নওগাঁয় আলুর দাম কম, লোকসানের মুখে কৃষক

কৃষি রাজশাহী লীড

নওগাঁ প্রতিনিধি: কৃষি প্রধান জেলা নওগাঁয় ধান চাষের পাশাপাশি কৃষকরা আলু চাষ করে থাকেন। লাভের আশায় চাষিরা এ বছর আলু চাষে ঝুঁকেছিলেন। চাষি ও ব্যবসায়ীরা বেশি দামের আশায় আলু হিমাগারে মজুদ করেছিলেন। কিন্তু বাজারে অন্য সবজির দাম বেশি হলেও আলুর দাম তুলনামূলক কম। বাজারে আলুর দাম না থাকায় বিপাকে আলু চাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকরা। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে আলু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন কৃষকরা। লোকসান ঠেকাতে আলু রফতানির দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ভালো দাম পাওয়ার আশায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করে থাকেন। কিন্তু এ বছর লাভের তুলনায় লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। হিমাগারসহ প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ পড়েছে সাড়ে ১৪ টাকা। বর্তমান বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০-১১ টাকায়। প্রতি কেজিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে সাড়ে ৩ টাকা থেকে ৪ টাকা। বাজারে প্রতি বস্তা ডায়মন্ড আলুর দাম ৫০০ টাকা আর হিমাগারের ভাড়া প্রতি বস্তা ২৬০ টাকা। আলুর দাম কম থাকায় হিমাগারগুলোতে পাইকারি ব্যবসায়ী না যাওয়ায় জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হিমাগারগুলোতে আলু পচে নষ্টও হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, হিমাগার থেকে ঋণ নিয়ে আলু সংরক্ষণ করেছিলেন ভালো দাম পাওয়ার আশায়। কিন্তু এখন লাভের ভাগ টিয়া পাখিতে খাওয়ার মতো অবস্থা। এখন লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা। আর এভাবে আলুর দাম কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।

মান্দা উপজেলার ছোটমুল্লুক গ্রামের আলু ব্যবসায়ী চাঁন মোহাম্মদ বলেন, ‘প্রতি বছর প্রায় ২৫-৩০ বিঘা আলুর আবাদ করে থাকেন। ২০১৭ সালে হিমাগারে প্রায় ২ হাজার বস্তা সংরক্ষণ করেছিলেন। ১০০ কেজি ওজনের আলুর বস্তায় ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা খরচ পড়েছিল। সে সময় আলুর দাম কম হওয়ায় প্রায় ১২ লাখ টাকার মতো লোকসান গুনতে হয়। ২০১৮ সালে আলুর দাম একটু পাওয়ায় কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম। কিন্তু ২০১৯ সালে আবারও লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। প্রতি কেজি আলু ১০ টাকা থেকে সাড়ে ১১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে এ বছর প্রায় ৪ লাখ টাকার মতো লোকসান গুনতে হবে। লোকসান ঠেকাতে এবং কৃষক বাঁচাতে আলু রফতানি করতে হবে।’

সাটইল গ্রামের মাসুদ রানা নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ঋণ করে আলুর আবাদ করেছিলাম। আমাদের এলাকায় ডায়মন্ড সাদা, কাটিনাল, অ্যারোস্টিকসহ কয়েক প্রকার আলুর চাষ হয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি আবাদ করা হয় ডায়মন্ড সাদা আলু। যার হিমাগারসহ প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ পড়েছে সাড়ে ১৪ টাকা। বর্তমান বাজারে এ আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০-১১ টাকা। প্রতি কেজিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে সাড়ে ৩ টাকা থেকে ৪ টাকা। এতে আমার প্রায় ১০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে।’

মান্দা উপজেলার তামান্না কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আব্দুর রাজ্জাক সরদার বলেন, ‘প্রতি বছর হিমাগারে আলু সংরক্ষণ শুরু হয় মার্চ মাসে এবং বের হয় নভেম্বর মাসে। বর্তমানে আলুর বাজার দর কম থাকায় এখনো হিমাগারে প্রায় ৬০ ভাগ আলু সংরক্ষণে রয়েছে। আলু উৎপাদন করে হিমাগার থেকে ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে বাজারে আলুর দাম একেবারেই কম। যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে প্রায় ৫ কোটি টাকা অনাদায় থেকে যাবে। এতে হিমাগার কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

নওগাঁ জেলায় ৪টি হিমাগারে আলুর ধারন ক্ষমতা প্রায় ৫ লাখ বস্তা। প্রতিটি হিমাগারের দৃশ্য একই রকম বলছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র: জাগো নিউজ।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *