মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক হয়েছে খালেদা জিয়ার, ধরা পড়েছে ব্লক

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানান, চিকিৎসকরা তার এনজিওগ্রাম করেন। এতে তার হার্টে ব্লক ধরা পড়ে। এরপর চিকিৎসকরা সফলভাবে সেখানে রিং বসান। চিকিৎসকরা আশা করছেন, তিনি আপাতত হৃদরোগ থেকে মুক্তি পাবেন।

এর আগে গতকাল রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। রাত ৩টা ২০মিনিটে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। শনিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থার কথা জানান মির্জা ফখরুল।

মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল রাতে তিনি (খালেদা জিয়া) অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ভর্তি করার পর ওনার আরেকটি উপসর্গ দেখা দেয়। তাঁর শ্বাস কষ্ট শুরু হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, এনজিওগ্রাম করতে গিয়ে চিকিৎসকরা তার মেইন আর্টারিতে ৯৯ শতাংশ ব্লক পান। ম্যাডামের মূল অসুখ ছিল লিভার সিরোসিস। উনার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা বলেছেন, এটাকে আমরা সাময়িকভাবে বন্ধ করেছি। এটার যে স্থায়ী চিকিৎসা সেটা দেশে সম্ভব নয়। তার জন্য বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিতে হবে। এখন ম্যাডামের মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে হার্টের সমস্যা। এছাড়াও তার তো অন্যান্য রোগ আছেই।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকেও মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা প্রস্তাব করেছেন, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ম্যাডামের হার্টের ব্লক হয়েছে এবং তার যে অন্যান্য রোগগুলো এই দেশে সেই রকম কোনো সেন্টার নেই, যেখানে চিকিৎসা সম্ভব। তারা আজও বলেছে- উনাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে উন্নত সেন্টারে নেওয়া প্রয়োজন।

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে বিএনপি কি সিদ্ধান্ত নেবে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দল থেকে কি সিদ্ধান্ত নেব, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্ত জনগণের দাবি, সারা দেশের মানুষের দাবি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য, তার জীবন বাচাঁনোর জন্য তাকে বিদেশে পাঠানো হোক। চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হোক।

খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে না পাঠানো হলে তার কিছু হলে সরকারকে দায়-দায়িত্ব নিতে হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি আরও বলেন, ম্যাডামের বিদেশে চিকিৎসার জন্য আমরা আন্দোলন করেছি। তার পরিবার থেকে বাইরে পাঠানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। ম্যাডামের পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখাও করেছেন। কিন্তু এই সরকার কোনও কর্ণপাত করেনি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী আজ পর্যন্ত দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো দরকার সেই বিষয়ে কিছু করে নাই।

তিনি আরও বলেন, আজকে খালেদা জিয়া আবারও অসুস্থ হয়ে পড়াতে প্রমাণিত অবিলম্বে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠিয়ে চিকিৎসা করাতে না পারলে তার জীবন হুমকির মুখে পড়বে, পড়েছেও। তাই আজকে আবারও আহ্বান জানাতে চাই, যদিও অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী আছেন, অবিলম্বে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষার জন্য বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য আহŸান জানাই।

এর আগে আড়াই মাস হাসপাতালে থাকার পর ফেব্রুয়ারির শুরুতে বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সেই সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলাতেও তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

তবে দেশে করোনা মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার প্রধানের নির্বাহী আদেশে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ শর্ত সাপেক্ষে দণ্ড স্থগিত করে তাকে ছয় মাসের জন্য সাময়িকভাবে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর কয়েক দফায় খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বারবার তাকে বিদেশে নেওয়ার দাবি জানানো হলেও সরকারের তরফ থেকে জানানো হচ্ছে তা সম্ভব নয়।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *