রঙিন ঘরে নিরাপদ আনন্দে রাজশাহীর ১৩২টি পরিবার

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: সুফিয়া বেওয়া, এলেনা বেওয়া, রাহেমা বেওয়া, নাসিমা বেগম, শ্রীমতি কাজলী মুর্মুদের এখন আর বাড়ির দুঃচিন্তায় ভূগতে হচ্ছে না। ঘুমোতে হচ্ছে না অন্যের বারান্দায়। ঝড় বৃষ্টিতে ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ও থাকছে না। আর চাল ভেদ করে পড়বে না বৃষ্টির পানি। বৃষ্টি এলেও ভিজে যাবে না বিছানাপত্র।

এখন তাদের ঠাঁই হয়েছে মাথা গোজার। হয়েছে বিল্ডিং ঘর, পাকা পায়খানা রান্না ঘর আর বারান্দা। হয়েছে নিজের একখানা বিনা পয়সার বিল্ডিং বাড়ি। দারিদ্রের সাথে যাদের আত্মার শত্রুতা তারাই পেয়েছে স্বপ্নের বাড়ি।

২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বাস্তবায়িত দুঃস্থ ও গরীব মানুষদের জন্য দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলায় নির্মিত এসব বাড়ি গতকাল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় পৌনে তিন লাখ টাকা।

রাজশাহী জেলায় দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এবার জেলায় ১৩২ জনের সংসারের আবাসনের আক্ষেপ ঘুচেছে। পরিবর্তন হয়েছে তাদের পরিবেশ। প্রকৃতির ডাকে আর গোপন ফাঁকা স্থান খুঁজতে হবে না। পাকা ঘরে বদলে যাচ্ছে তাদের জীবনযাপন। স্বামী সন্তান নিয়ে এখন তাদের আর অন্যের বিড়ম্বনা সহ্য করে আশ্রিতা হিসাবে থাকতে হবে না।

জেলার পবা উপজেলা হরিপুর ইউনিয়নের হলদিবোনা গ্রামের বাসিন্দা শ্রীমতি কাজলী মুর্মু। স্বামী বুদ্ধিনাথ হাসদা। অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করায় যার পেশা। নিজের জায়গা জমি না থাকায় বিয়ের পর থেকেই শ্বশুর লক্ষন মুর্মুর জমিতে ১০টি টিনের চালার মধ্যে বসবাস করেন। চার পাশে মাটির বেড়া ও মলমূত্র ত্যাগের কোন নির্ধাতিত জায়গা নেই। তাই প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয় রাতের বেলা। সম্বল বলতে তেমন কিছু নেই। বাতাস, বৃষ্টি, ঝড় উঠলেই বাড়ি থেকে আশ্রয় নিতে হয় অন্যের বারান্দায়।

মোবাইলের মাধ্যমে শ্রীমতি কাজলী মুর্মু’র সাথে যোগাযোগ করা হলে কলটি তার মেয়ে রীতা হাসদা ধরেন। রীতা হাসদা ইউনিয়নের কসবা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তিনি বলেন,‘ঘর পেয়ে খুশি হয়েছি। আগে লেখাপড়া করতে হতো একই ঘরে। এখন দু’টি পাকা ঘর হওয়ায় আলাদাভাবে লেখাপড়া করতে পারছি এবং থাকতেও পারছি। এখন থেকে ঝড় বৃষ্টি এলেও অন্য কোথাও যেতে হবে না। আগে তো রাতে ঝড় বৃষ্টি হলে খবই বিপদে পড়তে হতো। প্রস্রাব-পায়খানা করার তেমন একটা জায়গা ছিল না’। তবে বাড়ির নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দর্শনপাড়া ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামের উপকাভোগি নুরজাহান বেগম।

জেলার পবা উপজেলায় এরকম উপকারভোগি রয়েছেন ১৫টি পরিবার। এরা হলেন দর্শনপাড়া ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামের নুর জাহান বেগম, তিশলাই গ্রামের সুফিয়া বেওয়া, তালুক ধর্মপুর গ্রামের এলেমা বেওয়া, হুজুরীপাড়া ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রামের হাসান আলী, সাহাপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম, দেবেরপাড়া গ্রামের আমজাদ হোসেন, হুজুরীপাড়া গ্রামের রাহেমা বেওয়া, দামকুড়া ইউনিয়নের সাবেদ আলী, আরোকছত্র গ্রামের নাজমা বেওয়া, হরিপুর গ্রামের কসবা গ্রামের সাইদুর রহমান, টেংরামারি গ্রামের গোলাম রহমান, হলদিবোনা গ্রামের শ্রীমতি কাজলী মুর্মু, হরিয়ান ইউনিয়নের সুচরন গ্রামের নাসিমা বেগম, বড়গাছি ইউনিয়নের মথুরা গ্রামের মো. বাবু ও পারিলা ইউনিয়নের সারাংপুর গ্রামের আইনাল হক।

তাদের মতো অসহায় পরিবারগুলো এই কর্মসুচীর আওতায় মোহনপুর উপজেলায় ১২, বাগমারা উপজেলায় ১৪, পুঠিয়া উপজেলায় ১২, চারঘাট উপজেলায় ১৫, বাঘা উপজেলায় ১৬, গোদাগাড়ী উপজেলায় ২০, দুর্গাপুর উপজেলায় ১২ ও তানোর উপজেলায় ১৬ টিসহ মোট ১৩২ টি দালান বাড়ি পেয়েছেন।

জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা এসব বাড়ি পেয়েছেন তাদের চোখে মুখে খুশির ঝলক। উপকারভোগি অনেকে জানান, তাদের ভাগ্য অনেক ভালো। কপালে এতো ভালো রঙিন বাড়ি জুটেছে এবং সেই ঘরে বউ সন্তান নিয়ে শান্তিতে ঘুমানো- এ এক স্বপ্নের মতো।

এব্যাপারে গোদাগাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু বাশির বলেন, ‘অনেক মানুষ পেয়ে খুশি হয়েছেন। যা তাদের মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এতে আমারও ভাল লাগছে। রঙিন পাকা ঘর দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি গ্রামের মানুষগুলোর মনও রঙিন হয়েছে’।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন করছি। এক সময় দেখবেন যাদের জমি আছে ঘর নাই তারা সবাই ঘর পাবে। প্রতিবছরই বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে। এর আগে মুক্তিযোদ্ধাদের এবং জমি আছে ঘর নাই তাদের অনেকেই বাড়ি পেয়েছেন। আস্তে আস্তে সবায় এমন বাড়ি পাবেন। আমার বিশ্বাস জনগণকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ওয়াদা তিনি পূরণ করবেনই’।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *