ক্যাসিনো-দুর্নীতির শেষ দেখে ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের শেষ না দেখে ছাড়বেন না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা বলেছেন, শেখ হাসিনার গতি অ্যারাবিয়ান হর্সের মতো। এই গতিতে যে কোনো অন্যায় নির্মূল হতে বাধ্য। ক্যাসিনো, মদ, জুয়ার বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে তারও শেষ হবে। জড়িত কেউই রেহাই পাবেন না। গুটিকয়েক লোকের ভার আওয়ামী লীগ নেবে না।

শনিবার বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এ সব কথা বলেন।

‘উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার তুমি, তুমিই বাংলাদেশ’-শীর্ষক এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তোফায়েল আহমেদ, এইচটি ইমাম, ড. আবদুর রাজ্জাক, মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, বাহাউদ্দিন নাসিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল চৌধুরী নওফেল, সুজিত রায় নন্দী, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, রিয়াজুল কবীর কাউছার প্রমুখ।

সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

অনুষ্ঠানের মাঝখানে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে পরিচয় করিয়ে দেন কাদের।

সভাপতির বক্তব্যে আমির হোসেন আমু বলেন, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সারা দেশে যখন প্রশংসিত হচ্ছে তখন বিএনপি এই চরম সত্যকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। ভালো কাজ বলেই এটি নিয়ে তারা সমালোচনা করছেন। তারা চান না দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক।

ক্যাসিনো, মদ, জুয়া জিয়াউর রহমান চালু করেছিলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় এসে সব মদ, জুয়া নিষিদ্ধ করেছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে তা চালু করলেন। সে সময় পানের দোকানদারও মদ বিক্রি করত। জিয়া মদের লাইন্সেস জাতীয়করণ করেছিল, সেই সময়ে হাউজি থেকে শুরু করে জুয়া খেলার সূত্রপাত্র হয়। এখন তো কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসছে। যারা ধরা পড়েছে সবাই বিএনপির সৃষ্টি।

শেখ হাসিনা মানুষের কল্যাণের জন্য ক্ষমতায় আছেন মন্তব্য করে আমু বলেন, অন্যরা ক্ষমতায় আসে ভোগ করতে, জনগণকে শোষণ করতে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ওপর ৩০ লাখ শহীদের রক্তের প্রতিশ্রæতি, যা বাস্তবায়নে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

আমু বলেন, একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে এ দেশ স্বাধীন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি শুরু করেছিল জিয়াউর রহমান। তিনি ক্ষমতায় এসে গোলাম আজমের নাগরিকত্ব দিলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করলেন, সাড়ে ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের আওতায় এনেছিলেন বঙ্গবন্ধু। অথচ সে সব আসামিকে ছেড়ে দেন জিয়া।

আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা বলেন, দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আজ তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বেঁচে না থাকলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব হতো না।

আওয়ামী লীগ সভাপতির আন্তর্জাতিক অর্জনের প্রশংসা করে আমু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিশ্বসভায় সম্মানিত হচ্ছেন। পুরো জাতিকে সম্মানিত করেছেন। শেখ হাসিনা আছেন বলেই দেশের মানুষ এত শান্তিতে ও নিশ্চিন্তে আছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন জানিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘শেখ হাসিনা যেটি ধরেছেন সেটি শেষ করে ছেড়েছেন’।

তিনি বলেন, ক্যাসিনো জুয়া মদ নিয়ে অভিযান চলছে। এটিও শেষ করে ছাড়বেন তিনি। তার এই শুদ্ধি অভিযানে অপরাধীরা কেউ পার পাবে না।

তোফায়েল বলেন, আজকে কিছু অনুপ্রবেশকারী দলে প্রবেশ করে আমাদের সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ বিশাল রাজনৈতিক দল, কত দল এ দেশে এসেছিল, কিন্তু আজকে খুঁজে পাওয়া যায় না, আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, যেভাবে জঙ্গি তৎপরতা নির্মূল করা হয়েছে, এবারও ক্যাসিনো-জুয়া এগুলো আমাদের সংবিধান পরিপন্থী, সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদে আছে মদ ও জুয়া নিষিদ্ধ, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ, এগুলো জিয়াউর রহমান চালু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু একটা সুন্দর দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছেন। আমরা বিশ্বাস করি, তিনি তার লক্ষে পৌঁছবেন।

আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, নির্বাসিত জীবন শেষে তিনি (শেখ হাসিনা) দেশে ফিরে বিমানবন্দরে বলেছিলেন- ‘আমি আপনাদের মাঝে এসেছি আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে’। তিনি তার কথা রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। যারা এক সময় এদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলেন, তারাই আজ বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল বলছেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় বলেই এটি সম্ভব হয়েছে।

শেখ হাসিনার গতি অ্যারাবিয়ান হর্সের মতো উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, গুটিকয়েক লোকের দায়ভার আওয়ামী লীগ নেবে না। যারা বিএনপি ও ফ্রিডম পার্টি লোকদের বৃহৎ এ দলে এনেছেন, অনুপ্রবেশে সহায়তা করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কাদের বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়েছে। এ লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে। যারা টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, মাদককারবারি তাদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার অ্যাকশন শুরু হয়েছে। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও শুরু হচ্ছে। দলের গুটিকয়েক লোকের অপকর্মের দায়ভার আওয়ামী লীগ নেবে না।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ৭৫ পরবর্তী সময়ে এদেশের নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষগুলোই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় দেখতে চেয়েছিল।

জিয়াউর রহমান একটি হীনউদ্দেশ্যে বিএনপি গঠন করেছিলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোই তার মূল উদ্দেশ্য ছিল। আজ সেই পাকিস্তান বলছে- আজ আমাদের বাংলাদেশ বানিয়ে দাও।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, বাংলার মানুষের ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যুগ যুগ বেঁচে থেকে আমাদের সেবা করুন কামনা করি।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশে এখন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে শেখ হাসিনার হাত ধরে। তার সফলতায় বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।

‘ক্যাসিনো, মদ জুয়া নিয়ে বিএনপির কথা বলার অধিকার নেই’ জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, এদেশে ক্যাসিনো মদ জুয়া শুরু করেছে জিয়াউর রহমান। মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে টাকা মেরে দুর্নীতি করেছে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাদের গঠনতান্ত্রিকভাবেই তারা দুর্নীতিবাজ দল। সূত্র: যুগান্তর।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *