পশ্চিমাঞ্চলে গেটম্যান নেই ৭১৪টি রেলক্রসিংয়ে : আছে শুধু সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে গেটম্যান ছাড়াই চলছে ৭১৪টি রেলক্রসিং। এসব রেলক্রসিংয়ের অনুমোদন থাকলেও নেই গেটম্যান। এসব রেলক্রসিংয়ের সামনে শুধু সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টানিয়েই দায় সেরেছে রেল কর্তৃপক্ষ।

এর বাইরে ৩৩৯টি রেলক্রসিংয়ের কোনো বৈধতা নেই। তাই নেই সতর্কবার্তাও। এতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিভিন্ন যানবাহন রেললাইন পার হচ্ছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর জানায়, পশ্চিম রেলের আওতায় লেভেল ক্রসিং রয়েছে সব মিলিয়ে ২ হাজার ৩৬৫টি। এর মধ্যে ট্রাফিক বিভাগের আওতায় পরিচালিত লেভেল ক্রসিং ২৯৮টি। এ গুলোর সবই অনুমোদিত এবং গেটম্যান রয়েছে।

অন্যদিকে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ দেখভাল করছে এ অঞ্চলের ২ হাজার ৬৭টি রেলক্রসিং। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৪টি অনুমোদিত। এ গুলোর মধ্যে গেটম্যান আছে মাত্র ৩১৯টিতে। আর গেটম্যান ছাড়াই চলছে ৭১৪টি রেলক্রসিং। এ গুলোতে কেবল সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে খোলা হয়েছে আরও ৩৩৯টি রেলক্রসিং।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুমোদিত এবং গেটম্যান রয়েছে এমন লেভেল ক্রসিংগুলোর সবই সুরক্ষিত। গেটম্যান নেই এমন লেভেল ক্রসিংয়ে পর্যায়ক্রমে দেওয়া হচ্ছে গেটম্যান। অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোর মধ্যে গুরুত্ব বিবেচনায় অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া চলমান।

সূত্র জানায়, ট্রাফিক বিভাগের ২৯৮ রেলক্রসিংয়ে গেটম্যানের পদ রয়েছে ১৭৩টি। কিন্তু বর্তমানে কর্মরত ১২৩ জন। আরও ২৮৭ জন অস্থায়ী কর্মী (টিএলআর) দায়িত্ব পালন করছেন এসব লেভেল ক্রসিংয়ে। আর প্রকৌশল বিভাগের ৩১৯ রেলক্রসিংয়ে গেটম্যানের মঞ্জুরিকৃত পদ ১৮৯টি। যেখানে কর্মরত রয়েছেন ৯৭ জন। বাকি ৯২ পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। এখানেও ২৯২ জন টিএলআর দায়িত্ব পালন করছেন। পদ শূন্য থাকায় দায়িত্ব পালনে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (পিঅ্যান্ডডি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অন্তত অনুমোদিত লেভেল ক্রসিংগুলো সুরক্ষায় কাজ করছে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে অবৈধ এবং গেটম্যান নেই এমন লেভেল ক্রসিংও আসছে সুরক্ষার আওতায়। এরই অংশ হিসেবে লেভেল ক্রসিং গেট পুনর্বাসন ও মানোন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে ২০১৫ সাল থেকে। এ প্রকল্পের আওতায় এসেছে ৩২৬টি রেলক্রসিং। এ প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৫৩টি অবৈধ রেলক্রসিংয়ের। এছাড়া ২০৪টি রেলক্রসিংয়ে দেওয়া হয়েছে গেটম্যান। প্রকল্পের আওতায় থাকা প্রত্যেক রেলক্রসিংয়ের মান উন্নয়ন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, অনুমোদিত রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটে না বললেই চলে। দুর্ঘটনাগুলো ঘটে সাধারণত অবৈধ গেটগুলোতে। অসচেতনতা থেকেই এসব দুর্ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে রেলকর্তৃপক্ষের কোনো দায়দায়িত্ব নেই।

তবে এসব দুর্ঘটনায় রেলকর্তৃপক্ষ কিছুতেই নিজেদের দায় এড়াতে পারে না বলে মনে করেন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান। তিনি বলেন, রেলে লুটপাটের জন্য বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু জানমাল রক্ষায় লেভেল ক্রসিং সুরক্ষায় প্রকল্প হয় না। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। দুর্ঘটনাগুলো অবশ্যই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দায় নিতে হবে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই কিছু কিছু রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান নেই। অস্থায়ী লোকবল নিয়োগ দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া স্থানীয় লোকজন ইচ্ছামতো রেলক্রসিং খুলে চলাচল করছেন। অসচেতনতা থেকে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে সবার সচেতন হওয়া জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *