রাজশাহীর বাজারে পেঁয়াজ দেশি ৭০ ভারতীয় ৬০ নির্ধারণ

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহীর খুচরা ও পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এতে পাইকারি বাজারে ভারতের পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা, খুচরা বাজারে ৬০ টাকা কেজি। দেশি পেঁয়াজের দাম পাইকারি বাজারে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা কেজি।

মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বিকালে রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজারের কাঁচাবাজার, মাস্টারপাড়া, নিউমার্কেট, কোর্ট হরগ্রাম বাজারসহ কয়েকটি বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে এই দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন রাজশাহী জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাফে মোহাম্মদ।

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্টেট রাফে মোহাম্মদ বলেন, ‘রাজশাহীর বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সরবরাহ ঘাটতির অজুহাত দেখিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী রাজশাহীসহ দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে তুলেছে। তাই বাজার তদারকি করতে রাজশাহীর বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দামের বাইরে কেউ যাতে পেঁয়াজ বিক্রি না করে সে বিষয়ে সকল ব্যবসায়ীকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাজারে পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।’

দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয়ে নগরীর বহরামপুর এলাকার সালমা খাতুন জানান, ‘একটা অজুহাত পেলেই দাম বাড়িয়ে দেওয়া ব্যবসায়ীদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে মূল্য নির্ধারণ করায় ক্রেতাদের ভালো হয়েছে। তবে বাজার মনিটরিং করতে হবে যাতে ক্রেতারা সঠিক দামে পেঁয়াজ কিনতে পারেন।’ কয়েকদিন থেকেই ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। তবে গত রবিবার থেকে হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক হারে দাম বেড়ে যায়। বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১১০ টাকায়। ভারতের পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়।

নাখোশ খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা
এদিকে দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নাখোশ হয়েছেন। তাদের দাবি, দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় তারা লোকসানের মুখে পড়বেন। ব্যবসায়ীরাদের তথ্য মতে, প্রত্যেকদিন রাজশাহী নগরীতে পেঁয়াজের চাহিদা থাকে প্রায় আট ট্রাক। এর মাঝে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসে ৪ থেকে ৫ ট্রাক আর দেশি পেঁয়াজ আসে ৩ ট্রাক। ভারতের পেঁয়াজ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে আসে। আর দেশি পেঁয়াজগুলো রাজশাহীর বানেশ্বর হাট, দূর্গাপুর হাট, ঝলমলিয়া ও তাহেরপুর হাট থেকে আসে। ভারতের পেঁয়াজ বন্ধ ঘোষণার পরেই সোনামসজিদ স্থলবন্দরে চড়া দামে পেঁয়াজ কিনতে হয় পাইকারি ব্যবসায়ীদের। আর হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৪০০ টাকা থেকে ৩৮০০ টাকা পর্যন্ত। এর মাঝে সব খরচ বাদ দিয়ে চড়া দামেই পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

নগরীর সাহেববাজার এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী ইয়াসিন আলী জানান, কেজিতে আমাদের তিন থেকে চার টাকা লাভ হয়। এর মাঝে এক মণ পেঁয়াজে দুই থেকে তিন কেজি পচা থাকে। হঠাৎ করে মঙ্গলবার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় এখন যে দামে কিনেছি তা লোকসান দিয়েই বিক্রি করতে হবে।

নগরীর মাস্টারপাড়া এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল রাজ্জাক জানান, মঙ্গলবার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটে প্রতিমণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৪০০ থেকে ৩৮০০ টাকায়। বিকেলে ম্যাজিস্ট্রেট এসে ভারতের পেঁয়াজ ৫৫ আর দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকায় বিক্রির জন্য দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

আড়তদার রায়হান বলেন, ‘ঘোষণার পর ২৮০০ টাকার ওপরে শিবগঞ্জ থেকে ইন্ডিয়ার পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। আর হাটে ৩৪০০ থেকে ৩৮০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এর মাঝে পরিবহনসহ অন্য খরচ মিলে কত টাকা লাভ হবে? ঘোষণার পরেই যাদের কাছে পেঁয়াজ মজুত ছিল তারা ফায়দা লুটছে। আর আমাদের মত ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়েছে।’

বড় মোকামের ব্যবসায়ীরা মজুত রেখে তিনগুণ লাভ করছে
আড়তদার মিঠুন জানান, দেশে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত দেশি পেঁয়াজ আছে। কিন্তু ভারতের পেঁয়াজ বন্ধ হওয়ায় বড় বড় মোকামের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুত রেখে এই সমস্যা সৃষ্টি করছে। যাদের মোকামে অনেক বেশি পেঁয়াজ ছিল তারা এখন তিনগুণ লাভ করছে। যাদের মজুত ছিল না তাদের মাথায় হাত পড়েছে।

পাইকারি ব্যবসায়ী সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার হাট থেকে ৩৪ থেকে ৩৮ শ’ টাকা মণে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। বিকালে প্রশাসন এসে দাম নির্ধারিত করে দিয়ে গেছেন। ৫৫ টাকায় ভারতের আর ৬৫ টাকায় দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করতে হবে। দুই রকমের পেঁয়াজ এখন লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হবে। আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের না ধরে বড় বড় মোকামে যারা হাজার হাজার বস্তা পেঁয়াজ মজুত রেখেছে তাদের ধরতে হবে। তাহলে আমরা রক্ষা পাবো।’

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *