যে কারণে বরখাস্ত হলেন ওয়ারী বিভাগের ডিসি

জাতীয়

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইব্রাহিম খানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ অধিশাখার সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে বরখাস্ত করা হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, জমি দখল সংক্রান্ত একটি অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দখলে সহযোগিতার জন্য এই পুলিশ কর্মকর্তা কয়েক কোটি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শহীদ বুদ্ধিজীবী একেএম শামসুল হক খানের পরিবারকে নবাবপুরের ২২১ নম্বরে ৪ কাঠার বাড়িটি দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই বাড়িতে থাকতেন শহীদ বুদ্ধিজীবী একেএম শামসুল হক খানের ভাই কেএম শহীদুল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা।

ডিসি মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান লালবাগ জোনের থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর তার অফিসের ১০০ গজের মধ্যে শহীদ বুদ্ধিজীবীর পরিবারের ওই বাড়িতে স্থানীয় প্রভাবশালী জাবেদ ও আবেদ গংরা ২৫-৩০ জন লোক নিয়ে লুটপাট ও তাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালায়।

বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে রাতারাতি আগের ভবন ভেঙে সেখানে দেয়াল নির্মাণ করে নতুন করে ভবন গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। অভিযোগ ওঠে, পুরো ঘটনায় পুলিশ নীরব ছিল। আতঙ্কিত পরিবারটি পরে থানায় মামলা করতে গেলে বংশাল থানা পুলিশ চুরির মামলার বাইরে অন্য মামলা রেকর্ড করতে রাজি হয়নি।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অভিযোগ, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে এ কাজ করা হয়েছে। পরে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি নিরুপায় হয়ে প্রথমে সংবাদ সম্মেলন ও পরে পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর সঙ্গে দেখা করে সব খুলে বললে পুরো ঘটনা নতুন মোড় নেয়। আইজিপি বিষয়টি তদন্তের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশনা দেন। পরে ডিএমপির পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত করে ডিসি ইব্রাহিম খানের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে প্রতিবেদন দেয়।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ডিসি ইব্রাহিম খানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, তদন্তে অসহযোগিতা ও দায়িত্ব অবহেলার তথ্য উঠে আসে। তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চলতি বছরের ২৩ মে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট-১) আমিনুল ইসলাম তাকে একটি চিঠি দিয়ে এসব অপরাধের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চান।

চিঠিতে বলা হয়, ভুক্তভোগীর এসব অভিযোগ শুনেও ডিসি ইব্রাহিম বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ব্যবস্থা নিতে কোনো নির্দেশনা দেননি বা নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। পুলিশ সদর দফতরের ডিসি যে তদারকি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন, সেটা তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করে জমা দিয়ে অসত্য তথ্য উপস্থাপন করেছেন। এ ছাড়াও তিনি দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য ডিসি ইব্রাহিমকে ১০ কার্যদিবস সময় দেয়া হয়। তার ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করে সদর দফতর।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতেই ইব্রাহিম খানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এসব বিষয়ে বক্তব্য নিতে সোমবার বিকালে ওয়ারী জোনের ডিসি ইব্রাহিম খানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন রিসিভ করেননি।সূত্র: যুগান্তর।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *