‘তারেক রহমানসহ পলাতকদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে’

জাতীয়

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানসহ পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)।

পুলিশ সদর দফতরের এনসিবি’র এআইজি মহিউল ইসলাম বলেন, ‘তারেক রহমানসহ পলাতক আসামীদের দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকরের জন্য সম্ভাব্য দেশগুলোর সঙ্গে এনসিবি ঢাকা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। এছাড়া ইন্টারপোলের রেড নোটিশে নাম ওঠাতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে।’

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে নজিরবিহীন ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ ২৪ জন নিহত হন। এর মধ্যে রয়েছেন প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমান। আহত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং কয়েক’শ নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষ।

সেই রক্তস্নাত ভয়াবহ বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট কাল শনিবার। বর্বরোচিত ও বীভৎস হত্যাযজ্ঞের দিন। মৃত্যু ও রক্তস্রোতের নারকীয় নজিরবিহীন গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকী। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে এই নারকীয় হত্যাকান্ড চালানো হয় ২০০৪ সালের এই দিনে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ ওইদিন মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। সেদিন যদি ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড সমাবেশের জন্য ব্যবহৃত ট্রাকে বিস্ফোরিত হতো তবে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কোন সিনিয়র নেতাই প্রাণে রক্ষা পেতেন না। আর এটিই ছিল ঘাতকচক্রের মূল পরিকল্পনা।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। ওই দিনটি ছিল শনিবার। বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের শান্তি প্রিয় সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। হাজার হাজার মানুষের সমাগম ছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের চতুর্দিকে। সমাবেশ শেষে একটি সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল হওয়ার কথা। তাই মঞ্চ নির্মাণ না করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাককে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

বুলেটপ্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জে চেপে বিকেল ৫টার একটু আগে সমাবেশস্থলে পৌঁছান শেখ হাসিনা। সমাবেশে অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যের পর শেখ হাসিনা বক্তব্য দিতে শুরু করেন। সময় তখন বিকেল ৫টা ২২ মিনিট। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে শেখ হাসিনার বক্তৃতা শেষের মুহূর্তেই শুরু হলো নারকীয় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে লাগল একের পর এক যুদ্ধে ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড। আর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ মুহূর্তেই পরিণত হলো মৃত্যুপুরীতে।

শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় ঘাতকরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গ্রেনেড হামলার বীভৎসতায় মুহূর্তেই রক্ত-মাংসের স্তুপে পরিণত হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সমাবেশস্থল। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ট্রাকে অবস্থানরত নেতৃবৃন্দ মূহুর্তেই মানবঢাল রচনা করে রক্ষা করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে। ওইদিন হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

জঘন্যতম ওই ঘটনায় আনা মামলায় সব পক্ষকে বিদ্যমান সকল আইনি সুবিধা দিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ রায় ঘোষণা করে। বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত মামলা এখন হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

বিচারিক আদালতের রায়ে, বিএনপি-জামায়াত জোট আমলের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন দুই শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদন্ড দেন বিচারিক আদালত। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪ জন জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) সদস্য। এছাড়া রায়ে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত  চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও অপর ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডসহ অর্থদন্ড দেয়া হয়।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *