টেক্সটাইলে গ্যাসের তীব্র সংকট

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: টেক্সটাইল শিল্পে গ্যাসের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে দিনে ১৩ ঘণ্টার বেশি গ্যাসের চাপ থাকে না। মেশিনের উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ হচ্ছে।

গ্যাসের চাপ ক্রমাগত ওঠানামার কারণে একদিকে দামি দামি মেশিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে শ্রমিকদের বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে পুরো রপ্তানি খাত বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) পক্ষ থেকে গ্যাস সংকটের এ ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিটিএমএ-এর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।

লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ আলী বলেন, গ্যাসই টেক্সটাইল শিল্প তথা স্পিনিং, উইভিং, ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং মিলের মূল জ্বালানি। সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ, সাভার, ধামরাই, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি ১ দশমিক ৫০ পিএসআইতে নেমে গেছে। ফলে মিলগুলোয় স্থাপিত মেশিন ক্ষমতার ৭০ শতাংশ বন্ধ রেখে চালু রাখতে হচ্ছে। তিনি বলেন, শ্রমবাজার এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর ভর করে দেশে প্রাইমারি টেক্সটাইল শিল্প গড়ে উঠেছে। বর্তমানে রপ্তানিতে টেক্সটাইল শিল্পের অবদান ২৩ বিলিয়ন ডলার। আজকের গার্মেন্ট খাতের জয়জয়কারের পেছনে টেক্সটাইল শিল্পের অবদান অনেক। কিন্তু গ্যাসের চাপ না থাকায় এ শিল্প অনেক দুরবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে পুরো রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খোকন বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। এ সময়ে গ্যাসের বিল বা জরিমানা মওকুফ করা হয়নি। লোকসান সত্ত্বেও শিল্প মালিকদের সারচার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে। তারপরও মালিকরা আশায় বুক বেঁধেছিল, গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু তিতাস বারবার অঙ্গীকার করলেও চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ দিতে পারেনি। কারণ জানতে চাইলে বারবার একই জবাব দেয়-পাইপলাইন সংস্কারের কাজ চলছে।

তিনি বলেন, এখন মিল মালিকরা গ্যাসের বদলে বাতাসের বিল দিচ্ছে। যেসব কারখানার ইভিসি মিটার নেই, সেসব কারখানা মালিকরা চরম বেকায়দায় আছেন। খোকন বলেন, এলএনজির মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে গত ৫ বছরে ২০০ শতাংশ গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। শিল্প মালিকরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের আশায় সেটা মেনে নিয়েছেন। নিরবচ্ছিন্ন তো দূরের কথা, গ্যাসের চাপই থাকছে না।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা প্রণোদনা চাই না, গ্যাস চাই। আপৎকালীন সার কারখানার গ্যাস শিল্পে দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি জাতীয় গ্রিডে এলএনজি গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতের উদ্যোগ নিতে হবে। এলএনজির পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু শিল্প তার সুফল ভোগ করতে পারছে না। অতি দ্রুত জাতীয় গ্রিডে এলএনজির মাধ্যমে গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে টেক্সটাইল শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন দেশ আবার সেলাই শিল্পে পরিণত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি ফজলুল হক, পরিচালক রাজিব হায়দার, মোশাররফ হোসেন, মনির হোসেন, আজিজুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *