আমরা প্রজায় পরিণত হয়েছি: সুলতানা কামাল

জাতীয়

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেছেন, আমরা এখন প্রজায় পরিণত হয়েছি। আমরা কথা বললেই তো রাজার সঙ্গে শত্রুতা হয়ে যায়।

এ সময় পাশে বসা সংসদ সদস্য মইনউদ্দিন খাঁন বাদলকে দেখিয়ে সুলতানা কামাল বলেন, উনারা আমাদেরকে কিছু বলতে বলেন। অথচ উনারা সংসদ সদস্য। জনগণের কথা উনাদেরই বলার কথা। আমরাই যদি বলতে থাকি তাহলে সংসদ আছে কীসের জন্য?

তিনি আরও বলেন, সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা নিতে বাদল ভাইদের পারমিশন দেয়া হয়েছে। আমাদের তো কোনো পারমিশনই দেয়া হয়নি। আমাদের বলা হচ্ছে তোমরা কারা? আমরাই (সরকার) সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতা এসেছি, যা খুশী তাই করব। তোমরা কারা? আমরা কথা বললেই তো রাজার সঙ্গে শত্রুতা হয়ে যায়। সত্য কথা বলার কারণেই মিথ্যা মামলায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে জেলে যেতে হয়েছে।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে যাত্রী অধিকার দিবস ঘোষণা উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন।

সভায় আরও বক্তব্য দেন মইনউদ্দিন খাঁন বাদল এমপি, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, সাংবাদিক আবু সাঈদ খাঁন, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসেন আহমদ মজুমদার, নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ।

সভাপতিত্ব করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

মইনউদ্দিন খাঁন বাদল তার বক্তব্যে পুলিশের বেতন বন্ধ করার দাবি জানান। রাজধানীতে জনদুর্ভোগ কমাতে প্রধানমন্ত্রীকে হেলিকপ্টার ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

সুলতানা কামাল বলেন, সরকার মালিক শ্রমিক বা পথচারী কেউ নিজ দায়িত্বের কথা স্বীকার করেন না। সবাই এড়িয়ে যান। এ দায়িত্ব এড়ানোর কারণ হচ্ছে দেশে সুশাসনের অভাব।

সড়কের বিভিন্ন নৈরাজ্য ও অব্যবস্থার কথা তুলে ধরে সুলতানা কামাল বলেন, যারা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন তারা একেবারে সাধারণ মানুষ। যারা রাস্তায় চলাচলে বিভিন্ন ধরণের নিরাপত্তা পান তাদের তো সড়কে প্রাণ দিত হয় না। তারা অনেক নিরাপদেই রাস্তায় চলাচল করেন। আর সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে এ ধরণের আলোচনার আয়োজন করা হয়। তিনি ১৩ সেপ্টেম্বরকে যাত্রী অধিকার দিবস ঘোষণার উদ্যোগে সংহতি জানান।

তিনি বলেন, যাত্রী অধিকারকে নাগরিক অধিকার ও মর্যাদার সঙ্গে যুক্ত করেই কথা বলতে হবে।

সুলতানা কামাল আরও বলেন, সরকারের অনেকে বলেন- দেশ সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের মতো উন্নত হয়ে গেছে। এ কথা শুনে গর্ববোধ করি। কিন্তু হংকং-সিঙ্গাপুরের পরিবহণ ব্যবস্থা তো অনেক উন্নত। আমাদের দেশের সড়কগুলো এত অনিরাপদ কেন? রাস্তা ভালো না, ট্রাফিক পুলিশ ঘুষ খায়, আরও অনেক সমস্যার কথা বলতে শুনি। কিন্তু কথা হচ্ছে, এগুলোর কারণে যাত্রীরা কেন ভোগান্তির শিকার হবে? কাজের জন্য প্রতিদিনই আমাদের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। এখন গাড়িতে উঠে আমরা বসার জায়গায় পাব কিনা সেটা নিয়ে ভাবি না, ভাবি নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব কিনা! মেয়েরা ভাবে সম্মান নিয়ে, ধর্ষিত না হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব তো!

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আমাকে মিথ্যা চাদাঁবাজির মামলায় গ্রেফতারের পর দেশের সচেতন মহল, বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকার কর্মী ও গণমাধ্যম যেভাবে প্রতিবাদ করেছে এতে আমি অভিভূত। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। এই আন্দোলনে আমার উৎসাহ আরও বহুগুণ বেড়েছে। যত বাধা-বিপত্তি আসুক যতদিন দেশে যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য, সড়ক নিরাপত্তা তথা যাত্রী অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের সঙ্গে নিয়ে যাত্রী অধিকার আন্দোলন চালিয়ে যাব।

সাংবাদিক আবু সাঈদ খাঁন বলেন, এদেশে যাত্রী হয়রানি ও সড়কে নৈরাজ্য সবচেয়ে বেশি। তাই যাত্রী অধিকার দিবসের ডাক বাংলাদেশ থেকে দেয়া হয়েছে। যদি এই দিবসটি প্রতিষ্ঠা পায়, তবে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যান্য দেশকে পথ দেখাবে। ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসেন আহমদ মজুমদার বলেন, যোগ্য চালকের সংকট, ছোট যানবাহনের আধিক্য ও দৌড়াত্ম্য আইনের অপপ্রয়োগ জিইয়ে রেখে সড়কে নিরাপত্তা বা যাত্রী অধিকার সুরক্ষিত হবে না।

দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে ‘যাত্রী অধিকার দিবস’ এর ঘোষণাপত্র পাঠ করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ।সূত্র: যুগান্তর।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *