দিনে ওসির বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস, রাতে গ্রেফতার সাংবাদিক

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক: রাজধানীর পল্লবী থানা পুলিশ স্থানীয় এক সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে। তার নাম ইউসুফ আহমেদ তুহিন। তিনি সাপ্তাহিক নতুন বার্তার সম্পাদক। পুলিশ বলছে, ‘চাঁদাবাজির মামলায়’ তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তুহিনের পরিবারের অভিযোগ, পল্লবী থানার ওসির বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

কী কারণে সাংবাদিক তুহিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে- তা জানতে পল্লবী থানার ওসির ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে কয়েক দফা কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

এদিকে সাংবাদিক তুহিনের গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে তার পরিবার ও স্থানীয় সাংবাদিকরা সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পল্লবী থানায় অপেক্ষা করেও ওসির দেখা পাননি।  এমনকি কারো ফোন পর্যন্ত রিসিভ করেননি ওসি পারভেজ ইসলাম।

তুহিনের পরিবারের এক সদস্য ইমন জানান, গতকাল (মঙ্গলবার) গ্রেফতারের আগ মুুহূর্তে তুহিন তাকে ফোন করে জানান- পল্লবী থানার এসআই জহির উদ্দিন তার (তুহিন) সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন। আর বলেছেন ওসি সাহেব নাকি তার (তুহিন) সঙ্গে কথা বলবেন। তুহিন আরও জানান- ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় হয়ত তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে।  থানায় যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ইউসুফ তার পরিবারের সদস্যদের মোবাইলে জানান তাকে থানার গারদে ঢোকানো হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বুধবার সকাল থেকেই থানায় প্রবেশ নিয়ে ছিল বেশ কড়াকড়ি। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সকাল বেলায় থানায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি কোন মামলায় তুহিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে- তা জানতে চাইলে থানার ডিউটি অফিসার এ ব্যাপারে ওসির সঙ্গে কথা বলতে বলেন। ওসি পারভেজ ইসলাম এই  সময় থানায় ছিলেন না। তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তুহিনের পরিবারের এক সদস্য বলেন, এক মাস আগে পল্লবী থানার ওসির অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার, দুদুক ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দেন তুহিন। আর গতকাল (মঙ্গলবার) ওসির অপকর্মের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।  আর এতেই তিনি ওসির রোষানলে পড়েন।

গতকাল মঙ্গলবার পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলামের বিরুদ্ধে সাংবাদিক তুহিন যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন- তা পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলামের সীমাহীন অপকর্ম ও কোটি কোটি টাকা ঘুস বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কর্মসূচি গ্রহণ প্রসঙ্গে-

‘পল্লবী থানার বর্তমান ওসি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পল্লবী থানা যেন অনিয়ম, দুর্নীতি, মাদক বাণিজ্য, দখলপালটা দখলের থানায় রূপ নিয়েছে। ওসির বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অসংখ্য অভিযোগ জমা হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কোটি কোটি টাকা ঘুস গ্রহণের অভিযোগ দেওয়া হয়েছে ওসির বিরুদ্ধে।  সেইসঙ্গে রয়েছে হেফাজতে নির্যাতনের মতো ভয়াবহ সব অভিযোগ। সর্বশেষ ২০ ডিসেম্বর যুক্ত হলো থানা থেকে আসামি উধাও হওয়ার ঘটনা। পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া কীভাবে একজন ডাকাতি মামলার আসামি হ্যান্ডকাফ খুলে চলে যেতে পারে? ইতোপূর্বে হ্যান্ডকাফসহ পালিয়েছিল পারভেজ নামে এক মাদক মামলার আসামি। মাদক মামলার আসামি পারভেজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে, পুলিশ কিন্তু তাকে গ্রেফতার করেনি। এদিকে হ্যান্ডকাফসহ যে পারভেজ পালিয়েছে তাকে না ধরে অন্য এক নিরীহ কাপড় ব্যবসায়ী পারভেজের বাসায় ওসির নেতৃত্বে ১০ লাখ টাকা ডাকাতির অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।’

‘এত অন্যায় করার পরও ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এমন সাহস বোধহয় পুলিশ বিভাগে কারো নেই। আমরা নিরীহ মানুষ জিম্মি পল্লবী থানার একজন ওসির কাছে। বাধ্য হয়ে পুলিশ কমিশনার বরাবর আবেদন করব আমরা। পল্লবীবাসী ওসির প্রতি কনিষ্ঠা আঙুল প্রদর্শন করে অনাস্থা জানাবে প্রেস ক্লাবের সামনে। পরবর্তীতে ওসির বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষরসহ একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের অনাস্থাপত্র হস্তান্তর করব। এরপরও কাজ না হলে আরও কর্মসূচি নিতে হবে। প্রয়োজনে আত্মহত্যার অনুমতি চেয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করা হবে। যেহেতু এই ওসি পল্লবীতে থাকলে সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারব না, তার চেয়ে মরে যাওয়ার অনুমতি চাইব। যেহেতু অতীতে কোনো আইন ভঙ্গ করিনি, সেহেতু আত্মহত্যার মতো একটি আইন ভঙ্গ করার কাজ করতে হলে অনুমতি আবশ্যক। তবে আত্মহত্যার অনুমতি যদি রাষ্ট্র দেয় সেক্ষেত্রে ওসির কারণে জীবন দিতে হবে। সেই ওসির কুশপুত্তলিকাকে জুতা মারা কর্মসূচি এবং পরবর্তীতে কুশপুত্তলিকা পোড়ানো কর্মসূচিও পালন করার চেষ্টা করব। ’

পল্লবী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাইদ আল মামুন বলেন, তুহিনের বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। তাই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *