ভুয়া মামলা থেকে মুক্তি চান ভুক্তভোগীরা

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক:  রাজারবাগ দরবার শরিফের পির সিন্ডিকেটের মিথ্যা ও সাজানো মামলা থেকে মুক্তি চান ভুক্তভোগীরা। এ ব্যাপারে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন তারা।

এ সময় সিন্ডিকেটের করা ৪৯ মামলার আসামি একরামুল আহসান কাঞ্চন বলেন, মামলাগুলো সম্পূর্ণ হয়রানিমূলক। ভাড়াটে বাদী দিয়ে করা এসব মামলায় আসামি চিনে না বাদীকে, বাদী চেনে না আসামিকে। মাসের ১৫ দিনই আমাকে জেলায় জেলায় গিয়ে বিভিন্ন মামলায় হাজিরা দিতে হয়। কক্সবাজারের কুতুবদিয়া থেকে আসা শারীরিক প্রতিবন্ধী জিন্নাত আলী বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে আমার জমি দখল করে রেখেছে পিরের লোকেরা। আমি ওই মামলা থেকে পরিত্রাণ চাই। হয়রানিমূলক এসব মামলা থেকে মুক্তি পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।

এদিকে পির চক্রের করা মিথ্যা মামলার বিষয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সম্প্রতি হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজারবাগ দরবার শরিফের পির দিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে হয়রানিমূলক মামলার সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ওই প্রতিবেদন উষ্মা প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেন, পির সাহেবের কাণ্ড দেখেন! একটা পিরের সিন্ডিকেট কীভাবে ধর্মের দোহাই দিয়ে নিরীহ মানুষকে নির্যাতন করে। নিরীহ মানুষকে কীভাবে হয়রানি করছে। জায়গা জমি দখলের জন্য পির সাহেবরা অনুসারী-মুরিদ দিয়ে কী করে দেখেন! যেখানে একজন মানুষকে একটা মামলা দিলেই জীবন শেষ হয়ে যায়, সেখানে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এত মামলা! এটা তো সিরিয়াস ব্যাপার।’ ১২ সেপ্টেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

জানা যায়, রাজধানীর শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, মানব পাচারসহ অন্যান্য অভিযোগে ৪৯ মামলা করে পির সিন্ডিকেট। অপরাধ না করেও এসব মিথ্যা মামলার আসামি হওয়া থেকে বাঁচতে তিনি হাইকোর্টের দারস্থ হন। তার করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে মামলার বাদীদের খুঁজে বের করতে ১৪ জুন সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ সেপ্টেম্বর সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার রতন কৃষ্ণনাথ ৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়- রিট আবেদনকারীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৪৯ মামলা ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় করা হয়েছে। এর মধ্যে জিআর মামলা ২৩ এবং সিআর মামলা ২৬টি। ইতোমধ্যে জিআর ১৫ মামলা এবং সিআর ২০টি মামলায় আবেদনকারী আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন। বর্তমানে ১৪টি মামলা বিচারাধীন। রিট পিটিশনে পক্ষভুক্ত ২০ ব্যক্তি আদালতে বাদীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা করেছেন। তাদের ছাড়াও আরও একাধিক ব্যক্তির তথ্য পাওয়া গেছে, যারা আবেদনকারীর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক একাধিক মামলার বাদী ও সাক্ষীর ভূমিকা পালন করেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আবেদনকারীর বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো সম্পর্কে প্রকাশ্য ও গোপনে অনুসন্ধান করে জানা যায়, অধিকাংশ মামলার বাদী, সাক্ষী, ভুক্তভোগীরা কোনো না কোনোভাবে রাজারবাগ দরবার শরিফ এবং ওই দরবার শরিফের পীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দরবার শরিফের পীর দিল্লুুর রহমান তার মুরিদ ও অনুসারীদের দিয়ে মামলার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন প্রকার হয়রানির বিষয়ে ২০২০ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তদন্ত পরিচালনা করে বলেও ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।

মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রাজারবাগ দরবার শরিফের পির দিল্লুর রহমান ও তার অনুসারীরা তাদের দরবার শরিফের নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্য নিরীহ জনসাধারণের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা করে আসছে। ওই প্রতিবেদনে একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে রাজারবাগ দরবার শরিফের পির সিন্ডিকেটের করা হয়রানিমূলক মামলার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দণ্ডবিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলা করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কেউ যদি নিজের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা আদালতে মিথ্যা প্রমাণ করতে পারেন তাহলে বাদীর বিরুদ্ধে ওই ধারায় মামলা করা যায়। আর ফৌজদারি কার্যবিধি ২৫০ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন আদালত।

এ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, আদালতে মামলা করার সময় বাদীকে এফিডেভিট করতে হয়। সেখানে যদি কেউ ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে, তাহলে সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আনা যায়। এতে যদি কোনো আইনজীবীও জড়িত থাকে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *