শৈত্য প্রবাহ আসবে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক:  সারাদেশে দিনে-রাতে তাপমাত্রা কমা-বাড়ার মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত শৈত্য প্রবাহ হতে পারে।

চলতি নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে পাওয়া যাচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। গত কয়েকদিন ধরে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ওঠানামা করায় প্রকৃতিই বলে দিচ্ছে শীতের আগাম বার্তার কথা।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত দু’বছরের তুলনায় এবছর আগেভাগেই শীত পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেইসঙ্গে বাড়তে পারে শীতের তীব্রতাও।

 

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেশে সাধারণত মৃদু ,মাঝারী ও তীব্র-এই তিন ধরনের শৈত্য প্রবাহের প্রবণতা রয়েছে। চলতি নভেম্বর মাসে এ ধরনের কোনো শৈত্য প্রবাহের সম্ভাবনা নেই। তবে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত শৈত্য প্রবাহ হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. আজিজুর রহমান জানান, ‘এ বছর অন্যবারের তুলনায় আগেভাগেই শীত আসবে। তবে অস্বাভাবিক রকম শীত আগেও পড়েনি এবারো পড়বে না। বিগত দু’বছরের তুলনায় এবারে শীত মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে (শীতের মৌসুম বলতে নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস বোঝায়) আগের বছরগুলোর তুলনায়  শীতের প্রভাব বেশি থাকবে।’

প্রতিবছর দেশের হিমালয় অঞ্চলীয় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শীতের প্রভাব বেশি অনুভূত হয়-এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব অঞ্চলে শীত-মৌসুমের শুরু থেকেই শীতের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। আবার অবকাঠামোগত উন্নয়ন,জনসংখ্যার ঘনত্ব ও দালান-কোঠার জন্য দেশের শহরাঞ্চলের শীতের প্রবাহমানতা বেশি টের পাওয়া যায় না। অপরদিকে গাছপালা বেষ্টিত বিভাগ ও জেলা শহরগুলোতেও শীতের আমেজ বেশি পাওয়া যায়।

আজিজুর রহমান জানান, শহর বা আরবান এরিয়ায় অবকাঠামোগত ও জনসংখ্যার কারণে শীতের তাপমাত্রা কম। গ্রামঞ্চলে সবুজ বনায়ন বেশি থাকে, সেই অঞ্চলে শীতের প্রভাবও তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। এটা স্বাভাবিক অবস্থা। এসব অঞ্চলে প্রকৃতির ভারসাম্য যেমন রক্ষা পায়, তেমনি বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট নানা দুর্যোগ থেকেও রক্ষা করে এই ভারসাম্য।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের জলবায়ুর ধরণ অনুযায়ী উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শীতের প্রভাব বেশি অনুভূত হয়। হিমালয়ের সাথে সংযুক্ত অঞ্চল বলেই এটা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের উত্তরে হলো হিমালয়। আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। ঘূর্ণিঝড় আসে বঙ্গোপসাগর থেকে। আর শীতের প্রভাবটা আসে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে।’

আজিজুর রহমান আরো বলেন, “চলতি নভেম্বরের শেষের দিকে তাপমাত্রা হ্রাস পাবার প্রবণতা রয়েছে, সেই সঙ্গে শীতের প্রবণতাও বাড়বে। অপরদিকে আগামী ডিসেম্বরের শেষের দিকে দেশের উত্তর,উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ১ থেকে ২টি মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং মাঝারী (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।”

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, শীতকাল মূলত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসেই শুরু হবে। নভেম্বরের শেষে তাপমাত্রা কমার প্রবণতা হ্রাস পাবে। নভেম্বরের শুরু থেকে প্রকৃতিতে ঠান্ডা বাতাসের আমেজ শুরু হলেও শীত অনুভূত হয় নভেম্বরের শেষের দিকে।

তিনি জানান, গত কয়েকদিনে সারাদেশে বৃষ্টিপাতের কারণে আবহাওয়ায় একটা হিম বাতাসের অনুভূতি পেলেও এটা শীতের পূর্বাভাস নয়।

তিনি আরো বলেন, নভেম্বর মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদী অববাহিকায় ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারী ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পেলেও স্বাভাবিক থাকবে গড় তাপমাত্রা। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১/২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে ১টি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এ মাসের শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারী ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। দেশের প্রধান নদ ও নদীতে স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এবং নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারী অথবা ঘন কুয়াশা এবং অন্যস্থানে হালকা বা মাঝারী ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।

তিনি বলেন, আবহাওয়ার উপাত্ত, উর্দ্ধাকাশের আবহাওয়া বিন্যাস, বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন স্তরের বিশ্লেষিত আবহাওয়া মানচিত্র, জলবায়ু মডেল, ক্লাইমেট প্রেডিক্টটেবিলিটি টুল (সিপিটি), ইসিএমডব্লিউএফ, জেএমএ, এপিসিসি-কোরিয়া, আরআইএমইএস, আইআরআই, সি৩এস এবং বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা অনুমোদিত গ্লোবাল প্রডিউশিং সেন্টার (জিপিসিএস) থেকে পাওয়া এনডব্লিউ মডেলের পূর্বাভাস, এসওঅঅই (এল নিনো/ লা নিনা’র অবস্থা) ইত্যাদির যথাযথ বিশ্লেষণে এই আবহাওয়ার পরিস্থিতি জানানো হয়।

উল্লেখ্য, রাতের তাপমাত্রা বা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্য প্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। আর তাপমাত্রা ৬-৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং তাপমাত্রা ৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্য প্রবাহ বলে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *