আসুন, সবাই মিলে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলি: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বই হাতে নিয়ে পাতা উল্টে পড়ার আনন্দই আলাদা। আসুন, সবাই মিলে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলি এবং আমাদের আগামী প্রজন্মকেও বই পড়ার অভ্যাসে উৎসাহিত করি। তিনি বলেন, বইয়ের আবেদন কোনও দিন মুছে যাবে না। এখন মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য ডিভাইসেও পড়ার সুযোগ আছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজি এবং সংস্কৃতি সচিব মো.বদরুল আরেফিন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন’ গ্রন্থের ইংরেজী ভার্ষণ (নিউ চায়না ১৯৫২)-এর মোড়ক উন্মোচন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবার বই পড়ার অভ্যাস এবং ঝোঁক বাড়াতে হবে। পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে ছোটদের বইয়ের প্রতি ঝোঁক বাড়ানো দরকার। আমাদের সময় বাচ্চাদের বই পড়ে শোনানো হতো। এখনও আমরা তা করি। সব সময় ঘরে একটা ছোট লাইব্রেরি করে রাখি। আমাদের (রাজনীতিবিদদের) বক্তৃতা বিবৃতিতে তথ্য মানুষের কাছে যত দ্রুত পৌঁছা যায়, সাহিত্যে আরও আগে পৌঁছা যায়। সাহিত্যের মাধ্যমে ইতিহাস, ভাষা-সংস্কৃতিও জানা যায়। সে কারণে পাঠ্যাভাস জরুরি।’

প্রধানমন্ত্রী অনুবাদ সাহিত্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, নিজের মায়ের ভাষাকে জানা যেমন দরকার তেমনি অন্য ভাষা জানাটাও দরকার সে জন্য অনুবাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য বাংলা একাডেমিকে সবময়ই আমি অনুরোধ করেছি-অন্যান্য দেশের সাহিত্য যেন আমরা জানতে পারি। কারণ, সহিত্যের মধ্যদিয়েই মানুষের জীবনচর্চা জানা যায়, সংস্কৃতি ও ইতিহাস জানা যায়।

সবাইকে বইমেলায় আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এখানে আসবেন, অবশ্যই স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা মেনে চলবেন। যদিও আমরা শুরু থেকে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম বলেই এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু এখন আবার এর দ্বিতীয় ওয়েভ, কোথাও কোথাও তৃতীয় ওয়েভ শুরু হয়ে গেছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ভাইরাসটা আরও মারাত্মক আকারে দেখা দিচ্ছে। যদিও আমরা টিকা দিচ্ছি। টিকা দেওয়া কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। কিন্তু তারপরও বাইরে বের হলেই সবাইকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। তাতে যেমন নিজের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা হবে, তেমনি অন্যদের স্বাস্থ্যও সুরক্ষিত থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রায় ৪৫ লাখের ওপরে টিকাদান হয়ে গেছে। এটা চলতে থাকবে। দ্বিতীয় ডোজটাও দেওয়া হবে। তারপরও টিকা দিয়েই মনে করবেন না, সবাই একেবারে সুরক্ষিত হয়ে গেছেন।’

ডিজিটালাইজেশনের কারণে নানাভাবে বই পড়ার সুযোগ আছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তবে ব্যক্তিগতভাবে আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, আমি মনে করি, একটা বই হাতে নিয়ে, বইয়ের পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে পড়া, এর আনন্দটাই আলাদা। এটা কিন্তু ওই যন্ত্রের মধ্যে পাওয়া যায় না। যন্ত্রে আমরা পাই না। তবে যন্ত্রটা সঙ্গে নিতে সুবিধা বেশি। এই সুবিধাগুলো আছে। কিন্তু তারপরও বলবো, বইয়ের আবেদনটা কিন্তু কোনোদিন মুছে যাবে না, আবেদনটা থাকবে। আর বইগুলো স্থায়ীভাবেই থাকে।’

প্রকাশকদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই মহামারির সময় তারা অনেক কষ্ট পেয়েছেন। তবে সেই কথা বিবেচনা করে এবং আমাদের যারা পাঠকবৃন্দ, যারা বই পড়তে পছন্দ করেন, অথবা বইমেলায় ঘুরে ঘুরে বই দেখার ভিতরে আনন্দ পান, সেই আনন্দ থেকে যেন বঞ্চিত না হয়, সেই চিন্তা করেই বইমেলা করা হচ্ছে।’

এই প্রথমবারের মতো মেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে একটি প্রবেশ পয়েন্ট থাকবে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের তিনটি প্রবেশ পয়েন্টের সাথে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ (আইইবি)-র পাশে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে এর সংক্রমণ ঠেকাতে বইমেলায় নেওয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা। প্রবেশ পথে থাকবে ‘নো মাস্ক-নো এন্টি’ সম্বলিত লোগো।

সব মিলিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩টি প্রবেশ পথ ও ৩টি বাহির পথ থাকবে। প্রত্যেক প্রবেশ পথে সুরক্ষিত ছাউনি থাকবে, যাতে বৃষ্টি ও ঝড়ের মধ্যে মানুষ আশ্রয় নিতে পারেন। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।

বইমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলা এলাকাজুড়ে ৩ শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। মেলাপ্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (সমগ্র মেলাপ্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর থেকে শহিদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চাঁনখারপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত) নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ধূলিনাশক পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা করা হয়েছে।

১৯ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। দর্শনার্থীদের মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের জন্য কঠোরভাবে স্বাস্থ্য-বিধি মেনে চলতে হবে। সেখানে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা, হাত ধোয়া ও স্যানিটাইজিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।

বইমেলা সবার জন্য কার্যদিবসগুলোতে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। দুপুরের খাবার ও নামাজের জন্য এক ঘন্টা বিরতি থাকবে। স্বাধীনতার সুবর্ণ-জয়ন্তী উপলক্ষে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বিষয়কেন্দ্রিক আলোচনার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন এবং গত এক বছরে প্রয়াত বিশিষ্ট জনদের জীবন ও কৃতি নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রতিদিনই রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি ও পাঠ।

২০২০ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ-বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।

মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মেলার তথ্যাদি প্রতিদিন সরাসরি সম্প্রচার করবে। এফ এম রেডিওগুলোও মেলার তথ্য প্রচার করবে। গ্রন্থমেলার খবর নিয়ে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি বুলেটিন প্রকাশিত হবে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রতিদিন মেলার তথ্য প্রচার করবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *