বায়ান্নর নিচে চাল নেই, ডিম ছুঁয়েছে ১৪০ টাকা

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: “বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রাক ভাড়াসহ অন্যান্য ব্যয় বাড়ার কারণে সবজির দাম বেড়েছে। যার কারণে কৃষক পর্যায়ে সবজির কেজি সাত-আটে নামলেও রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকার কমে কোনও সবজি বিক্রি হয় না।”

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর থেকে নিত্যপণ্যে এর প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। বাজারে ৫২ টাকার নিচে কোনও চাল পাওয়া যাচ্ছে না। দাম বেড়েছে মাছ-মাংসসহ সব ধরনের পণ্যে। এমনকি ‘গরিবের প্রোটিন’ ডিমও ডজনে ছুঁয়েছে ১৪০ টাকা। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার সংকট ও হঠাৎ তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচসহ আনুষঙ্গিক সবকিছু বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, কাওরান বাজার ও নিউমার্কেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে তিন থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম। বাজারভেদে খুচরায় সেসব চালই কেজিতে বেড়েছে পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। ফলে খুচরা বাজারে এখন যে কোনও মোটা চালই ৫২ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৬৫ টাকা। ৪ আগস্ট বিক্রি হওয়া ৪৮ টাকার মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। ৭২ টাকার নাজিরশাইল ৮০, ৭১ টাকার কাটারিভোগ ৭৩, ৭৮ টাকার বাসমতী ৮২ এবং ১০৮ টাকার চিনিগুড়া বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়।

অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি জাকির হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বাড়বে। চালের বাজারে প্রভাব পড়বে— এটা জানা ছিল। তাই বলে এতটা বাড়বে বুঝিনি। বাজারে এখন সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হওয়া চালের কেজি পাইকারিতে ৫০ টাকায় পৌঁছেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারিতে সব ধরনের চালের দাম বাড়ার কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। নোয়াখালী রাইস মিলের ঈমাম হোসেন বলেন, পাইকারিতে দাম বাড়ায় খুচরায় প্রতি কেজি চালে তিন থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চিকন চালের মধ্যে মিনিকেট প্রকারভেদে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫, নাজিরশাইল ৭০ থেকে ৮৫ এবং মোটা চাল (আটাশ) প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকায়।

চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন রাইজিংবিডিকে বলেন, দেশের অন্যতম চালের মোকাম কুষ্টিয়ায়। সেখানকার মিলগেটেই কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে দুই থেকে চার টাকা। অনেকদিন ধরে বাজার স্থিতিশীল থাকলেও গত রোববার থেকে আবার বেড়েছে।

চাল ছাড়াও বেড়েছে মুরগি, ডিম, মাছ, সবজি ও ফলের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে সব ধরনের মুরগি কেজিতে ১৫-২০, ডিম ডজনে পাঁচ থেকে ১০, সবজি কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা দোকানে ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রাক ভাড়াসহ অন্যান্য ব্যয় বাড়ার কারণে সবজির দাম বেড়েছে। যার কারণে কৃষক পর্যায়ে সবজির কেজি সাত-আটে নামলেও রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকার কমে কোনও সবজি বিক্রি হয় না।

হাতিরপুল বাজারের প্রোটিন হাউজের বিক্রয়কর্মী রহমান বলেন, পরিবহন খরচ বাড়তি এবং বাজারে মুরগির সরবরাহ কম হওয়ায় গত সপ্তাহের তুলনায় বর্তমানে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত মুরগির দাম বেড়েছে। ১৫০-১৬০ টাকা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০। সোনালি মুরগি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০-৩০০ টাকায়, যার দাম ছিল ২৭০-২৮০ টাকা। দেশি মুরগির কেজি ৫২০ টাকা ছিল। এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা।

পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আমদানিকারক মো. মাজেদ মিয়া বলেন, ডলারের অস্থিরতার কারণে এমনিতেই রসুন, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। এখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় এসব পণ্যের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ডলারের অস্থিরতা না কমলে আমদানিকৃত পণ্যের দাম আরও বাড়বে। আজ পাইকারিতে পেঁয়াজের কেজি ৩৬ টাকা, আদা ১১০, চায়না রসুন ১১৫, হলুদ ১২৫, দেশি শুকনা মরিচ ২৭০ ও ভারতীয় শুকনা মরিচ ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।

এদিকে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কাওরান বাজারের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ীরা। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারিতে সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা। গোল বেগুন ৮০, লম্বা বেগুন ৬০, করলা ৭০-৮০, কাঁকরোল ৬০-৭০, ঝিঙ্গা ৮০, পটোল ৫০-৬০, টমেটো ১২০, কাঁচামরিচ ২২০, কচুর মুখি ৫০, চালকুমড়া ৪৫ থেকে ৫০, চিচিঙ্গা ৫০, বরবটি ৬০, ঢেঁড়স ৫০ ও কাঁচা পেঁপে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে আটা, ময়দা, চিনি, লবণের দামও বেড়েছে। নিউ মার্কেট কাঁচা বাজার ঘুরে জানা গেছে, ৫০ কেজির প্রতি বস্তা আটায় বেড়েছে ১৫০-১৮০ টাকা। ময়দায় ৭০, চিনিতে বেড়েছে ১৫০ টাকা। গত সপ্তাহেও লবণ ৩৫, খোলা চিনি ৮০, প্যাকেট চিনি ৮৫ ও খোলা আটা ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে কেজিপ্রতি দাম বেড়ে লবণ ৩৮, খোলা চিনি ৮৫, প্যাকেট চিনি ৯০ ও আটা ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

স্ব.বা / রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *