স্বদেশ বাণী ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে ছাত্রদল নেতার পর ছাত্রলীগ এবার সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘প্রেস নারায়ণগঞ্জ’ এর চিফ রিপোর্টার সৌরভ হোসেন সিয়ামের (২৪) ওপর হামলা চালায় তারা। সিয়াম সরকারি তোলারাম কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
আজ এক সংবাদ সম্মেলনে হামলার কথা জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক সৌরভ হোসেন সিয়ামের সাথে উপস্থিত ছিলেন প্রেস নারায়ণগঞ্জের প্রকাশক ও সম্পাদক ফখরুল ইসলাম।
সিয়াম জানান, শনিবার বেলা ১১টার দিকে ৩য় বর্ষের ফরম ফিল-আপ করতে তোলারাম কলেজের বিজ্ঞান ভবনের চতুর্থ তলায় প্রাণিবিদ্যা বিভাগে যাই। সেখানে গিয়ে ফরম ফিল-আপের জন্য কাগজপত্র তৈরি করি। পরে ডিপার্টমেন্ট থেকে জানানো হয়, রোববার ফরম ফিল-আপ করতে। এক পর্যায়ে পিয়াস প্রধান, মেহেদী হাসান প্রিন্স ও শাহরিয়ার পরশ (হৃদয়), সার্থক আহমেদ তোফা, শেখ হাবিবুর রহমান তামিমসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জন আমার ডিপার্টমেন্টের ভেতরে আসেন। আমাকে দীর্ঘক্ষণ যাবৎ অনুসরণ করতে থাকেন।
তিনি আরও জানান, এই পাঁচ জন ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল কলেজ ক্যাম্পাসেই আমাকে মারধর করেছিল বিধায় তাদের ওপর আমার সন্দেহ হয়। ঘটনাটা একজন শিক্ষককে জানাই। তার পরামর্শে আমি ডিপার্টমেন্ট থেকে বের না হয়ে সেখানেই বসে থাকি। আমি ভেবেছিলাম, ওটা আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (ডিপার্টমেন্ট), সেখানে আমার পিতৃতুল্য শিক্ষকেরা আছেন, শিক্ষার্থীরাও আছে। তাই সেখানে আমি নিরাপদ। এদিকে সেই বারবার ডিপার্টমেন্টে আসা-যাওয়া করছিল তারা।
আনুমানিক সোয়া বারোটায় পিয়াস প্রধান, শাহরিয়ার পরশ, মেহেদী, তোফা ও তামিমসহ অন্যরা এসে আমাকে ডিপার্টমেন্টের ভেতরেই ঘিরে ধরেন। তাদের মধ্য থেকে একজন আমাকে বলে, ‘চল নিচে আয়’। উত্তরে আমি বলি, ‘নিচে যাব কেন? কিছু বলার থাকলে এখানেই বলেন’। আমি যেতে না চাইলে তারা আমাকে টেনে নিচে নিয়ে যেতে চান। একপর্যায়ে আমি স্যারদের ডাকাডাকি করলে তারা ডিপার্টমেন্টের ভেতরেই আমাকে এলোপাথারি কিল-ঘুষি-লাথি মারতে থাকেন।
মারতে মারতে তারা বলেন, ‘এই কলেজেই পড়ো আবার সাংবাদিকতা করো? সততা দেখাও? নারায়ণগঞ্জের সব সাংবাদিকরে খাইয়া দিমু।’ একথা বলতে বলতে তারা আমাকে মারতে থাক। এক পর্যায়ে ডিপার্টমেন্টের বাথরুমের দিকে টেনে নিয়ে যেতে চাইলে আমি চিৎকার করতে থাকি।
মারধর করে চলে যাওয়ার আগে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বলে, ‘আজকে বাঁইচা গেলি। তোর পুলিশ বাবাদের গিয়ে এই কথা বললে একেবারে জানে মাইরা ফেলমু।’ এক শিক্ষকের সহায়তায় আমি সেখান থেকে বের হয়ে আসি। পরবর্তীতে এ বষিয়ে সংশ্লিষ্ট থানা ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সিয়াম জানান, ঘটনার পর জানতে পারি, পিয়াস প্রধান নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক, তামিম সহ সম্পাদক, মেহেদী প্রিন্স একই কমিটির উপ সাংস্কৃতিক সম্পাদক অন্যরা তোলারাম কলেজ ছাত্র সংসদের লোক হিসেবে কলেজে পরিচিত।
তিনি আরও জানান, এর আগে গত বছরের এপ্রিলের ২৩ তারিখ সংবাদ প্রকাশের জেরে তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী সংসদ কক্ষের ভেতরে নিয়ে গিয়ে আমাকের বেধড়ক মারধর করে পিয়াস প্রধান, পরশ, মেহেদী। এ ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছিল। আজকে কোনো কারণ ছাড়াই তারা আমাকে মারধর করে। কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, এতে করে ঐতিহ্যবাহী তোলারাম কলেজের সুনাম ক্ষুণ্নসহ শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে সাহসী সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ হচ্ছে। এমন অবস্থায় আমি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি পাশাপাশি তোলারাম কলেজের শিক্ষার পরিবেশ ও নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিয়াম বলেন, গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে কলেজের বাইরে শাহজাহান আলী নামে এক ছাত্রদল নেতাকে তোলারাম কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মারধর করে। এ ঘটনায় প্রেস নারায়ণগঞ্জে সংবাদ প্রকাশ হয়। এর জের ধরেই আমাকে মারধর করা হয়েছে।
সরকারি তোলারাম কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ও দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জীবন কৃষ্ণ মোদক বলেন, কারা হামলা করেছে তাৎক্ষণিক ওই সাংবাদিক কিছুই বলতে পারেননি। আমি মহানগর ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদের সঙ্গেও কথা বলেছি, তিনি কিছুই জানেন না।
মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে কলেজে একটি সভা ছিল। সেখানে সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত আমরা উপস্থিত ছিলাম। এর পর কোনো ছাত্রের ওপর হামলা বা মারধরের কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
সরকারি তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ বেলা রাণী সিংহ বলেন, কেন এ ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে ওই ছাত্র আমাকে কিছু জানায়নি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সূত্র: জাগো নিউজ।
স্ব.বা/শা