স্টাফ রিপোর্টার: প্রতি বছর শীতে হাজারও পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার মধুবন গ্রাম সংলগ্ন আত্রাই নদ। এ নদীতে বছরে প্রায় ৭-৮ মাস পাখিগুলো থাকে। পাখিদের প্রতি ভালোবাসা থেকে ২০১৩ সালে স্থানীয় কিছু যুবক গড়ে তুলেন পাখির অভয়াশ্রম।
সম্প্রতি সেখানে ড্রেজার মেশিন বসিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা বালু ব্যবসায়ী আলহাজ মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি এলাকায় বালু মোয়াজ্জেম নামেও পরিচিত।
এদিকে ড্রেজারের বিকট শব্দে অভয়াশ্রমে বসতে পারছে না পাখিরা। ড্রেজার থাকার কারণে মানুষের অবাধ বিচরণে হুমকির মুখে পড়েছে পাখির অভয়াশ্রমটি। পালাচ্ছে পাখিরা।
অন্যদিকে, মোয়াজ্জেম এতই প্রভাবশালী যে তার বালুর ড্রেজারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে গত বছর হয়রানির শিকার হতে হয় স্থানীয় কয়েকজনকে। এ কারণে তখন থেকে তার ভয়ে এলাকার কেউ আর মুখ খুলছে না।
জানা যায়, নওগাঁর মহাদেবপুর মধুবন গ্রাম সংলগ্ন আত্রাই নদীতে ২০১২ সাল থেকে শীতকালে অল্পসংখ্যক পরিযায়ী পাখি আসতে শুরু করে। মানুষের মাঝে সচেতনতা না থাকায় কিছু মানুষ প্রথম বছর বিভিন্নভাবে পাখি শিকারের চেষ্টা করে। কিন্তু ২০১৩ সালে আবারও পাখিরা আসতে শুরু করলে সেই থেকে স্থানীয় কিছু প্রাণ ও প্রকৃতি প্রেমী যুবক প্রতি বছর শীতকালে পরিযায়ী পাখিদের জন্য বাঁশ, কচুরিপানা, গাছের ডালপালা দিয়ে অভয়াশ্রম গড়ে তুলেন স্বেচ্ছাশ্রমে। প্রতি শীতে পাতি সরালিসহ কয়েক প্রজাতির পাখি এখানে আশ্রয় নেয়।
বালিহাঁস, সরালি হাঁস, পানকৌড়ি, রাতচোরা, বক, মাছরাঙ্গাসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির নিরাপদ এ আশ্রয়স্থল আত্রাই নদী থেকে বালু তোলার জন্য ২০১৬ সালে ইজারা নেয় আওয়ামী লীগ নেতা মোয়াজ্জেম। এরপর থেকে তিনি গায়ের জোরে পাখির অভয়াশ্রমে বালির ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করতে থাকেন।
এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে গত বছর ওই আওয়ামী লীগ নেতার ক্ষমতার কাছে হেরে যেতে হয় স্থানীয় কয়েকজন যুবককে।
তাদের একজন কাজী নাজমুল জানান, গেল বছরও একই কাজ করেছিলেন তিনি (মোয়াজ্জেম)। সেখান থেকে ড্রেজার মেশিন সরিয়ে দিতে অনেক সমস্যাই পড়তে হয়েছিল আমার টিমকে। ওইবার প্রশাসনের ঊচ্চপদস্থ এবং আমার কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীর সহায়তায় রক্ষা হয়েছিল সবার।
তিনি বলেন, উনি অর্থ, শক্তি দিয়ে বেশ প্রভাবশালী মানুষ। আমাদের মতো একজন ক্ষুদ্র মানুষ এত বড় ক্ষমতাবান দানবীয় শক্তির সঙ্গে পেরে উঠি কী করে? দ্রুত বালুর ড্রেজার মেশিন সরিয়ে না নিলে হয়তো আর রক্ষা করা যাবে না আত্রাই নদীতে পরিযায়ী পাখির অভয়ারণ্য। কারণ পাখিরা তো আর মানুষের নিয়মে চলে না, চলে প্রকৃতির নিয়মে।
তিনি জানান, উপজেলায় ‘প্রাণ ও প্রকৃতি’ নামে যে সংগঠন আছে সেখানে প্রায় শতাধিক সদস্য আছে। সবাই এ ড্রেজারের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি ২০১৬ সাল থেকে।
এ বিষয়ে বালু ব্যবসায়ী মোয়াজ্জেম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, পাখির অভয়াশ্রম থেকে আমরা বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছি ২ মাস আগে। বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলে এখানে ড্রেজার মেশিন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২ মাস ধরে মেশিনটি এখানে রাখা হয়েছে যান্ত্রিক সমস্যার কারণে।
এ বিষয়ে নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) উত্তম কুমার রায় জাগো নিউজকে জানান, কেউ এ ব্যাপারে অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমি বিষয়টি জানি না। এই প্রথম জানলাম। ঘটনাটি জেনে ব্যবস্থা নেব। সূত্র: জাগো নিউজ।
স্ব.বা/শা