নড়াইলে শত বছরের ঐতিহ্য ধেরে রেখেছে কুমারডাঙ্গার মৃৎ শিল্প!!

জাতীয়
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মধুমতী পাড়ের কুমারডাঙ্গা গ্রাম। এ গ্রামের মৃৎ শিল্পের ইতিহাস শত বছরের । এখানকার কুমারদের সুনিপুণ হাতে তৈরি মাটির তৈজসপত্রের চাহিদাও ব্যাপক। সারাদেশে মৃৎ শিল্প বিলীন হতে চললেও নড়াইলে কুমারডাঙ্গা গ্রামের চিত্র ব্যতিক্রম। এ গ্রামের কুমাররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন হরেক রকম মাটির তৈজসপত্র তৈরিতে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাশের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, বাগেরহাট ও খুলনা জেলার হাটবাজারেও বিক্রি হচ্ছে এখানকার তৈরি জিনিসপত্র।
এসব কাজ পুরুষের পাশাপাশি করছেন পরিবারের নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু হয়ে কাজ চলছে গভীর রাত পর্যন্ত। তবে আধুনিকতার আগ্রাসনে এখন এ কাজে তেমন লাভ নেই। পেটের দায়ে এবং বাপ-ঠাকুরদার দীর্ঘ দিনের পেশাকে টিকিয়ে রাখতে এখনও এ কাজকে আকড়ে ধরে আছে তারা।
জানা গেছে, কালের বিবর্তনে মাটির তৈরি হাড়ি-পাতিলসহ অন্যান্য সামগ্রীর চাহিদা কমতে থাকে। তার জায়গা দখল করে নেয় অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিক-মেলামাইন সামগ্রী। এক সময়ের রান্নাঘরের হাড়ি, কড়াই থেকে শুরু করে গৃহস্থালির সকল কাজের চাহিদা মেটানো সেই সব কুমারদের অধিকাংশেরই চাকা ( মাটির সামগ্রী তৈরির যন্ত্র) বন্ধ হয়ে গেলেও লোহাগড়া উপজেলার কুমারডাঙ্গা গ্রামে তা সচল রয়েছে।
এই গ্রামে মোট ৭৮টি পরিবারের মধ্যে কুমার পরিবারের সংখ্যা ৩২। এসব পরিবারের দেড় শতাধিক সদস্য এখনও মাটির তৈরি জিনিসপত্র নিজ হাতে বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালায়। তবে প্লাস্টিকের তৈরি আধুনিক জিনিসপত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কদর কমেছে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের। তাই বেকার হয়ে পড়ছে মাটির কারিগররা।
এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কুমারেরা অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে ফেলেছে। এখন তাদের কেউ ভ্যান-রিকশা চালিয়ে বা কেউ মাটি কাটা দিন মজুরের কাজ করছে। তবে পেটের দায়ে এবং বাপ-ঠাকুরদার দীর্ঘ দিনের পেশাকে টিকিয়ে রাখতে এখনও এ পেশাকে আকড়ে ধরে আছে কুমারডাঙ্গা গ্রামের কুমারেরা।
সরেজমিনে কুমারডাঙ্গা গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, এ গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে দিনরাত ঘুরছে কুমারের চাকা। কেউ মাটিতে পানি মিশিয়ে কাঁদা নরম করছে, কেউ মাটির তৈরি জিনিস রোদে শুকানোর কাজ করছে, কেউ ব্যস্ত এসব পোড়ানোর কাজে। আবার আনেকের মনোযোগ পোড়ানো জিনিসপত্রে রং-তুলির কাজে।
কুমারডাঙ্গা গ্রামের অরবিন্দু পাল জানান, নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই তাদের কাজ শুরু হয়। রোদের তেজ বেশি থাকায় এসময় তাদের কাজ আরও বেশি হয়।অর্চনা পাল বলেন, ত্রখন কাজের খুব চাপ। তাই স্বামীর কাজে তিনি সহযোগিতা করেন।পঞ্চনন পাল অভিযোগ করে বলেন, এ পেশায় এখন আর লাভ নেই। অন্য কোন কাজ পারি না। তাই বাপ-দাদার পেশাকে কোন রকমের আঁকড়ে ধরে আছি মাত্র।
অনীল পাল জানান, নতুন কেউ এ কাজ শিখছে না ,তাই আগামীতে কুমারের চাকা ঘোরোনোর মত কেউ থাকবে না। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে প্লাস্টিক ও সিলভার এসে মাটির তৈরি জিনিসের দাম কমে গেছে।
জেলায় কুমার পরিবার ও তাদের সংখ্যার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে লিপিবদ্ধ নেই। সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কোন পৃষ্ঠপোষকতাও নেই এ শিল্পে। এমনটি চলতে থাকলে অচিরেই সম্পূর্ণ রূপে হারিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে মৃৎ শিল্পের। এজন্য এখনই পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন জেলার সচেতন মহল।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *