বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজশাহী সদরের সাংসদ বাদশা এমপিকে সংবর্ধনা প্রদান

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির দশম কংগ্রেস শেষ হয় গেল ৫ নভেম্বর। কংগ্রেসে দ্বিতীয়বারের মতো পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ফজলে হোসেন বাদশা। কংগ্রেসের পর ছুটে বেড়াচ্ছিলেন দেশের বিভিন্ন জেলায়। সোমবার নিজের শহর রাজশাহী আসেন তিনি।

এরপর থেকেই নগরীর হড়গ্রামে তার বাসায় ফুল নিয়ে হাজির হতে থাকেন অনেকে। অবশ্য পার্টির পক্ষ থেকেও আয়োজন করা হয় আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনার। মঙ্গলবার বিকালে সেই অনুষ্ঠানে প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে বাদশাকে সংবর্ধনা জানানো হয়। সেখানে ফুলে ফুলে সিক্ত হন রাজশাহী-২ (সদর) আসনের টানা তিনবারের এই সংসদ সদস্য।

রাজশাহী মহানগরীর একটি সম্মেলন কক্ষে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আয়োজক রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টি হলেও অনুষ্ঠানের খবর পেয়ে ছুটে আসেন সুধি সমাজের প্রতিনিধি এবং নগরীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সদস্যরা। একে একে প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ফজলে হোসেন বাদশাকে ফুলের শুভেচ্ছায় সিক্ত করেন।

প্রথমেই মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে কমিটির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু, সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এন্তাজুল হক বাবু, সাদরুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, আবু সাঈদ, ফেরদৌস জামিল টুটুল, রমজান আলী, আবদুল মতিন, মনির উদ্দিন পান্না, মনিরুজ্জামান মনির, মিজানুর রহমান টুকু, নাজমুল করিম অপুসহ অন্য নেতারা ফজলে হোসেন বাদশাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

এরপর শুভেচ্ছা জানান বঙ্গবন্ধু পরিষদের রাজশাহী মহানগর কমিটির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। নগর কমিটির সহ-সভাপতি কবি রুহুল আমিন প্রামানিকের নেতৃত্বে অন্য সদস্যরা এই শুভেচ্ছা জানান। পরে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে সংগঠনের সভাপতি মো. লিয়াকত আলী ও সাধারণ সম্পাদক মো. জামাত খানসহ অন্যরা ফজলে হোসেন বাদশাকে শুভেচ্ছা জানান।

এছাড়া একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির নগর শাখা, রাজশাহী মহানগরের পশ্চিমাঞ্চল মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতি লিমিটেড, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির নগর শাখা, দিগন্ত প্রসারি সংঘ, জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট, শাহ মখদুম কলেজ, ইসলামীয়া কলেজ, বরেন্দ্র কলেজ, বঙ্গবন্ধু আদর্শ বিদ্যালয়, মেহেরচণ্ডি উচ্চ বিদ্যালয়, বালাজান নেসা উচ্চ বিদ্যালয়, হড়গ্রাম মডেল টেকনিক্যাল কলেজ, মতিহার কলেজ, কমেলা হক ডিগ্রি কলেজ, রানীবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, হাউজিং এস্টেট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কোর্ট অ্যাকাডেমি, তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা, ছোটবনগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মিশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বিবি হিন্দু অ্যাকাডেমি, মদিনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসা, দারুস সালাম মাদ্রাসা, জামিল আক্তার রতন ফাউন্ডেশনসহ শতাধিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফজলে হোসেন বাদশাকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। নগর যুবমৈত্রী, ছাত্রমৈত্রী এবং ওয়ার্কার্স পার্টির বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ড কমিটির পক্ষ থেকেও নেতাকর্মীরা ফুল নিয়ে আসেন শুভেচ্ছা জানাতে।

বিপুল এই সংবর্ধনা পেয়ে রাকসুর সাবেক ভিপি ফজলে হোসেন বাদশা বললেন, আমি দেশের রাজনীতিতে কতটুকু অবদান রেখেছি, তা জানি না। কিন্তু আপনাদের এই সংবর্ধনা আমার আজীবন মনে থাকবে। সবার এমন ভালোবাসায় সবাইকে সাথে নিয়েই যেন আমি কাজ করতে পারি সে জন্য সহযোগিতা কামনা করি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে সমুন্নত রেখে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়াটাই হবে আমাদের কাছে বড় বিষয়। কোনো দুর্বৃত্তের কাছে আমরা কখনও মাথানত করব না।

তিনি বলেন, সিঁধেল চোরকে যেমন আমি ঘৃণা করি তেমনি ঘৃণা করি তাদের যারা জনগণের টাকা চুরি করে সম্পদের পাহাড় গড়ে। যারা দেশের টাকা চুরি করে দেশে-বিদেশে বাড়ি-গাড়ি, সম্পদ করে তারা রাজাকার। তাদের আমরা কখনও ছাড় দিতে পারব না। আমার টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি বাংলাদেশকে বুঝি। সবাই সহযোগিতা করলে আমি আমার দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করতে পারব। সবাই এভাবেই আমার পাশে থাকবেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ফজলে হোসেন বাদশা টানা দুইবার পার্টির সাধারণ সম্পাদক হলেন। এটা রাজশাহীবাসীর জন্য গর্বের। ১৪ দল নিয়ে অনেক কথা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশকে যে স্থানে নিয়ে গেছেন সেখানে ১৪ দলকে টিকিয়ে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ফজলে হোসেন বাদশাকেও অবদান রাখতে হবে। আমি তার সফলতা কামনা করি।

রাজশাহীর ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি মো. শামসুদ্দিনও বক্তব্য দেন। বলেন, সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা একজন সৎ এবং নির্ভিক মানুষ। হাসিমুখে সব সময় সাধারণ মানুষকে হাতটা বাড়িয়ে দেন। এটাই তো নেতার বৈশিষ্ট্য। রাজশাহীর এমন কোনো এলাকা নেই যে সেখানে তার উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এমন মানুষকে সমর্থন করবো না তো কাকে করবো? তিনি ফজলে হোসেন বাদশার উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করেন।

মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি রুহুল আমিন প্রামানিক, শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ রাজকুমার সরকার, রাজশাহীর পশ্চিমাঞ্চল মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আবদুল আজিজ, দিগন্ত প্রসারি সংঘের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক, বরেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ আলমগীর মালেক প্রমুখ।

তারা বলেন, ফজলে হোসেন বাদশা সেই ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। জঙ্গিবাদ এবং বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবের বিরুদ্ধে রেখেছেন বলিষ্ঠ ভূমিকা। তাই তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তারা আরও বলেন, জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি নির্বাচনি এলাকার উন্নয়নেও ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন বাদশা। তার প্রচেষ্টায় রাজশাহীর বিমানবন্দর চালু হয়েছে। উন্নয়ন হয়েছে প্রতিটি শিক্ষা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের।

প্রসঙ্গত, ফজলে হোসেন বাদশা ১৯৮০ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত রাকসুর ভিপি ছিলেন। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। সহযোগী সংগঠন যুবমৈত্রীরও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। মূলদলে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং পলিটব্যুরো সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের নবম কংগ্রেসে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক হন। দশম কংগ্রেসেও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *