বাংলাদেশের জন্য রিয়াক্টর প্লান্ট পাঠিয়েছে এটোমম্যাস

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক: জেএসসি এইএম টেকনোলজির ভল্গোদনস্ক শাখা (রোসাটমের যন্ত্র প্রস্তুত কারী শাখা এটোমএনার্গোম্যাস) রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের রিয়াক্টর প্লান্ট পাঠানো শুরু করেছে। বাংলাদেশে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের ভিভিইআর ১২০০ চুল্লির জন্যে চুল্লি পাত্র এবং প্রথম দুইটি স্টীম জেনারেটর পাবে দেশটি।

রিয়াক্টরটি নির্মাণ প্রক্রিয়ায় ৭৬৮ টি অপারেশন এবং ১৪৩ টি কন্ট্রোলিং পয়েন্ট সহ এটিকে নির্মাণ করতে মোট সময় লাগে ২ বছর। এই প্লান্টের বিশেষজ্ঞগণ উপরের ইউনিটের স্ট্যান্ডার্ড কভার যুক্ত হাইড্রলিক টেস্ট সহ চুল্লি পাত্রটির সকল ধরনের পরীক্ষা করেন। এই পরীক্ষা চলাকালীন সময় চুল্লিটির অভ্যন্তরে ২৪.৫ এমপিএ চাপ সৃষ্টি করা হয় যা অপারেটিং চাপের চেয়েও ১.৪ গুন বেশী।

যন্ত্রাংশ প্রস্তুতির শেষ ধাপ হলো আভ্যন্তরীণ যন্ত্রাংশের পরীক্ষামুলক ভাবে সাজানো। নকশা অনুযায়ী কোর ব্যারেল, কোর বাফেল এবং প্রতিরক্ষামূলক টিউব ইউনিটকে চুল্লি পাত্রের অভ্যন্তরে স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশের প্রতিনিধিসহ এই প্লান্টের বিশেষজ্ঞরা যন্ত্রাংশের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এর মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত এই যন্ত্রাংশের জ্যামিতিক পরিমাপ, নকশা অনুযায়ী সারি এবং গুনগত মান নিশ্চিত করা হয়।

রিয়াক্টর ও ষ্টীম জেনারেটর প্রত্যেকটির ওজন ৩৪০ টন ও এদের দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ১২ মিটার ও ১৪ মিটার। এগুলোকে প্রথমে প্লান্টের বিশেষ বার্থে নেয়া হবে এবং সেখান থেকে যন্ত্রাংশগুলোকে জাহাজে করে জলপথে নভোরোসিস্কে নেয়া হবে। সেখান থেকে এগুলো ১৪,০০০ কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে।

জেএসসি এইএম টেকনোলোজির ডিরেক্টর জেনারেল ইগোর কটভ এই জাহাজীকরণের বিষয়ে মতামত দিতে গিয়ে বলেন ‘রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের প্রথম পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, এই কাজে আমাদের বাংলাদেশী সহযোগীদের যেকোন জিজ্ঞাস্য এবং অনুরোধের বিষয়ে আমরা অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চুক্তির নিয়ম অনুযায়ী এই পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের মূল যন্ত্রাংশগুলো ঠিক সময়মত পাঠানো হচ্ছে, যা সম্ভব হয়েছে আমাদের কার্যকর মিথস্ক্রিয়া ও আমাদের উপরে ভরসা রাখার জন্যে, এ কারণে এই চালান বাংলাদেশের জন্যে একটি ধন্যবাদ। এখন পর্যন্ত, এটি এই আয়তনের শেষ চালান। এটি পারমানবিক শিল্পে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সাথে আমাদের প্রথম পদক্ষেপ এবং আমি বিশ্বাস করি আমাদের এই সহযোগীতা যে কোনো প্রকারে বজায় থাকবে।’

রিয়াক্টর প্লান্ট প্রস্তুতি অত্যন্ত উচ্চ প্রযুক্তির একটি কাজ যার দক্ষতা বিশ্বে গুটিকয়েক দেশের আছে। জেএসসি এইম টেকনোলোজি রাশিয়ার একমাত্র কোম্পনী যা পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ষ্টীম জেনারেটিং প্লান্টের সম্পূর্ন অংশ তৈরি করে। এটোমম্যাস বছরে সর্বোচ্চ ৪ সেট যন্ত্রাংশ প্রস্তুত করতে পারে। বাংলাদেশের পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২ টি ইউনিটের জন্য জেএসসি এইম টেকনোলোজি প্রায় ৫০ ধরনের যন্ত্র প্রস্তুত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রেসার ভেসেল, আপার ইউনিট, কোর ব্যাফেল, কোর ব্যারেল, প্রটেকটিভ ইউনিট, ষ্টীম জেনারেটরের একাধিক ইউনিট, রিয়াক্টর কুল্যান্ট পাইপলাইন, রিয়াক্টর কুল্যান্ট পাম্প এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ। সর্বমোট, ৪০০০ টন ওজনের যন্ত্রাংশ পাঠানো হবে।

রিয়াক্টর লম্বা সিলিন্ডার আকৃতির গোলাকার তল বিশিষ্ট, এর অভ্যন্তরে কোর এবং ইন্টার্নাল যন্ত্র থাকে। ড্রাইভ মেকানিজমের সাহায্যে রিয়াক্টরটি কভার দ্বারা সম্পূর্ণ অভেদ্যভাবে আটকানো থাকে, রিয়াক্টরের নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা রড গুলো এর মধ্যে স্থাপন করা হয় এবং নজেলের সাহায্যে তারগুলোকে ইন-কোর ইন্সট্রুমেন্টেশন নেয়া হয়। কভারকে ভেসেলের সাথে স্টাডের সাহায্যে লাগানো হয়। ভেসেলের উপরের অংশে কুল্যান্টকে জরুরি মুহুর্তসহ প্রতিনিয়ত সরবরাহ ও অপসারণ করার জন্য নজেল থাকে।

রাশিয়ান প্রকল্প অনুযায়ী রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নকশা ও নির্মাণ হচ্ছে। এর নকশা ও বাস্তবায়ন করছে রোসাটম রাষ্ট্রীয় কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। এই কেন্দ্রে মোট ২টিইউনিটের প্রত্যেকটিতে ভিভিইআর ১২০০ রিয়াক্টর থাকছে, যার কর্মক্ষমতা থাকে ৬০ বছর এবং আরও ২০ বছর বাড়ানো যায়।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *