জাপানি মায়ের বিব্রতকর ভিডিও সরানোর নির্দেশ

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: জাপানি মা নাকানো এরিকো ও তার দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে অনলাইনে প্রচারিত অবমাননাকর সব ভিডিও অপসারণে পদক্ষপ নিতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি এসব ভিডিও নির্মাতা এবং আপলোডকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ নির্দেশ দেন।

এরিকোর করা এক আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এ আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া জাপানি মা নাকানো এরিকো ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তার মেয়েদের সঙ্গে রাতে থাকতে এবং তাদের নিয়ে বাসার বাইরে ঘুরতে ও মার্কেটে যেতে পারবেন বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ প্রসঙ্গে আদালত বলেছেন, মা শুধু ৯, ১১, ১৩ ও ১৫ সেপ্টেম্বর- এ ৪ দিন রাতে মেয়েদের সঙ্গে থাকতে পারবেন। অন্য সময় মা ও বাবা উভয়েই থাকতে পারবেন ওই বাসায়। মা ঘোরাঘুরির সময় যাতে শিশু দুটিকে জাপানে নিয়ে যেতে না পারেন, তা মায়ের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনিরকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। তবে পিতাও মেয়েদের নিয়ে বাইরে ঘুরতে চাইলে তা করতে পারবেন। ওই বাসার ভেতরে স্থাপিত সিসি ক্যামেরা সরিয়ে নেবেন বলে আদালতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পিতা ইমরান শরীফের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফৌজিয়া করিম ফিরোজ।

শুনানিতে এরিকোর আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির আদালতকে বলেন, এরিকো দুই মেয়ের সঙ্গে রাতে থাকতে চান। এছাড়া কেনাকাটা ও বিনোদনমূলক কাজে অংশ নেওয়ার জন্য শিশুদের সঙ্গে নিয়ে ইউনিমার্ট যেতে চান। জাপানি মাকে নিয়ে আপলোড হওয়া ভিডিও কনটেন্টের বিষয়ে আইনজীবী বলেন, আরও একটি বিষয় বলতে চাই, তবে লজ্জা লাগছে। এ সময় তিনি আবেদনের পৃষ্ঠা উল্লেখ করে ভিডিও লিংক দেওয়া আছে বলে জানান।

শিশির মনির বলেন, সেখানে কমপক্ষে ১৭টি লিংক রয়েছে। যেখানে জাপানি নারীকে নিয়ে বিভিন্ন চটকদার ভিডিও ও নারী উপস্থাপকরা উপস্থাপনা করেছেন। কোনোটিতে দুই মিলিয়ন, চার মিলিয়ন, ছয় মিলিয়ন এমনকি সাত মিলিয়ন ভিউয়ার (দর্শক)। যেখানে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ দেখেছেন এই ভিডিওগুলো। এগুলো অপসারণের নির্দেশনা চাই। ৩১ আগস্ট একই হাইকোর্ট বেঞ্চ সেই দুই মেয়ে শিশুকে আপাতত আগামী ১৫ দিন জাপানি মা ও বাংলাদেশি পিতার সঙ্গেই গুলশান এক নম্বরে চার কক্ষের একটি ভাড়া বাসায় থাকার নির্দেশনা দেন। এরপর শিশু দুটিকে তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে ওই বাসায় স্থানান্তর করা হয়। বাসায় যাতে মা-বাবার মধ্যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য বিষয়টি মনিটরিং করতে ঢাকার সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ ছাড়া ঢাকা পুলিশ কমিশনার ও সিআইডিকে সার্বিক নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। এ অবস্থায় এরিকো মেয়েদের সঙ্গে রাতে থাকা, তাদের নিয়ে বিভিন্ন বিনোদনমূলক স্থানে ঘোরার অনুমতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আদেশ চেয়ে পৃথক আবেদন করেন।

জানা যায়, জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক ইমরান শরীফের ১৩ বছরের সংসারে বিরোধের জেরে ১৮ জানুয়ারি বিয়ে বিচ্ছেদের জন্য জাপানি আদালতে মামলা করেন এরিকো। এরপর সন্তানদের নিজের জিম্মায় রাখতে টোকিওর পারিবারিক আদালতে পৃথক একটি মামলা করেন এরিকো। টোকিওর আদালত ৩১ মে এরিকোর অনুকূলে মেয়ে দুটিকে হস্তান্তরের আদেশ দেন।

এদিকে, মেয়ে দুটির বাংলাদেশি পাসপোর্ট বানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন পিতা ইমরান শরীফ। দেশে ফিরে সন্তানদের নিজের কাছে রাখতে ঢাকার আদালতে মামলা করেন। ঢাকার আদালত তার অনুকূলে আদেশ দেন। এ ছাড়া সন্তান দুটিকে ঢাকায় কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন তিনি। এ অবস্থায় ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলংকা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর বাংলাদেশের হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *