পুলিশের বেপরোয়া সোর্স শহীদ এখন মানুষের আতঙ্ক

জাতীয়
বনানী (ঢাকা) সংবাদদাতাঃ রাজধানীর বনানীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অসংখ্য অভিযোগভুক্ত পুলিশের সোর্স শহীদ। সোর্স পরিচয়ে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে গোডাউন বস্তির মরহুম মাকু মিয়ার ছেলে শহীদ। বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেফতারে পুলিশ শহীদের সহযোগিতা নিয়ে থাকে বলে জানা যায়। কিন্তু বনানীতে অনেক নিরপরাধ মানুষকে গ্রেফতার করিয়ে স্পট থেকেই মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এক সময়ের দিন মজুর শহীদ হয়ে গেছে আংগুল ফুলে কলাগাছ। পুলিশের সঙ্গে সখ্যতার সুযোগে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। চাঁদাবাজি, দেহ ব্যবসা, মাদক ব্যবসাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই, যা সে নিয়ন্ত্রণ করছে না। নিজেকে নিরাপদ রাখতে বস্তিতে নিজের ঘরে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন।
বনানী থানা পুলিশের কয়েকজন এসআই-এর সাথে সোর্স শহীদের সখ্যতা থাকার কারনে দিন দিন তার অপকর্ম বেড়েই চলেছে। এক সময় শহীদ ভারতে গ্রেফতার হওয়া বনানী থানার সাবেক ওসি (তদন্ত) সোহেল রানার ব্যাক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতেন। সেসময় গোডাউন বস্তিতে জায়গা দখল করে বেশ কয়েকটি ঘর তুলে হয়ে উঠে এই বস্তির বাড়িওয়ালা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৫ সালে বিস্ফোরক ও অস্ত্রসহ বনানীর হিন্দুপাড়া বস্তি থেকে গ্রেফতার হয় শহীদ। ওই সময় পাবলিকের গণধোলাইয়ে নিহত বস্তির শীর্ষ সন্ত্রাসী ফারুখ উরফে ফরুর সহযোগী ছিল শহীদ, জেল থেকে সাজা খেটে বের হওয়ার পর পুলিশের সোর্স পরিচয়ে সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছেন। পুলিশের মোটরসাইকেল, হ্যান্ডকাফ, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ব্যবহার করায় অনেকে তাঁকে পুলিশই মনে করে।
শহীদের সোর্স বাহিনীতে রয়েছে, হারুন, ভাগিনা হৃদয়, নাডা সুমন ও ড্রাইভার কাশেম। বনানী থানার সাবেক কনস্টেবল মিয়া হোসেন এখন বনানী থানায় না থাকলেও তাঁকে প্রায়ই শহীদের সাথে বনানী এলাকায় গ্রেফতারের নামে ফিটিং বানিজ্য করতে দেখা যায়। বনানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাটে তল্লাশির নামে ‘ফিটিং’ বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। রাতে চলাচলরত মানুষকে তল্লাশির নামে পকেটে ইয়াবা কিংবা গাঁজার পুরিয়া দিয়ে ফিটিং দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে সোর্স শহীদের বিরুদ্ধে। আবার কখনও কখনও মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়েও সে নিরপরাধ মানুষের অর্থকড়ি হাতিয়ে নেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কড়াইল বস্তির একব্যক্তি জানান, কড়াইল বস্তি, বেদে বস্তি ও গোডাউন বস্তিতে মাদক ব্যবসার মহাজন শহীদ। এছাড়া শহীদ বনানী এলাকার চোরের সর্দার। তার ঘরে প্রতিদিন জুয়ার আসর বসে। পুলিশের সাথে আতাত করে শহীদ যুবসমাজের মাঝে মাদক সাপ্লাই দিয়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে উঠতি বয়সের যুবকদের ভবিষ্যৎ। অদৃশ্য শক্তির কারণে শহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না পুলিশ।
বনানী থানার এক পুলিশ সদস্য জানিয়েছে, সোর্স শহীদের ভুয়া তথ্যে পুলিশ সদস্যদেরও অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।
সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে পুলিশের অন্তত ৫০০ সোর্স অপরাধে জড়িত, যাদের অনেকেরই বিরুদ্ধে হত্যাকান্ড, চাঁদাবাজি, হয়রানিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এ তথ্য জানিয়ে পুলিশ সূত্র বলছে, এই দাগি সোর্সদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগ আসছে। এর ভিত্তিতে তাদের পরিচয়সহ একটি তালিকা করে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সব মহানগর পুলিশের কমিশনার ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) কাছে চিঠি পাঠিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর সোর্সদের লাগাম টানতে বলেছে।
পুুলিশের যারা সোর্স ব্যবহার করেন, তারা যেন তাদের আমলনামা পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেন। অনেক সোর্স আছেন তারা নিয়মিত অর্থ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ এসেছে। নির্দিষ্ট অঙ্কের সোর্সমানিও বণ্টন করা হচ্ছে না। ফলে সোর্সরা অপরাধে ঝুঁকছেন।
জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হায়দার আলী খান বলেন, ‘সোর্সরা পুলিশের নাম ব্যবহার করে অপরাধ চালায় বলে আমরা প্রায়ই অভিযোগ পাচ্ছি। অপরাধ যারা করবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ’

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *