মুক্তিপাগল মানুষের পদচারণায় ঢাকা টালমাটাল

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক: মুক্তিপাগল মানুষের দৃপ্ত পদচারণায় রাজধানী টালমাটাল হয়ে ওঠে। মিছিলের পর মিছিল এগিয়ে চলে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। সেখানে শপথ গ্রহণ শেষে একের পর এক শোভাযাত্রা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে সমবেত হয়। ১৯৭১ সালের ২০ মার্চের এমন উত্তাল দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমবেত জনতার উদ্দেশে একাধিক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি বলেন, মুক্তিপাগল সাড়ে সাত কোটি বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়কে পৃথিবীর কোনো শক্তিই রুখতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।

লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনের এই দিনে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সাবেক নৌ-সেনাদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে তারা বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। পাশাপাশি স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগিতা করার জন্য একটি সম্মিলিত মুক্তিবাহিনী কমান্ড গঠনের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকদের প্রতি আহ্বান জানান। সকালে সামরিক প্রহরায় রমনার প্রেসিডেন্ট ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মধ্যে চতুর্থ দফা আলোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ছয়জন শীর্ষস্থানীয় সহকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টা আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বের হন। এরপর দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে অপারগতা জানিয়ে তিনি বলেন, সময় এলে অবশ্যই আমি সব কিছু বলব। এদিন রাতে এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বলেন, মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে। বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে একটি অনুপ্রেরণাদায়ী দৃষ্টান্ত।

অন্যদিকে একাত্তরের এদিন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তার সামরিক উপদেষ্টা জেনারেল হামিদ খান, পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক টিক্কা খান, জেনারেল পীরজাদা, জেনারেল ওমর, জেনারেল মিঠঠাসহ সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি গোপন বৈঠকে বসেন। বৈঠকে তিনি সামরিক প্রস্তুতি পর্যালোচনা করেন। এ সময় শেখ মুজিবের সঙ্গে বৈঠক ব্যর্থ হলে কী করণীয় হবে, তা আলোচিত হয় এবং ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অনুমোদন করা হয়।

এদিকে প্রতিদিন একের পর এক বোয়িং-৭০৭ বিমানে করে সৈন্য ও রসদ ঢাকায় আনা হয় এবং কয়েকটি জাহাজ পূর্ণ করে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয়। অসহযোগ আন্দোলন শুরুর দিকে বাংলাদেশে স্থলবাহিনীর শক্তি ছিল এক ডিভিশন, ২০ মার্চ তা হয় দুই ডিভিশনের বেশি।

করাচিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, তিনি লন্ডন পরিকল্পনা (যা ১৯৬৯ সালে লন্ডনে বসে শেখ মুজিব, খান আবদুল ওয়ালী খান ও মিয়া মমতাজ মোহাম্মদ খান দৌলতানা কর্তৃক প্রণীত হয়) মানবেন না। তিনি বলেন, ওই পরিকল্পনা আওয়ামী লীগ প্রধান কর্তৃক ঘোষিত ছয় দফার ভিত্তিতেই করা হয়েছে।

এদিন বঙ্গবন্ধুর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও সুপ্রিমকোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী একে ব্রোহি ঢাকায় আসেন। সন্ধ্যায় হোটেল কন্টিনেন্টালে পাকিস্তান কাউন্সিল মুসলিম লীগ সভাপতি মিয়া মমতাজ মোহাম্মদ খান দৌলতানা, ন্যাপ প্রধান ওয়ালী খান, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মুফতি মাহমুদ, পাঞ্জাব কাউন্সিল মুসলিম লীগপ্রধান সরদার শওকত হায়াত খান, বেলুচিস্তানের ন্যাপ নেতা গাউস বঙ বেজেঞ্জা প্রমুখ নেতার সঙ্গে তিনি আলোচনা করেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *