অফিস-আদালত থেকে ফিরে গরম পানির ভাপ নেবেন: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রত্যেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলবেন। মানুষের জীবন-জীবিকা চলতে হবে, মানুষকে আমরা কষ্ট দিতে পারি না। কিন্তু সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা একান্তভাবে অপরিহার্য। সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন এবং প্রত্যেকে যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। মাস্ক পরা এটি একান্তভাবে দরকার। অফিস-আদালত বা জনসমাগম থেকে ফিরে অবশ্যই গরম পানির ভাপটা নেবেন।

বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭১তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস এখন একটা মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। আমরাও সেই ধাক্কাটা দেখতে পাচ্ছি। আমরা তাৎক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা নিলেও হয়তো ভবিষ্যতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে মানুষকে বাঁচানোর জন্য এবং সেটি আমরা নেব।

শেখ হাসিনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় গুরুত্বারোপ করে প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারাও এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। অপরেও যেন সুরক্ষিত থাকে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। আজকে যারা দায়িত্ব নিয়ে কর্মস্থলে যাবেন সেখানেও যেন সকলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সেদিকে আপনারা দৃষ্টি দেবেন।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আজকে এই সভার মাধ্যমে আমি দেশবাসী সবাইকে বলবো প্রত্যেক স্বাস্থ্যসুরক্ষাবিধি যাতে মেনে চলে সেই ব্যবস্থা নেবেন। মানুষের জীবন-জীবিকা চলতে হবে। মানুষকে আমরা কষ্ট দিতে পারি না। কিন্তু সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা একান্তভাবে অপরিহার্য্য।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ৭১তম বুনিয়াদি কোর্সে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান অধিকারকারীদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করেন। প্রতিষ্ঠানে রেক্টর মো. রকিব হোসেন ফলাফল উপস্থাপন করেন এবং শপথ বাক্য পাঠ করান। এবারের কোর্সে ৩০৭ জন কর্মকর্তার সকলেই কৃতকার্য হয়েছে। এরমধ্যে ২২৮ জন পুরুষ এবং ৭৯ জন নারী কর্মকর্তা রয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা চলবো’ কাজেই যারা সিভিল সার্ভিসে কাজ করেন তাদের এটাই মনে রাখতে হবে-‘দেশের মানুষের জন্যই আপনাদের কাজ করতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মহান মুক্তির সংগ্রামে দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেনী পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। কাজেই ধনী-গরিব, ধর্ম বর্ণ দলমত নির্বিশেষে কোন ভেদাভেদ না করে মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখে তাদের সার্বিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে সবাইকে সমান অধিকার দিয়ে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, সেই মানসিকতা নিয়েই আপনারা জনগণের সেবা করবেন সেটাই আমি চাই। কেননা, কেউ ইচ্ছে করে দরিদ্র হয় না, কেউ দরিদ্র বা প্রতিবন্ধী হলেই আমরা তাদেরকে অপবাদ দিতে পারি না, তাদেরকে সাহায্য করা দরকার, যাতে তারা সমাজে দাঁড়াতে পারে এবং মাথা উঁচু করে চলতে পারে, সেভাবেই আমরা কাজ করতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় সরকারি কর্মচারিদের উদ্দেশ্যে জাতির পিতার বক্তব্য উদ্ধৃত করেন-

জাতির পিতা বলেন, ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় এ গরীব কৃষক! আপনার মাইনে দেয় ঐ গরীব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ঐ টাকায়। আমি গাড়ি চড়ি ঐ টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন, ইজ্জত করে কথা বলুন। ওরাই মালিক।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণই বাংলাদেশের মালিক। সেই মালিক যে কেউ হতে পারে। একজন মেহেনতী মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার জনগণ এবং আমাদের সংবিধানের ৭ম অনুচ্ছেদের এ কথাই বলা হয়েছে-প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেকথা মনে করেই আপনারা জনগণকে সেবা দেবেন-এটাই আমি চাই।’

তিনি বলেন, লোক-প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিভিন্ন জ্ঞান এবং জনদরদী মনোভাব উন্নয়নে ৬ মাস মেয়াদী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কাক্সিক্ষত ভূমিকা পালনে আপনাদের সহায়তা করবে বলে আমি মনে করি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করবো, কর্মজীবনের বৃহত্তর পরিসরে ফিরে গিয়ে আপনারা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান এবং দক্ষতার যথার্থ প্রয়োগ করবেন। জনসেবা ও দেশপ্রেমী মনোভাব, সর্বোপরি, মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনাকে লালন ও সমুন্নত রাখতে আপনারা উদ্যোগী হবেন। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়েই দেশকে গড়ে তুলবেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *