রাজশাহীর বাগমারায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ইট ভাটা : অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ!

রাজশাহী লীড

বাগমারা প্রতিনিধি: দীর্ঘদিন ধরে চারপাশের পরিবেশ দূষণের মধ্যে ফেলে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে একের পর এক ইটভাটা। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে হাজার হাজার কৃষি জমি নষ্ট করে চলছে তাদের এ কার্যক্রম। এবং ইট উৎপাদনে ইতিমধ্যে সকল প্রকার কার্যক্রম শেষ করেছেন ইট ব্যবসায়ীরা। ভাটাগুলোতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।

শ্রমিকেরা জানান, এসব ভাটায় কয়লা ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাই সারা বছর কাঠই পোড়াতে হয়। ভাটা গুলোর পাশে রয়েছে ফলের বাগান, আলু ও ধানখেত। আর ১০০ থেকে ১৫০ গজের মধ্যে রয়েছে জনবসতি। কাঠ পোড়ানোর ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে লোকালয়ে। তবে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী,আবাসিক এলাকা ও কৃষিজমির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। অথচ এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। উল্টো এসব ইটভাটা থেকে আদায় করা হচ্ছে কোটি টাকা মাসোহারা। ফলে বিরুপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশের উপর।

এদিকে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি ইটভাটার। বাকিগুলো চলছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে। তবে এসব ইটভাটা মালিকরা সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছেন নিয়ম মতোই। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, আইন না মেনে গড়ে ওঠা ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ অনুযায়ী আবাসিক এলাকা ও কৃষি জমিতে ইটভাটা করা যাবে না।

কিন্তু এ আইনের কোনো তোয়াক্কা না করেই বাগমারা অঞ্চলে গড়ে উঠেছে বহু ইটভাটা। অধিকাংশ ইটভাটায় আবার জনবসতির খুব কাছাকাছি। ফলে এসব ইটভাটার কারণে মানুষের স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন হচ্ছে, তেমনি পরিবেশের ওপরও পড়ছে বিরুপ প্রভাব। তাছাড়া একের পর এক ইটভাটা নির্মাণের কারণে কৃষি জমির পরিমাণও কমছে দিন দিন। ভাটা মালিকদের বক্তব্য, তারা বৈধভাবেই ব্যবসা করতে চান।

কিন্তু আইনী জটিলতার কারণে ছাড়পত্র ও লাইসেন্স পাচ্ছেন না। তাই চাঁদা দিয়ে চালাতে হচ্ছে এসব ইটভাটা। বৈধতা না থাকলেও প্রতি ১০ লাখ ইটের বিপরীতে প্রায় চার লাখ টাকা রাজস্বও দিতে হচ্ছে সরকারকে। ভাটা মালিকেরা বলছে, আইন অনুযায়ী কৃষি জমি,আবাসিক ও বন বা বাগান এলাকায় ৩-৪ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা করা যাবে না। একই সাথে ইট পরিবহনের জন্য সরকারী পাকা সড়কও ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু এই আইন মানা আমাদের জন্য কঠিন। তাই আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পেলেও ভাটা স্থাপন করেছি।

তারা জানান, ভাটাগুলোর বৈধকাগজ না থাকার কারণে পুলিশের উৎপাতও বেশি। প্রশাসন ঝামেলা করছে। তাদের অনেককে টাকা দিয়ে মেনেজ করতে হচ্ছে। বাগমারা উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম হেলাল বলেন, পরিবেশ বান্ধব ইট তৈরির জন্য সরকার ইট প্রস্তুতকারীদের সহায়তায় এগিয়ে না এলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। কিছু আইননী সংশোধনের পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে ইট তৈরির ব্যবস্থা করার জন্য সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।

সরকারের কিছু অসাধূ কর্মকর্তাদের কারনেই ইটভাটার মালিকেরা অবৈধ ভাটা স্থাপনের সাহস পাচ্ছে। তারা ইটভাটা মালিকদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করার জন্য ইট প্রস্তুতকারীরা সেখান থেকে সরে আসে এবং অবৈধ ইটভাটা স্থাপন করে ব্যবসা চালিয়ে যায় বলে তিনি অভিযোগ করেন। এলাকার কিছু কিছু ব্যবসায়ী ড্রামচিংনি ব্যবহারের মাধ্যমে অনুমোদন না নিয়েই ইটভাটা তৈরি করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ জানান, অবৈধ ইটভাটা ও কাঠ পোড়ানো বিষয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। জেলা প্রশাসক থেকেই এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে। অবৈধ ইটভাটা গুলো অল্প সময়ের মধ্যে বন্ধ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।সূত্র: পদ্মা টাইমস।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *