রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেলভবনের নিরাপত্তার নামে বেপরোয়া নিরাপত্তা কর্মী

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সদর দফতরের (রেলভবন) প্রধান ফটক নিরাপত্তার নামে বেপরোয়া কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই নিরাপত্তা কর্মীরা হঠাৎ সোমবার থেকে চরম বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা রেলভবনে আসা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সাংবাদিকদের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করছে।

রেলভবনের সামনে কেউ দাঁড়ালেই তার ওপর লাঠি হাতে নিয়ে আক্রমণ করছে। রিকশা-অটোরিকশাওয়ালা সেখানে দাড়াতেই পারছে না। রেলের কোনো ঘোষণা কিংবা বিজ্ঞপ্তি ছাড়ায় হঠাৎ নিরাপত্তা কর্মীদের এমন আচরণে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষ।

সোমবার তাদের অস্বাভাবিক আচরণের শিকার হয়েছেন অনেকে। সম্প্রতি রেলওয়ের টেন্ডার নিয়ে মারামারি ও যুবলীগের একজন কর্মী খুন হওয়ার পর পশ্চিম রেলের জিএম এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছেন খোদ রেলের কর্মকর্তারাও। তবে পশ্চিম রেলের জিএম মিহির কান্তি গুহ বলেন, রেলের সদর দফতরে নিরাপত্তার জন্য গেটে নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। নিজের দফতরেও নিরাপত্তার জন্যও একই বাহিনী নিযুক্ত করেছেন জিএম।

সোমবার বেলা ১১টার দিকে সদর দফতরের প্রধান ফটকে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে লাঠি হাতে দায়িত্ব পালন করছেন দুইজন নিরাপত্তা কর্মী। এদের একজনের নাম বিনয় অন্যজন আকবর। এরা দুজনই বেপরোয়া। রেলভবনে কেউ প্রবেশ করতে চাইলেই সন্ত্রাসী স্টাইলে তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে নানা কৈফিয়ত তলব করছেন। কারো কারো গায়ে হাতও তুলছেন। গেটের সামনের বাইরের সড়কেও রিকশা-অটোরিকশা পর্যন্ত দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না। যাত্রী নামানোর জন্য এক মিনিট কোনো যানবাহন দাড় করালেই তার ওপর লাঠি হাতে আক্রমণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বেলা ১১ টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে এসব দৃশ্য দেখা গেছে। দায়িত্বরত দুই নিরাপত্তা কর্মী জানান, রেলের ‘জিএম স্যারের’ নির্দেশে সকাল থেকে তারা দায়িত্ব পালন করছেন। সেখানে পরিচয় প্রদর্শন ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে বারণ করা হয়েছে। তবে কেউ পরিচয় দেওয়ার আগেই তার উপর ক্ষিপ্ত হচ্ছেন সন্ত্রাসী ভূমিকায় দায়িত্ব পালনরত নিরাপত্তাকর্মীরা।

বেলা ১১টার দিকে সাংবাদিক পরিচয়ে রেল ভবনের জনসংযোগ দফতরে যেতে চাইলেও প্রথমে এসে বাধা দেয় সেখানে নিয়োজিত নিরাপত্তাকর্মী বিনয়। তারপর তারসঙ্গে যোগ দেয় অপরজন আকবর। নিজে সাংবাদিক বলে পরিচয় দিলেও তারা কোনভাবেই ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না বলে এ সাংবাদিককে জানিয়ে দেয়। পরে পরিচয়পত্র দেখিয়ে প্রবেশের অনুমতি পাওয়া যায়। এসময় তারা চারম বেপরোয়া আচরণ শুরু করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পশ্চিম রেলের সদর দফতর এমনিতে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। পশ্চিম রেলের এমন কোনো দফতর নেই যেখানে দুর্নীতির অভিযোগ নেই। টেন্ডার থেকে নিয়োগ বাণিজ্য এখানে ওপেন সিক্রেট। রেলের রন্ধে রন্ধে গ্রাস করেছে দুর্নীতি। জিএম থেকে পিওন সবায় দুর্নীতির সঙ্গে লিপ্ত। সবার ভাব লুটেপুটে খাওয়া।

ইতিমধ্যে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের রেললাইনে পাথর সরবরাহ ও স্টেশন পরিস্কারের নামে অর্থ লুটপাটের তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর বাইরে আরও কয়েকটি বিষয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুদক। এসব দুনীতির সঙ্গে অনেক শীর্ষ কর্মকর্তায় জড়িত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কিছুদিন আগেও রাজশাহী রেলভবনের প্রধান ফটক পুরো বন্ধ করে রাখা হতো। সাধারণ সেবা নিতে আসা মানুষ পেছনের গেট দিয়ে প্রবেশ করতো। সম্প্রতি জনরোষে প্রধান ফটক খুলে দিলেও সেখানে নিরাপত্তার নামে সন্ত্রাসীদের নিযুক্ত করায় ক্ষুব্ধ এখন সাধারণ মানুষ।

এসব বিষয়ে পশ্চিম রেলের জিএম মিহির কান্তি গুহ সাংবাদিকদের বলেন, নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। প্রবেশকারীদের পরিচয়পত্র দেখতেও নিরাপত্তাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাই তারা তাদের মতো করে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে কেউ মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করলে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিগগিরই গেটে এ সংক্রান্ত নির্দেশনাও ঝুলানো হবে।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে একজন খুন হয়েছে। এরপর থেকে মাস্তানরা নানা পরিচয়ে রেলভবনে প্রবেশ করছে, নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতেই প্রধান ফটকে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাই বলে তারা সন্ত্রাসী আচরণ করবে এমন প্রশ্নের জবাবে জিএম কোনো মন্তব্য করেন নি।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *