শুভ জন্মদিন, প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক: দেশের দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতা তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান। আওয়ামী লীগের সভাপতি তথা বাংলাদেশের কাণ্ডারি তিনি। নানান সংকট আর চড়াই-উতরাই পেরিয়ে জীবনের চুয়াত্তর বছর পাড়ি দিয়ে পচাত্তরে পা রাখলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুভ জন্মদিন, প্রধানমন্ত্রী।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেওয়া শেখ হাসিনা ছাত্রজীবন থেকেইপ্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ইডেন কলেজের নির্বাচিত সহ-সভাপতি(ভিপি) ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক জীবনে তিনি চারবার প্রধানমন্ত্রী এবং তিনবার জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাপশি তিনি ৪১ বছর ধরে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করে আসছেন। তার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ ডিজিটালাইজেশন এবং উন্নয়নশীল ও নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে, এগিয়ে যাচ্ছে উন্নত সমৃদ্ধ দেশের পথে।

দীর্ঘ রাজনৈতি পথ পরিক্রমায় শেখ হাসিনাকে বার বার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। বোমা, গুলি, গ্রেনেড তাকে বার বার তাড়িত করেছে। কারাভোগও করতে হয়েছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শেখ হাসিনাকে কখনও সামরিক স্বৈরশাসন, কখনও সাম্প্রদায়িকতা আবার কখনও সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে,যা এখনও অব্যাহত আছে। পাশাপাশি দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে এবারও তিনি জাতিসংঘে পুরস্কৃত হয়েছেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জীবনের দীর্ঘ সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই জেলখানায় বাবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও যোগাযোগের সময় অনেক রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সার্বিক খোঁজ-খবর বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা পৌঁছে দিয়েছেন দলের নেতাদের কাছে। এভাবেই শুরু হয় তার রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা।

শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে ৬ দফা ও পরে ১১ দফা আন্দোলন এবং ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী দেশি-বিদেশি চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারেহত্যা করে। তখন শেখ হাসিনা ও ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নির্বাসিত অবস্থায়ই শেখ হাসিনার ওপর দায়িত্ব আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের। তার সফল দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলেই আওয়ামী লীগ চার চারবার রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছে। বর্তমানে টানা তিনবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে এবং তিনিও টানা তিনবারসহ মোট চারবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশকে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গীপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফ্রন্ট থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। ১৯৬৫ সালে শেখ হাসিনা আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ঢাকার বকশি বাজারের ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কারাবন্দি বাবা বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে বিশিষ্ট  পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতক চক্রের হাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার সময় শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা বেলজিয়াম অবস্থান করছিলেন। এরপর সেখান থেকে তিনি জার্মানি আসেন। পরে জার্মানি থেকে ভারতে এসে নির্বাসিত জীবনযাপন করতে থাকেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি ভারত থেকে দেশে ফেরেন। দেশে ফেরার আগেই ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে শুরু হয় শেখ হাসিনার আরেক চ্যালেঞ্জিং জীবন। অনেক চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে তাকে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে।

এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বার বার তিনি শত্রুর আক্রমণের শিকার হন। তার ওপরে বিভিন্ন সময় গুলি, বোমা ও গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তাকে হত্যার জন্য ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি মিথ্যা মামলায় কারাভোগ করেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা হয়ে উঠেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপরিচালনায় সফলতার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে নানা পুরস্কার ও সম্মানসূচক ডিগ্রিতে ভুষিত হন শেখ হাসিনা। বিভিন্ন দেশের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন তিনি। এ বছর তিনি এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার পেয়েছেন। জাতিসংঘ সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউসনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) শেখ হাসিনাকে এ পুরস্কার দেয়। দারিদ্র্য দুরিকরণ, বিশ্বের সুরক্ষা এবং সবার জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিতে পদক্ষেপ গ্রহণের সার্বজনীন আহ্বানে সারা দিয়ে বাংলাদেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পুরস্কার পান।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি গত ২০১৯ জাতিসংঘে মর্যাদাপূর্ণ ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার পেয়েছেন এবং তারুণ্যের দক্ষতা উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা(ইউনিসেফ) শেখ হাসিনাকে ’চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’ সম্মাননা দেয়। ২০১৫ সালে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য’ এ ভুষিত হনতিনি।

রাজনৈতিক কর্মব্যস্ত জীবনের মধ্যেও শিল্প সংস্কৃতি ও সাহিত্যঅন্তপ্রাণ শেখ হাসিনা লেখালেখিও করেন। তাঁর লেখা এবং সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। প্রকাশিত অন্যতম বইগুলো হচ্ছে- শেখ মুজিব আমার পিতা, সাদা কালো, ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, দারিদ্র্য দূরীকরণ, আমাদের ছোট রাসেল সোনা, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম, সামরিকতন্ত্র বনাম গনতন্ত্র, আর্ন্তজাতিক সর্ম্পক উন্নয়ন, বিপন্ন গনতন্ত্র, সহেনা মানবতার অবমাননা, আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি, সবুজ মাঠ পেরিয়ে ইত্যাদি।

এ বছর জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। জাতিসংঘের বার্ষিক সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। আওয়ামী লীগও এর সহযোগী অঙ্গ সংগঠনগুলো নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উদযাপন করছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *