশনের লোকজনকে বাঁচাতে তিনি কমান্ডার হিসাবে অফিসে বসে না-থেকে রিভলবার হাতে তুলে নেন।

নাজমা বেগমের জন্ম নীলফামারীতে। বাবা নইমুল ইসলাম ও মা বেগম জুলেখা পেশায় শিক্ষক ছিলেন। নীলফামারী সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও একই জেলার সরকারি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাশ করেন এ সেনা কর্মকর্তা। এরপর ১৯৯৬ সালে তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করেন। ২০০৪ সালে নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ থেকে পিএইচডি করেন।

স্বামী অবসরপ্রাপ্ত মেজর দিলদারুল ইসলামের অনুপ্রেরণায় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কাজের স্বীকৃতি হিসাবে নাজমা বেগম দেশ-বিদেশ থেকে পেয়েছেন অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার। এর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের স্পেশাল রিপ্রেজেনটেটিভ সেক্রেটারি জেনারেল সম্মাননা, জাতিসংঘের ফোর্স কমান্ডার সম্মাননা, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের সেনাপ্রধান পুরস্কার, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সম্মাননা।

প্রিফেক্ট, মেয়র, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সম্মাননাও পেয়েছেন তিনি। কাজের ফাঁকে তিনি লেখালেখিও করেন। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পঞ্চাশের বেশি। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার পদক, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ পদক, মাদার তেরেসা পদক, জগজিৎ সিং পদক, সেনা পারদর্শিতা পদক প্রভৃতি। দেশের নারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্র ও পরিবার একসঙ্গে সামলাতে গুছিয়ে চলতে হবে। সবার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জন করতে হবে।

সমালোচনায় কান দিলে একজন নারীর শক্তি ও মানসিক সাহস কমে যায়। ওসব গুরুত্ব না-দিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দেওয়া উচিত। আর যে নারী সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে আগ্রহী তাকে নিয়মানুবর্তিতার প্রতি জোর দিতে হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *