টিকিট বিক্রিতে দুর্নীতি, সহজকে ২ লাখ টাকা জরিমানা

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক:ট্রেনের টিকিট বিক্রিতে দুর্নীতির অভিযোগে সহজ ডট কমকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। কমলাপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এ জরিমানা করা হয়।

এ ব্যাপারে রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার জন্য দ্রুতই ডাকা হবে বলেও জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

আরও পড়ুন : রেলের অব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলেন হাইকোর্ট

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণিত হওয়ায় সহজ ডটকমকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ অভিযোগকারী মহিউদ্দিন রনিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, তার এ অভিযোগ এবং দৃঢ় আন্দোলন ভোক্তা অধিকারের ব্যাপারে সবার চোখ খুলে দিয়েছে। ভোক্তার হয়রানি দ্রæত নিরসন করতে হবে। রনি টিকিটের জন্য পেমেন্ট করেও টিকিট পায়নি এবং সে এর মধ্যে বসে না থেকে তাদের অফিসে গিয়েছে এবং সেখানে যাওয়ার পর সহজের কর্মকর্তা তাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। তার বুক করা সিটই অন্য কারো কাছে বেশি দামে বিক্রি করা হয়েছে। একজন ভোক্তা হিসেবে তার অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে।

সফিকুজ্জামান বলেন, তার ছয় দফা দাবির ব্যাপারে আমাদের কিছু করণীয় নেই। সেগুলোর ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

শুনানি শেষে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত রনি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ রায়ে আমি সন্তুষ্ট। আমার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রত্যেকটা নাগরিক আশ্বস্ত হতে পারবেন যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তাদের অধিকার রক্ষা করবেই।

তিনি বলেন, ওই ঘটনার বিষয়ে ১৪ ও ১৫ জুন দুবার তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। কিন্তু সেখান থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে ৭ জুলাই কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেন।

রনি বলেন, আমি আমার আন্দোলন এবং শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাব। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস পেতে চাই। আমার আর কারও ওপর কোনো ভরসা নেই। আমি আমার অভিযোগ নিয়ে যখন রেলওয়ের কাছে গিয়েছি, তারা আমাকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে অনলাইন টিকিট কোন সিস্টেমে বিক্রি হয়, কাদের হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকে। অনলাইন টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে সহজের হাতেই নিয়ন্ত্রণ থাকে। তাই আমার অভিযোগ সহজের বিরুদ্ধেই ছিল।

সহজের আইনজীবী মির্জা রাগীব হাসনাত শুনানি শেষে বলেন, এখানে তিনটা এনটিটি আছে। সহজ, ভিনসেন্ট এবং সিনেসিস। তিনজন মিলেই ওয়েবসাইট অপারেট করে। ১৫ মিনিটের মধ্যে পেমেন্ট না করতে পারলে সেক্ষেত্রে ট্রেনের সিট ক্যানসেল হয়ে যাবে। অভিযোগকারী সেটি পারেননি। তাকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। তার চারটা টিকেটের মধ্যে একটা বিক্রি করা হয়েছে রেলওয়ের কাউন্টার থেকে। কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি হয়ে গেলে সহজের কিছু করার থাকে না।

রেলের অব্যবস্থাপনা রোধে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহিউদ্দিন রনি। দাবি আদায়ে গতকাল তিনি লংমার্চও করেন ।

গত ১৩ জুন রাজশাহী ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে ঢাকা-রাজশাহীর টিকিট কাটার চেষ্টা করেন তিনি। অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমে বিকাশ থেকে ভ্যারিফিকেশন কোড পাঠানো হয়। কিন্তু পিন নম্বর দিয়ে সেটি নিশ্চিত করার আগেই বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টিকিটের মূল্য কাটা হয়। ঘটনার পর রনি দ্রæত কমলাপুর রেলস্টেশনে রেলওয়ের সার্ভার রুমে অভিযোগ করেন। সেখান থেকে কারণ হিসেবে জানানো হয়, সিস্টেমের কারণে এমন হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে টাকা ফেরত না পেলে অভিযোগ করতে বলা হয়।

রনি জানান, তখন তার চোখের সামনে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তার বুকিং করা ৬৮০ টাকার আসনটি আরেক যাত্রীর কাছে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন স্টেশনের কম্পিউটার অপারেটর। এরপর ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে ১৪ ও ১৫ জুন দুই বার অভিযোগ করেন তিনি।

আরও পড়ুন : বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সরে গেছে, ঢাকা থেকে ট্রেন চলাচল শুরু

অভিযোগের বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সভাকক্ষে আজ শুনানি হয়। শুনানি শেষে রেলের টিকিট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সহজ ডট কমকে জরিমানা করা হয়।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *