কিশোর গ্যাংয়ের দাপটে কাবু মিরপুরবাসী

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক: গ্যাং লিডার হিসাবে নাম আছে এমন কিশোরদের অনেকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। নেই স্থায়ী ঠিকানা। বেশ কয়েকজন রীতিমতো বখাটে বস্তিবাসী। ছিন্নমূল কিশোরদের অনেকে ইতোমধ্যে হাত পাকিয়েছে ছিনতাই-চাঁদাবাজিতে।

পেশাদার অপরাধী হিসাবেও তালিকাভুক্ত অনেকে। কেউ কেউ জমি দখল বা মারামারিতে রীতিমতো ভাড়া খাটে।

রাজনৈতিক পেশিশক্তির ঢাল হিসাবেও এদের ব্যবহার করা হয়। সংগত কারণে এদের আশ্রয়প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন এলাকার প্রভাবশালী কিছু রাজনৈতিক নেতা। এসব কিশোর গ্যাং সদস্যের উৎপাত আর দাপটে মিরপুরবাসীর অনেকের ঘুম হারাম। অনেকে জিম্মি হয়ে আছেন এদের কাছে।

পুলিশের তালিকা, মতামত এবং সরেজমিন অনুসন্ধান বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। তালিকা অনুযায়ী ৭টি থানা এলাকায় কিশোর গ্যাং ২৩টি। এদের সদস্যসংখ্যা পাঁচ শতাধিক। গ্যাং লিডারসহ বেশির ভাগের বয়স ১৮ থেকে ২২ বছর।

পৃষ্ঠপোষক যারা : প্রতিটি গ্যাংয়ের পেছনের মদদদাতা রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা। এছাড়া নাম আছে স্থানীয় দাগি মাস্তানদেরও। পুলিশের তালিকায় পৃষ্ঠপোষক হিসাবে যাদের নাম আছে তারা হলেন-সন্ত্রাসী দাদা রিপন, ১১নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ কিবরিয়া ওরফে পিয়াস, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন তিতু, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের, দারুসসালাম থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুর রহমান, ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি সাইদুর রহমান বাপ্পী, ওয়ার্ড কমিশনার তাহেরের ভাই রায়হান, পল্লবী থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিলন ঢালী, ৯১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের কর্মী ফারুক হোসেন এবং নুর ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সদস্য সুলতান, ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, বিহারি ক্যাম্পের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বন্টু, ৫ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাঈম এবং শাহ আলী থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসেন সেন্টু।

মিরপুর মডেল থানা : কল্যাণপুর এলাকার কিশোর গ্যাং হিসাবে পুলিশের খাতায় তালিকাভুক্ত অপু গ্রুপ। গ্যাং লিডার অপু মাত্র ২২ বছর বয়সেই নাম লিখিয়েছেন সন্ত্রাসীদের খাতায়। অপু গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক সন্ত্রাসী রিপন ওরফে দাদা রিপন। তিনি পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ প্রকাশের অন্যতম সহযোগী। চাঁদাবাজি এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতারণা করে মানুষের কাছ থেকে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয় অপু গ্রুপ।

কল্যাণপুর নতুনবাজার এবং ১১ নম্বর ওয়ার্ডে আধিপত্য রয়েছে আব্বাস গ্রুপের। এর সদস্যরা এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও মাদক ব্যবসায় জড়িত। লিডারের নাম আব্বাস আলী। পিতার নাম খোকন। ঠিকানা পোড়া বস্তির ৭ নম্বর গলি। আব্বাস গ্রুপের সদস্যরা হলেন লিটন ওরফে হোন্ডা চোরা লিটন ওরফে দাঁতভাঙা লিটন, তাজ উদ্দিন ওরফে তাজু, তানজিল, আরিফ ও রাকিব।

পোড়া বস্তি এলাকায় সক্রিয় নাডা ইসমাইল গ্রুপ। লিডারের নাম ইসমাইল ওরফে বাংলা। তার বাবার নাম কামাল। ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং ইভটিজিংয়ে জড়িত নাডা ইসমাইল গ্রুপ। সদস্যসংখ্যা ৮/৯ জন। এর মধ্যে কাওছার ও নূর আলম পুলিশের তালিকাভুক্ত।

৬০ ফিট মসজিদ ও দক্ষিণ পীরেরবাগ এলাকায় সক্রিয় হ্যাপি গ্রুপ। লিডারের নাম আবির হোসেন হ্যাপি। তার বাবার নাম আবুল হোসেন। বড়বাগ পলি ভিটামোড় এলাকায় তার বাসা। হ্যাপি গ্রুপের সদস্যসংখ্যা ২০ জন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন রুবেল, জাকির, আসাদ ও শান্তি গলির বেলাল হোসেনের ছেলে সাগর।

এদের সবাই ছিনতাই ও মাদক ব্যবসায় জড়িত হিসাবে পুলিশের তালিকাভুক্ত। কল্যাণপুর পোড়া বস্তি এলাকায় সক্রিয় বগা হৃদয় গ্রুপ। সদস্যসংখ্যা ৫/৭ জন। হৃদয় ওরফে বগার নাম অনুসারে গ্রুপের নামকরণ হয়েছে। সদস্যরা হলেন নতুন বাজার ৫ নম্বর বস্তির ফালানের ছেলে নীরব, ২নং পোড়া বস্তির বিল্লাল মিয়ার ছেলে ফয়সাল, সেলিমের ছেলে শাওন এবং দাদনের পুত্র নূর নবী।

বগা হৃদয় গ্রুপের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক ১১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ কিবরিয়া ওরফে পিয়াস। মিরপুর কলওয়ালাপাড়া, ধানখেত মোড় এবং আশপাশের এলাকায় সক্রিয় ভাস্কর গ্রুপ। লিডারের নাম ভাস্কর। তিনি ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন তিতুর ভাগিনা। গ্রুপের সদস্যসংখ্যা ১০/১২ জন। এর মধ্যে অয়ন, রাজু, শাকিল, মাসুদ, ফয়সাল ও সজিব উল্লেখযোগ্য। ভাস্কর গ্রুপের শেল্টারদাতা হিসাবে সাবেক কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন তিতুর নাম আছে পুলিশের খাতায়।

কাফরুল থানা : এলাকায় চুরি, ছিনতাই, মাদকসেবন ও বেচাকেনায় জড়িত রবিন গ্রুপ। এছাড়া রাস্তা বন্ধ করে ক্রিকেট খেলার নামে এলাকায় বাড়তি উপদ্রব সৃষ্টি করেন তারা। গ্রুপ লিডার রবিনের বয়স ২২ বছর। তার বাবার নাম আবুল কাশেম। সদস্যরা হলেন গোয়াল বাড়ির বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর ছেলে রাব্বি, মো. আলীর ছেলে জীবন, কুটু মিয়ার ছেলে আকাশ মাহমুদ ওরফে রফিক, লিটনের ছেলে সাগর, মালেকের ছেলে রনি ও গিয়াস উদ্দিনের ছেলে রুদ্র। এছাড়া রয়েছে পারভেজ, যার বাবা অজ্ঞাত।

দারুসসালাম থানা : লাল কুঠি তৃতীয় কলোনি এলাকার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে স্থানীয় কিশোর গ্যাং এলকে ডেভিল বা এলকে তালতলা বয়েজ গ্রুপের হাতে। গ্যাং লিডারের নাম রাব্বি। গ্রুপের সদস্যসংখ্যা ১৫/২০ জন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য লালকুঠি তৃতীয় কলোনির বাসিন্দা জুয়েল ওরফে ব্যাকা জুয়েলের ছেলে অভি, আব্দুল করীমের ছেলে নিশাত, কাজল চৌধুরীর ছেলে শাহরিয়ার মাহমুদ সানাম, দারুসসালাম বি-ব্লকের রহন আলীর ছেলে শাকিল, সোহেলের ছেলে তানিফ খান, বড় মসজিদের পেছন গলির বাসিন্দা এখলাস উদ্দিনের ছেলে পাইটু, রাইয়ান আহম্মেদ রিজন ও রাফসান।

গ্রুপের বেশির ভাগ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে। তারা এলাকায় কাবলি ড্রেস পরে ঘোরেন। পুলিশের তালিকা অনুযায়ী এলকে ডেভিল গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের।

স্থানীয় পটেটো রুবেল গ্রুপের সদস্যরা ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি, বসুপাড়া এবং খালেক সিটি এলাকায় সক্রিয়। গ্রুপ লিডারের নাম শান্তুনুর হোসেন ওরফে রুবেল ওরফে পটেটো। তার বাবার নাম বাবুল মিয়া। তিনি পেশায় গাড়িচালক। গ্রুপের সদস্যসংখ্যা ১০/১৫ জন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, মৃত শহীদ ড্রাইভারের ছেলে জনি ও রকি, লাল কুঠি বসুপাড়ার বাসিন্দা আজহারের ছেলে ইমরান, ফজলুর রহমানের ছেলে মাসুদ রানা, আব্দুস সাত্তারের ছেলে পারভেজ, মোজাম্মেলের ছেলে সাব্বির, সেলিম মিয়ার ছেলে লিটন ওরফে কসাই লিটন, জলিল ড্রাইভারের ছেলে রিফাত, বাবুল হোসেনের ছেলে আল-আমিন এবং মৃত মন্টু মোল্লার ছেলে বিপ্লব।

রুবেল গ্রুপের বেশির ভাগ সদস্য মাদকাসক্ত। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির সামনে পরিত্যক্ত গরুর ফার্মে মাদকসেবন করেন। এ এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত তাদের আনাগোনা থাকে। পুলিশের তালিকায় পৃষ্ঠপোষক হিসাবে দারুসসালাম থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুর রহমান রাসেলের নাম আছে।

অতুল গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ইব্রাহিমনামা, মতিননামা, তিনতলা মসজিদ ও এর আশপাশের এলাকা। গ্রুপ লিডারের নাম শফিকুর ইসলাম ওরফে অতুল। তার বাবার নাম মজিবুর রহমান বাবুল। গ্রুপের সদস্যসংখ্যা ২৫/৩০ জন। বেশির ভাগ সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

তুচ্ছ কারণে এলাকায় মারধর এবং হট্টগোলে জড়িয়ে পড়ে অতুল গ্রুপের সদস্যরা। তাদের অনেকে মাদক ব্যবসায় এবং ছিনতাইয়ে জড়িত। পুলিশের তালিকায় ১৫ জন সদস্যের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন সেন্টু মিয়ার ছেলে শান্ত। তার বিরুদ্ধে দারুসসালাম থানায় এক ডজনেরও বেশি মামলা আছে।

বসুপাড়ার বাসিন্দা ফারুক মিয়ার ছেলে মো. কাউছার। তার বিরুদ্ধে আছে মারামারির মামলা। এফ-ব্লকের ২নং রোডের বাসিন্দা দেলু মিয়ার ছেলে রাকিব, উত্তরপাড়া বাগবাড়ির বাসিন্দা শুকুর আলীর ছেলে সম্রাট, এসকে আনিছ, শাহ আলম, বসুপাড়ার বাসিন্দা সোবহানের ছেলে মিন্টু মিয়া, দেলোয়ার হোসেনের ছেলে রাহিতুল হাসান রিংকু, শেখ তৈয়বুর রহমানের ছেলে রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ, খোকন মিয়ার ছেলে সুমন, বসুপাড়ার মজিবুরের ছেলে আলামিন, ফজলুর ছেলে রনি, অরিন ইবনে রানা ও আহম্মেদ বাদল।

পুলিশের তালিকায় বলা হয়েছে, গ্রুপের সদস্যরা মারামারি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজিতে জড়িত। গ্রুপের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি সাইদুর রহমান ওরফে বাপ্পি এবং ওয়ার্ড কমিশনার তাহেরের ভাই হিসাবে পরিচিত রায়হান।

পল্লবী থানা : পল্লবী এলাকায় ৭টি সক্রিয় কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা করেছে পুলিশ। এর মধ্যে এক নম্বরে আছে আশিক গ্রুপের নাম। লিডার আশিকের নাম অনুসারে গ্রুপের নামকরণ করা হয়। আশিকের বাবার নাম মৃত নাদিম। পুলিশের খাতায় গ্রুপের ১২/১৩ জন সদস্যের নাম আছে। তারা হলেন শামীম, রায়হান, আল-আমিন, দাদু (বর্তমানে নিষ্ক্রিয়), রাব্বি, রনি, মহিন ও সুমন। এলাকার বেশ কয়েকটি জায়গায় দলবদ্ধভাবে আশিক গ্রুপের সদস্যদের আড্ডারত অবস্থায় দেখা যায়। এর মধ্যে তালতলা মোড়, নাভানা আবাসিক ভবনের সামনে ও সবুজ বাংলা আবাসিক গেটের সামনে বিকাল ৫টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত কেউ কেউ অবস্থান করেন। পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী আশিক গ্রুপের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক পল্লবী থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিলন ঢালী।

১১ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লক এবং রামগড় এলাকায় সক্রিয় জল্লা মিলন গ্রুপ। লিডারের নাম বিহারি মিলন। পুলিশের খাতায় গ্রুপের ১০/১২ জন সদস্যের নাম রয়েছে। তারা হলেন রামগড় ক্যাম্পের নাছিমের ছেলে সুমন, হানিফের ছেলে ফয়সাল, ডি-ব্লকের পাভেল, ২৭ নম্বর লাইনের এখলাসের ছেলে সানজু, বেছু মিয়ার ছেলে হায়দার ও রাজু।

এদের বিরুদ্ধে এলাকায় মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, ফিটিং এবং আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। বি-ব্লক, ঈদগাহ মাঠের পশ্চিম পাশে মাদকসেবন ও ছিনতাইয়ে জড়িত পিন্টু-কাল্লু গ্রুপ। তাদের সদস্যসংখ্যা ১৫/২০ জন। তবে গ্রুপ লিডারসহ ৮ জনকে তালিকাভুক্ত করেছে পুলিশ। তারা হলেন বাউনিয়া বাঁধ বি-ব্লকের কাল্লু, ‘ডি’ ব্লকের উজ্জ্বল, সজিব, সাজ্জাদ, শুক্কুর, ‘ই’ ব্লকের চুন্নুর ছেলে জনছু এবং ‘এ’ ব্লকের আলমগীরের ছেলে হাসান। পিন্টু কাল্লু গ্রুপের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক হিসাবে দুজনের নাম আছে। তাদের একজন হলেন ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি খলিলুর রহমান এবং অপরজন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সদস্য সুলতান।

পল্লবী থানা এলাকার ৫ নম্বর গ্রুপ হিসাবে তালিকাভুক্ত মুসা হারুন গ্রুপ। গ্রুপের নেতৃত্বে দেন স্থানীয় সন্ত্রাসী হিসাবে পরিচিত দুই ভাই মুসা ও স্বপন। এ কারণে স্থানীয়দের কাছে গ্রুপের সদস্যরা ভাই গ্রুপ নামেও পরিচিত। পুলিশ ৮/১০ জনকে চিহ্নিত করেছে। এদের মধ্যে মোট ৬ জনের নাম আছে তালিকায়।

এরা হলেন হারুন, মুসা, আসিফ, হোসেন, সোহরাব ও আরিফ। এদের সবার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে। বাউনিয়া বাঁধ, ই-ব্লকে সক্রিয় আরেকটি কিশোর গ্যাংয়ের নাম সোহেল গ্রুপ। গ্যাং লিডার সোহেলের বিরুদ্ধে মাদকসেবন ও মারামারির অভিযোগ রয়েছে। মোট ৫ জন সদস্যের নাম আছে পুলিশের খাতায়।

এরা হলেন শরীফ ওরফে ধাসা শরীফ, রিয়াজ, জুয়েল ও সজিব। এই গ্রুপের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক ৫নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাঈম। ১২ নম্বর সেকশনের বি-ব্লক, বিয়ে বাড়ি কমিউনিটি সেন্টার ও আশপাশের এলাকায় সক্রিয় রকি গ্রুপ। এর নেতৃত্বে রয়েছেন বি-ব্লকের ৪/৬নং রোডের বাসিন্দা শাহজাহানের ছেলে রকি।

এর সদস্য হিসাবে ৮ জনের নাম আছে পুলিশের খাতায়। তারা হলেন মাসুম ওরফে কালা মাসুম, আকাশ, ইউসুফ ওরফে হাড্ডি ইউসুফ, রাজু, শামিম ওরফে কালা শামিম, হৃদয় এবং রিপন ওরফে দাঁতভাঙা রিপন। দিনের বিভিন্ন সময়ে রকি গ্রুপের সদস্যদের এলাকায় শোডাউন দিতে দেখা যায়।

তবে মিরপুর জেনারেল হাসপাতালের সামনে এবং চন্দ্রবিন্দু শপিংমলের আশপাশে তাদের গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান করতে দেখা যায়। পুলিশের তালিকায় রকি গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক হিসাবে ৯১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের দুই কর্মীর নাম আছে। এদের একজন হলেন ফারুক হোসেন এবং অপরজনের নাম নুর ইসলাম। এছাড়া ই-ব্লকে কিশোর গ্যাং হিসাবে পুলিশের তালিকাভুক্ত রোমান্টিক গ্রুপ।

লিডার হলেন কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা রিয়াজের ছেলে ভুলু। তার সহযোগীদের নাম হচ্ছে- ইসমাইলের ছেলে মনু, পারভেজের ছেলে জসিম ওরফে ক্যাডার জসিম, পল্টু বাবা অজ্ঞাত এবং মনজুর হোসেনের ছেলে দেলোয়ার ও গুড্ডু। এদের বিরুদ্ধে থানা পুলিশের কাছে মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। রোমান্টিক গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক হিসাবে বিহারি ক্যাম্পের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বন্টুর নাম আছে পুলিশের খাতায়।

ভাষানটেক থানা : মিরপুর-১৪ নম্বরের কয়েকটি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে বাগানবাড়ি বস্তির সেলিমের ছেলে সোহেল। তার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে সোহেল গ্রুপ। বাগানবাড়ি বস্তি মসজিদের পেছনে গভীর রাতেও তাদের আনাগোনা দেখা যায়। পুলিশ এ গ্রুপের মোট ৫ জনের নাম তালিকাভুক্ত করেছে।

গ্রুপ লিডার সোহেল ছাড়া অন্যরা হলেন বাগানবাড়ি বস্তির মানিকের ছেলে জয়, রবিলালের ছেলে আদ্বিপ, হোসেনের ছেলে শুকুর এবং হারুন ফকিরের ছেলে রাকিব। এছাড়া তালিকাভুক্ত অপর একটি কিশোর গ্যাংয়ের নাম মিছা গ্রুপ। এদের সদস্যসংখ্যা ৫/৭ জন। এদের মধ্যে রাসেল, সুমন ও জুয়েলের নাম আছে পুলিশের খাতায়। গ্রুপের বেশির ভাগ সদস্য ছাত্র। তবে তাদের বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ রয়েছে।

রূপনগর থানা : রুবেল গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে চলন্তিকা ও ট-ব্লকের আশপাশে। গ্রুপ লিডার ডি-ব্লকের বাসিন্দা নসু সরদারের ছেলে রুবেল। অন্য সদস্যদের মধ্যে ইউসুফ কবিরাজের ছেলে ফারুক, হানিফ মাঝির ছেলে মিরাজ, চলন্তিকা বস্তির বাসিন্দা শফিকুল ইসলামের ছেলে নিরব এবং মৃত আবু কালামের ছেলে আকবর।

এদের প্রায় সবার বিরুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও মারামারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কেউ কেউ গার্মেন্টের ঝুট ব্যবসা সংক্রান্ত ঝামেলায় জড়িত। রুবেল গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক জনৈক আবুল হোসেনের ছেলে সোহেল রানা। তিনি ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের কর্মী। এছাড়া চলন্তিকা বস্তি এলাকায় ইয়াসিন গ্রুপ নামে আরও একটি কিশোর গ্যাংয়ের নাম তালিকাভুক্ত করেছে পুলিশ। এদের সদস্যসংখ্যা ১০/১২ জন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সজল, সাইফুল, নুরনবী, আল হাসান ও কাওছার।

রূপনগর আবাসিক এলাকায় সক্রিয় ইমন গ্রুপ। লিডারের নাম ইমন। গ্রুপের ৭ সদস্যের নাম আছে পুলিশের খাতায়। তারা হলেন সাইফুল ইসলাম লিমন, সেলিম ওরফে ডন সেলিম, তায়েব, তোতা, তুষার ও তপু। তাদের প্রায় সবার বিরুদ্ধে মারামারি, মাদক ব্যবসা এবং ফিটিংবাজির অভিযোগ রয়েছে। গ্রুপের বড় ভাই বা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক হলেন ৬নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কর্মী সুমন মোল্লা।

শাহ আলী থানা : গুদারাঘাট, কাজী ফরী স্কুল, বাজার ও আশপাশের এলাকায় সক্রিয় কিশোর গ্যাংয়ের নাম জুয়েল গ্রুপ। লিডার ইরফান ওরফে হিন্দু জুয়েল। গ্রুপের ১৫/২০ জন সদস্যের মধ্যে ৮ জনের নাম তালিকাভুক্ত করেছে পুলিশ। তারা হলেন বিপুল, বাবু ওরফে রোহিঙ্গা বাবু, আরিফ, রেজা, মেহেদী, মিন্টু ও মনির।

তাদের মধ্যে বাবু ওরফে রোহিঙ্গা বাবু শাহ আলী থানা ছিন্নমূল হকার্স লীগের সভাপতি। তার বিরুদ্ধে ফুটপাতে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু জুয়েল গ্রুপের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক।

বক্তব্য : শাহ মোহাম্মদ কিবরিয়া পিয়াসের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন তিতু মঙ্গলবার যুগান্তরকে জানান, ভাস্কর তার ভাগনে। কিন্তু সে কিশোর নয়। তার বয়স ৪০-এর ওপরে। তবে কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষক হিসাবে তার নাম কেন তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, এ সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতেও রাজি নন।

১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদেরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে তাকে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও তিনি কথা বলেননি। তবে দারুসসালাম থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুর রহমান রাসেল জানান, তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তার বাবা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ১৪ বছর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। বরং তিনি এলাকায় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসার বিরোধিতা করে আসছেন। এ কারণে কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার নাম পৃষ্ঠপোষক হিসাবে দিয়ে থাকতে পারে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *