ফেরি কম, গাড়ি বেশি

জাতীয়

স্বদেশবাণী ডেস্ক: দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ ছাড়াও রয়েছে ফেরি সংকট। ফলে ঘাট এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই যানবাহনের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হচ্ছে।

মঙ্গলবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় ৫ শতাধিক বিভিন্ন যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় আটকে রয়েছে। এর মধ্যে অনেক অপচনশীল পণ্যবাহী যান রয়েছে, যারা ১৮-২০ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ফেরির নাগাল পায়নি।

তীব্র শীত ও কুয়াশার মধ্যে আটকে থেকে সাধারণ যাত্রী, গাড়িচালক, হেলপার,  কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ ও ঘাট সংশ্লিষ্ট অন্যদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সরেজমিন মঙ্গলবার দুপুরে দৌলতদিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা হতে ছেড়ে আসা ঢাকামুখী শত শত গাড়ি মহাসড়কে দুই সারিতে অপেক্ষা করছে। দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও জরুরি পচনশীল পণ্যের গাড়িগুলোকে দ্রুত পার করার জন্য আলাদা একটি সারিতে রাখা হয়েছে। অপর সারিতে রয়েছে অপচনশীল ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান।

আটকে থাকা পরিবহনের চালকরা জানান, অপচনশীল অধিকাংশ গাড়ি সোমবার দুপুরের পর হতে সন্ধ্যানাগাদ আসা। যারা ১৮-২০ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও ফেরির নাগাল পায়নি। ফেরিতে উঠতে তাদের আরও দু-তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। এছাড়া দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও জরুরি যানবাহনগুলোও ৪-৫ ঘণ্টার আগে ফেরিতে উঠতে পারছে না।

বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে মঙ্গলবার সকাল থেকে মাত্র ১৪টি ফেরি চলাচল করছে। এর মধ্যে ৭টি ফেরি রোরো (বড়) এবং ৭টি ছোট ফেরি। এখানকার শাহ পরান ও বনলতা নামের দুটো ফেরিকে পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানায় রেখে জরুরি মেরামত কাজ করা হচ্ছে।

এছাড়া এ রুটের ৪টি রোরো (বড়) ফেরি এক মাসের অধিক সময় ধরে নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে রেখে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। ফেরিগুলো হচ্ছে ভাষা শহীদ বরকত, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ও শাহ আলী।

স্বাভাবিক যানবাহন পারাপারের জন্য বিকল ফেরিগুলো দ্রুত সংস্কার হয়ে আসা দরকার বলে ঘাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন।

সাতক্ষীরা থেকে আসা কাভার্ডভ্যানচালক সুমন সরদার বলেন, তিনি সোমবার বেলা ২টার দিকে গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় আসলে পুলিশ সেখানে সিরিয়ালে আটকে দেয়। মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে দৌলতদিয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে আসি। এখন বেলা ৩টা বাজে। কিন্তু ফেরি ঘাট হতে এখনো অন্তত দুই কিলোমিটার দূরে আছি। আজকেও ফেরির নাগাল পাব কিনা জানি না।

পটুয়াখালী হতে আসা ঢাকার নবীনগরগামী ট্রাকচালক নাইম বেপারি  জানান, সোমবার বিকাল থেকে লম্বা লাইনে অপেক্ষা করছি। কখন ফেরিতে উঠতে পারব বলতে পারছি না। অনেক দুর্ভোগ হচ্ছে।

এ সময় কয়েকজন চালক অভিযোগ করে বলেন, তাদের মতো শত শত চালক ঘণ্টার পর ঘণ্টা নানা ভোগান্তি  সহ্য করে মহা সড়কে আটকে আছেন। অথচ অনেক চালক পরে এসেও গোয়ালন্দ মোড় হতে দালালদের মাধ্যমে কতিপয় অসাধু ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে সরাসরি দৌলতদিয়া ঘাটে চলে আসছে। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার।

গোপালগঞ্জে কোটালিপাড়া হতে ছেড়ে আসা দিগন্ত পরিবহণের চালক মিজান খলিফা জানান, তিনি দুপুর ১২টায় ঘাটে এসে দীর্ঘ সিরিয়ালে আটকা পড়েন। বিকাল ৩টা পর্যন্ত ঘাট থেকে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছেন। দীর্ঘ সময় আটকে থেকে যাত্রীরা অনেক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

রাজবাড়ী ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মিজানুর রহমান জানান, এই রুটে স্বাভাবিক যানবাহন পারাপারের জন্য অন্তত ১৮-২০টি ফেরি দরকার। তা তো নেইই। উল্টো শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটের গাড়ির চাপ সামলাতে হচ্ছে তাদের। দুর্ভোগ কমাতে বিকল ফেরিগুলো দ্রুত সংস্কার হয়ে আসা দরকার।
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক জামাল হোসেন বলেন, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুট দিয়ে সকাল ৮টা হতে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শুধুমাত্র ছোট যানবাহন পারাপার করা হয়। সেখানকার অধিকাংশ গাড়ি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুট ব্যবহার করে। ফলে এখানে এতো চাপ। তবে দুর্ভোগ কিছুটা কমাতে যাত্রীবাহী ও পচনশীল গাড়িগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে পারাপার করা হচ্ছে। এতে ঘাট এলাকায় অপচনশীলসহ শত শত যানবাহন আটকা পড়ছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *