‘লুকিয়ে’ অন্যপথে বিমানবন্দর ছাড়লেন ডা. মুরাদ

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক:  বিতর্কিত রাজনীতিক সদ্য পদত্যাগী তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে কানাডা ও দুবাইয়ে ঢুকতে না পেরে অবশেষে তাকে দেশেই ফিরতে হয়েছে।

রোববার বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি।বিমানবন্দরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, মুরাদ এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে ৫৮৬ ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন।

ডা. মুরাদ হাসানের দেশে ফেরার খবরে দুপুর থেকেই বিমানবন্দরের ভিআইপি গেটে অপেক্ষা করছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরা। ওই গেট দিয়েই বের হওয়ার কথা ছিল তার।

বিমানবন্দরে নামার পর প্রথমে মুরাদ হাসানকে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন অফিসে নেওয়া হয়।সেখানে তার ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত কার্যক্রম শেষ করা হয়।পরে সাংবাদিকদের এড়াতে মুরাদ হাসান আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ব্যবহার না করে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে অনেকটা ‘লুকিয়ে’ বের হন। তিনি সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।যদিও এর আগে তিনি যথাযথ প্রটোকল নিয়ে ভিআইপি গেট ব্যবহার করতেন।

তিনি পুলিশের উপস্থিতিতে একটি প্রাইভেটকারে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে ডা. মুরাদ কোথায় গেছেন- তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

রাজধানীর ধানমণ্ডির ১৫ নম্বর সড়কের ৩০/এ ভবনে সপরিবারে থাকতেন মুরাদ হাসান। ভবনটির চার তলায় তার বাসা, আর দ্বিতীয় তলায় অফিস।মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারানোর আগে তার বাসায় নেতাকর্মীদের আনাগোনা ছিল, কিন্তু এখন সুনসান নীরবতা।মুরাদ দেশত্যাগের পর পরিবারের সদস্যরা ওই বাসায়ই রয়েছেন বলে জানা গেছে। তার ব্যবহৃত গাড়িটিও বাসার গ্যারেজে রয়েছে।

সম্প্রতি এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে ডা. মুরাদের অশালীন ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের এই সংসদ সদস্যকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৭ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করলে ওইদিন রাতেই তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। একইদিনে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় মুরাদ হাসানকে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় বুধবার তাকে সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার মুরাদ হাসানকে তার নিজ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।এ ছাড়া মুরাদের আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলের বিষয়েও দলের পরবর্তী কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

গত ৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে কানাডার উদ্দেশে দেশত্যাগ করেছিলেন তিনি। এরপর কানাডার টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলেও তাকে সে দেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।সেখান থেকে তাকে দুবাইগামী একটি ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়।কিন্তু দুবাইও তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়।

জানা যায়, মুরাদ হাসান একটি ফ্লাইটে স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুর ১টা ৩১ মিনিটে টরেন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এ সময় কানাডা ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যান। দীর্ঘ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে তাকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। পরে তাকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের বিমানে তুলে দেওয়া হয়। বিপুলসংখ্যক কানাডিয়ান নাগরিক কানাডায় তার প্রবেশের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন বলেও তাকে জানানো হয়।

কূটনৈতিক পাসপোর্ট নিয়েও কানাডায় প্রবেশ করতে পারেননি ডা. মুরাদ হাসান। জানা গেছে, কানাডায় মুরাদের প্রবেশ ঠেকাতে ১৭১টি ইমেইল করা হয় দেশটির ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সিতে।

কানাডায় প্রবেশে ব্যর্থ হওয়ার পর দুবাইয়ের ভিসা পাওয়ার চেষ্টায় করছিলেন ডা. মুরাদ।কিন্তু সেই চেষ্টায়ও ব্যর্থ তিনি।দুবাইয়ের ভিসা না পেয়ে শেষমেশ দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন মুরাদ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *