সন্ত্রাসীরা, ভূমি দখলকারীরা, জুয়াড়িরা, টেন্ডারবাজরা, চাঁদাবাজরা এবং মাদক ব্যবসায়ীরা সাবধান : ওবায়দুল কাদের

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: চলমান অভিযান নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সন্ত্রাসীরা সাবধান! ভূমি দখলকারীরা সাবধান! জুয়াড়িরা সাবধান! টেন্ডারবাজরা সাবধান! চাঁদাবাজরা সাবধান! মাদক ব্যবসায়ীরা সাবধান! শেখ হাসিনার অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। এই অ্যাকশনের টার্গেট থেকে কোনো অপকর্মকারী রেহাই পাবে না।

রোববার দুপুরে আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা দলের প্রভাব খাটিয়ে অবৈধপন্থায় বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অ্যাকশন শুরু হয়েছে। তার নির্দেশেই শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। এ অভিযান শুধু ঢাকা সিটিতেই নয়, সারা বাংলাদেশে চলবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ দল থেকেই শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। এই সৎসাহস তার আছে। বঙ্গবন্ধু-উত্তর বাংলাদেশে আর কোনো শাসক, আর কোনো প্রধানমন্ত্রী, আর কোনো রাষ্ট্রপতি এই সৎ সাহস দেখাতে পারেননি যে, নিজের দলের অপকর্মকারী, অপরাধীকে শাস্তি দিয়েছেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে বড় বড় কথা বলেন মির্জা ফখরুল সাহেব। বুকে হাত দিয়ে বলুন, হাওয়া ভবন, খাওয়া ভবন, লুটেরা ভবন- সারা দেশে লুট করেছেন। খুনে খুনে বাংলাদেশ রক্তনদী হয়ে গেছে। লাশে লাশে বাংলাদেশ, লাশের পাহাড় হয়ে গেছে। বিচার কি হয়েছে? শাস্তি কি কেউ পেয়েছে? আজকে বড় বড় কথা বলেন! গলাবাজি করেন!

ক্যাসিনো প্রসঙ্গে কাদের বলেন, আজকে ক্যাসিনোর কথা বলেন, গডফাদারের কথা বলেন। এ সবের সৃষ্টি কারা করেছে? বঙ্গবন্ধু মদ ও জুয়া আইন করে বন্ধ করেছিলেন। জিয়াউর রহমান সেটা চালু করেছেন। এ জুয়ার স্রষ্টা হচ্ছেন আপনারা। ড্রাগের দিকে এ দেশের তরুণদের ঠেলে দিয়েছেন আপনারা।

তিনি আরও বলেন, বড় বড় কথা বলেন কোন্ মুখে! মির্জা ফখরুল সাহেব বলেন, সরকার আজকে খাদের কিনারে। আমি বলতে চাই- যে দলকে জেল-জুলুম নির্যাতন করে আপনারা শেষ করতে পারেননি, যে দল বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে আছে সেই দল কোনো দিন খাদের কিনারে যাবে না। বিএনপিই আজকে গভীর খাদের কিনারে। আন্দোলনে ব্যর্থ, নির্বাচনে ব্যর্থ, সবকিছুতেই ব্যর্থ।

আওয়ামী লীগের নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব নিয়ে দলের সম্পাদক বলেন, ঘরের মধ্যে ঘর করবেন না। মশারির মধ্যে মশারি খাটাবেন না। দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করে আওয়ামী লীগ টিকে থাকতে পারে না। আজকে বসন্তের কোকিলরা যদি দলের নেতৃত্ব নেয়, তারা যদি প্রাধান্য পায়, আবারো দুঃসময় আসতে পারে। আবারো দুর্যোগ আসতে পারে। আবারো অমানিশা আসতে পারে। সে সময় হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও এই সুবিধাবাদি অপকর্মকারীদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, খারাপ লোকের আমাদের দরকার নেই। ক্লিন ইমেজের পার্টি দরকার, আগামী জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে আমরা আমাদের দলকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মডেলে ঢেলে সাজাতে চাই। আমরা ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব গড়ে তুলতে চাই সারা দেশে। খারাপ ইমেজের লোক, যাদের ভাবমূর্তি নেই, এই সব লোকদের দলে টেনে পাল্লা ভারি করে কোনো লাভ নেই। দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। আমার দুষ্টু গরুর দরকার নেই।

আগামী জাতীয় কাউন্সিলের আগেই সব মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন করার তাগিদ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় কাউন্সিলের আগেই তৃণমূলের মেয়াদ উত্তীর্ণ সব কমিটি করতে হবে। এ নিয়ে কারও গাফিলতি সহ্য করা হবে না।

তিনি বলেন, যারা পদ পেয়ে ছাড়তে চান না তারা মনে রাখবেন আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা ছাড়া আমরা কেউই অপরিহার্য নই। কোনো পদ কারও কাছে লিজ দেয়া হয়নি। পরিষ্কার বলে দিতে চাই, আজকে প্রভাব খাটাবেন, জোর করে পদ দখল করে রাখবেন, মনে হয় যেন মৃত্যুর আগে পদ ছাড়বেন না। এ রকম লোকও আছেন। আমরা স্মার্ট আওয়ামী লীগ চাই। আরও আধুনিক আওয়ামী লীগ চাই, বিশুদ্ধ আওয়ামী লীগ চাই। দূষিত রক্ত চাই না। দূষিত রক্ত বের করে দিয়ে আবার আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ে বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করতে হবে।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল জামায়াত পরিবারের সন্তান। আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বেশিরভাগই জামায়াত-বিএনপি পরিবারের সন্তান। এদের দলে নিল কে? হালাল করল কে? এদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জন ধূলিস্মাৎ হতে দেয়া যায় না।

তিনি বলেন, সামনে ইউনিয়ন থেকে উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলন। এখানে গ্রুপ ভারি করার জন্য যেন বিএনপি-জামায়াতের লোকদের আশ্রয় দেয়া না হয়। আপনি এমপি হবেন, তারপর শালা-সমন্ধিরা নেতা হবে, ত্যাগীরা কোণঠাসা হবে- এটা মেনে নেয়া হবে না।

তিনি আরও আওয়ামী লীগ এমপি সাহেবের দল নয়। এমপিরা আওয়ামী লীগের। বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাউকেই সহ্য করবেন না। মনে রাখবেন, তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ঝেটিয়ে বিদায় করেছেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম।

এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রফেসর ড. সাইদুর রহমান খান, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা এবং সদস্য মেরিনা জাহান।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় পরারাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু এমপি, পাবনার এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স, রাজশাহীর এমপি এনামুল হক, আয়েন উদ্দিনসহ বিভাগের অন্যান্য আসনের এমপিরা উপস্থিত ছিলেন।

জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সভায় আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের প্রতিটি জেলা, উপজেলা এবং পৌরসভা কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক যোগ দেন।

প্রতিটি জেলা থেকে একজন নেতা সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটির বর্তমান পরিস্থিতিসহ সাংগঠনিক অবস্থান তুলে ধরেন। কেন্দ্রীয় নেতারা সে সব কথা শোনেন এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেন। সভায় অংশগ্রহণকারী সবাই চলমান অভিযানকে স্বাগত জানান।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *