প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় বগুড়ার নারী ভাইস চেয়ারম্যান রূপা বরখাস্ত

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও বহিষ্কৃত জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহবুবা নাছরিন রূপাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার বিভাগ উপজেলা-১ শাখা থেকে গত ২ জুন সিনিয়র সহকারী সচিব মমতাজ বেগমের স্বাক্ষরিত এক পত্রে তাকে এ সাময়িক বহিষ্কারাদেশ দেয়া হয়।

পত্রে উল্লেখ করা হয়, উপজেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাছরিন রুপার বিরুদ্ধে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হওয়ার অভিযোগের বিষয়টি দুর্নীতি, অসদাচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের সামীল মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ [উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০১১ দ্বারা সংশোধিত] এর ১৩(১)(গ) ধারা অনুযায়ী নির্দেশক্রমে সাময়িকভাবে বরখান্ত করা হয়।

বৃহস্পতিবার বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মোমিনুর রশিদ সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাছরিন রুপাকে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রেরিত চিঠিতে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করেছে।

প্রসঙ্গত, প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের অধীন অডিটর পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গত ২১ জানুয়ারি মিরপুর, কাকরাইল ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইডেন মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহŸায়ক ও বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরিন রূপাসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগ।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ইয়ার ডিভাইস ছয়টি, মাস্টার কার্ড মোবাইল সিম হোল্ডার ছয়টি, পাঁচটি ব্যাংকের চেক, নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প সাতটি, স্মার্টফোন ১০টি, ফিচার মোবাইল ছয়টি, প্রবেশপত্র ১৮টি ও চলমান পরীক্ষার ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের তিনটি সেট জব্দ করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আলী জানান, ঘটনার পরদিন ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত প্রত্যেকের দুদিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। ২৫ জানুয়ারি রিমান্ড শেষে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়।

ওইদিন রমনা মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় মাহবুবা নাসরীন রূপা, আল আমিন আজাদ রনি, রাকিবুল হাসান, হাসিবুল হাসান, নাহিদ হাসান ও রাজু আহম্মেদকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছিল। আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়ে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানির তারিখ ৩০ জানুয়ারি ধার্য করেন।

পরদিন তদন্ত কর্মকর্তা এ ছয়জনের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক নারী ভাইস চেয়ারম্যান রুপাসহ ১০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রোববার বিকেলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ রমনা মডেল থানার মামলায় রূপাসহ ছয়জনের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

একই দিন আরেক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আফনান সুমী কাফরুল থানার মামলায় হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের বরখাস্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান আজাদসহ চারজনের দুদিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

প্রশ্নফাঁস চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার এবং দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাÐে জড়িত থাকায় মাহবুবা নাসরীন রুপাকে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। ২৩ জানুয়ারি রোববার দুপুরে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল প্রেরিত এ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ ব্যাপারে জানানো হয়েছে।

আল রাজি জুয়েল জানান, গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত সংবাদে ঢাকায় সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহবুবা নাসরীন রুপার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। তার এহেন কর্মকাÐে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাই তাকে দল থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *