নতুন চাপে জামায়াত

জাতীয়

স্বদেশ বাণী ডেস্ক:  দলের সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক নেতা গ্রেফতারের পর নতুন চাপে পড়েছে জামায়াতে ইসলামী। গ্রেফতারকৃত নেতারা দলে সবচেয়ে সক্রিয় ছিলেন। একই সঙ্গে দলটির কেন্দ্রসহ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর এদের প্রভাবই বেশি। গ্রেফতারের কারণে এসব নেতার অনুপস্থিতি এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এটা কাটাতে মঙ্গলবার কয়েক দফা বৈঠক করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা। ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব দেওয়া হয় মাওলানা এটিএম মা’ছুমকে।

এ পরিস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতের নতুন করে দূরত্ব দেখা দিয়েছে। জিয়াউর রহমানকে নিয়ে সাম্প্রতিক ‘বিতর্ক’ ইস্যুতে জামায়াতের দেওয়া এক বিবৃতিতে তার নাম (জিয়াউর রহমান) উল্লেখ না করায় বিএনপি নেতারা চরম ক্ষুব্ধ হন। যে কারণে সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক নেতাকে গ্রেফতারের পর বিএনপি বিবৃতি দিলেও সেখানে জামায়াতের নাম উল্লেখ করেনি।

জামায়াত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন করে এই গ্রেফতারের সঙ্গে আগামী নির্বাচনের সম্পর্ক আছে। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয় নিয়ে সামনে রাজনৈতিক মেরুকরণের সম্ভাবনা আছে। এসব নিয়ে জামায়াত গোপনে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এরই মধ্যে গ্রেফতার তাদের জন্য নতুন ধাক্কা। হঠাৎ গ্রেফতারের পর জামায়াতের ভেতরে-বাইরেও এমন আলোচনা আছে। ইসি পুনর্গঠন ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে জামায়াতকে বাগে আনতে ভেতরে ভেতরে ভিন্ন চেষ্টাও হতে পারে।

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চলছে। সরকার দীর্ঘ এক যুগ ধরে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছে জামায়াতে ইসলামী। গায়ের জোরে বেশি দিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। অতীতে রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের কোনো আন্দোলন দমন করা যায়নি। এখনো যাবে না।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জামায়াত।সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, নির্বাচনের দাবি অব্যাহত থাকবে। একটি সুদৃঢ় ও কার্যকর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য তারা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন।’ এরপর থেকে সামাজিক কার্যক্রমে জোর দেয় দলটির নেতারা। দলের আমির দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সহায়তামূলক কার্যক্রমে অংশ নেন। সেক্রেটারি জেনারেলও বিভিন্ন জেলা সফর করেন। নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও জামায়াতের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থামেনি। সামাজিক কর্মকাণ্ডের আড়ালে তারা গোপনে সারা দেশে সাংগঠনিক কাজ করে। করোনার মধ্যে তাদের সিদ্ধান্তে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বেশ কয়েকটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেয় দলটি। গত জানুয়ারির পর থেকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আরও জোরদার করে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির আলোচনার উদ্যোগের সঙ্গেও একমত ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল। এরই অংশ হিসাবে গত মাসে রাজধানীর উত্তরায় বিএনপির সিনিয়র এক নেতার সঙ্গে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলসহ কয়েকজন নেতার বৈঠকও হয়েছে।

শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা গ্রেফতারের পর অন্যদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেন্দ্র থেকে নেতাদের সতর্ক থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ এক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, দলের মধ্যে কোনো ভিন্নমত নেই। সিনিয়র নেতাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তবে এটা ঠিক যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা অনেক সক্রিয় নেতা। দলে তাদের শক্ত অবস্থান রয়েছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে এর একটা প্রভাব পড়েছে-এটাই স্বাভাবিক।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, গ্রেফতারের ঘটনা সরকারের বাড়াবাড়ি ছাড়া কিছু নয়। এটা একটি অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এসব করে লাভ হবে না।

জিয়াউর রহমান ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ফের দূরত্ব : এদিকে জিয়াউর রহমান ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নতুন করে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়ে সাম্প্রতিক ‘বিতর্কের’ প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার জামায়াত বিবৃতি দেয়। এতে মহান ব্যক্তিদের নিয়ে বিতর্ক না করার আহ্বান জানালেও সেখানে জিয়াউর রহমানের নাম উল্লেখ করেনি। এ নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয়। এর মধ্যেই সোমবার জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ ৯ নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পরদিন মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবৃতি দিলেও সেখানে জামায়াতের নাম উল্লেখ করেনি। দেশব্যাপী বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেন বিএনপি মহাসচিব। এতে তিনি বলেন, সম্প্রতি সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। সোমবারও বিরোধী দলের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।

জামায়াত বিবৃতিতে জিয়াউর রহমানের নাম উল্লেখ না করায় বিএনপির হাইকমান্ডসহ অধিকাংশ নেতাই ক্ষুব্ধ। আগে থেকেই বিএনপির বড় একটি অংশ জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের পরামর্শ দিলেও বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে। এখন এই ইস্যুতে জামায়াত ছাড়ার বিষয়ে ওই অংশের নেতাদের চাপ বাড়ছে।

সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ারসহ ৯ নেতাকর্মী ৪ দিনের রিমান্ডে : জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ ৯ জনকে ৪ দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম মাহমুদা আক্তারের আদালতে হাজির করে পুলিশ ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করে। শুনানি শেষে আদালত তাদের এ আদেশ দেন। রিমান্ডে নেওয়া অপর আসামিরা হলেন-জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, রফিকুল ইসলাম খান, নির্বাহী পরিষদের সদস্য ইজ্জত উল্লাহ, মোবারক হোসেন, আব্দুর রব, ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত এবং জামায়াতের কর্মী মনিরুল ইসলাম ও আবুল কালাম। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার এসআই মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট থানায় দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আসামিদের রিমান্ডের জন্য আদালতে হাজির করেন। রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরকার উৎখাতের জন্য গোপন ষড়যন্ত্রের বিষয়ে তথ্য পেতে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। অভিযানকালে রুম তল্লাশি করে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ সম্পাদিত উগ্র মতবাদের বিভিন্ন বই-পুস্তক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার রেজিস্টার, অন্যান্য কাগজপত্র, একটি ল্যাপটপ ও ৯টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন। আসামি পক্ষে অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক, শিশির মনির, সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহসভাপতি এমডি গোলাম রহমান ভূঁইয়াসহ কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ড আবেদন বাতিলসহ জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *